রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গভবনে না থেকে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। এখান থেকেই দেশ পরিচালনায় সব ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন বঙ্গবন্ধু।
একতলায় জাদুঘরটির প্রথম কক্ষে ছবির মাধ্যমে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। বাড়িতে ঢুকলেই চোখে পড়বে একটি অভ্যর্থনা কক্ষ। এর পাশের কক্ষটি ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের পড়ার ঘর। এখান থেকেই ৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
নিচতলায় রয়েছে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের রান্নাঘর। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলে প্রথমেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কক্ষ। এর পাশে রয়েছে একটি বসার ঘর। এখানেই পরিবার নিয়ে বসে একসঙ্গে টেলিভিশন দেখতেন বঙ্গবন্ধু।
পাশের ডাইনিং টেবিলে বেগম মুজিবের হাতে তৈরি করা আচার আজও সংরক্ষিত আছে।
বসার ঘরের পাশেই বঙ্গবন্ধুর শোবার ঘর। এ ঘরের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য গুলির চিহ্ন। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট ভোরে এ ঘরেই বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর মেজো ছেলে শেখ জামাল, ছোট ছেলে শেখ রাসেল এবং শেখ কামাল ও শেখ জামালের দুই নববধু সুলতানা কামাল ও রোজী জামালের মরদেহ পড়ে ছিল।
একটু সামনে এগুলেই বাড়ির মূল সিঁড়ি; জাতির পিতাকে হত্যাকাণ্ডের স্থান। গুলির চিহ্নগুলো আজও ধারণ করে আছে সিঁড়ির প্রতিটি স্তর।
সিঁড়ির পাশেই বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার কক্ষ। এ কক্ষে সংরক্ষিত আছে বঙ্গবন্ধুর কোরআন শরীফ, টুপি, তসবিহ, চশমা, মুজিব কোট, ব্রাশ ও বহুল ব্যবহৃত পাইপ। কারাগারে থাকা অবস্থায় এই কোরআন শরীফটি পড়তেন বঙ্গবন্ধু।
জেল থেকে বেগম মুজিবকে যে চিঠিগুলো বঙ্গবন্ধু লিখতেন সেগুলো কেটে কেটে স্ত্রী বেগম মুজিবের কাছে পাঠাত কারা কর্তৃপক্ষ। সেগুলোও এখানে সংরক্ষিত আছে। এ কক্ষেই ১৫ আগস্ট রাতে ঘাতকদের বুলেটে বিদীর্ণ বঙ্গবন্ধুর পাজামা, শেখ রাসেলের শার্ট সংরক্ষিত।
এ কক্ষের পাশেই শেখ জামালের কক্ষ। শেখ জামালের কক্ষেও বুলেটের চিহ্ন স্পষ্ট। দোতলায় রয়েছে বড় একটি ব্যালকনি। এখানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়তেন।
তৃতীয় তলার আরেকটি কক্ষে থাকতেন শেখ কামাল। এর সাথেই বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত আলোচনার ঘর। এ ঘরে বসে দেশি-বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে দেখা করতেন বঙ্গবন্ধু।
৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারের হত্যার পর থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত এ বাড়িটি সিলগালা করে রাখা হয়। পরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে ঐতিহাসিক এ বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের উদ্যোগ নেন। জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয় ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট।
বিস্তারিত দেখুন ভিডিও রিপোর্টে: