বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাকাণ্ডের সময় ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ অন্যান্য আসামীদের সঙ্গে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাপ্টেন মাজেদকে পুরস্কার হিসেবে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান সেনেগাল দূতাবাসে বদলীর আদেশ দেন। ১৯৮০ সালে তাকে বিআইডব্লিউটিসিতে চাকুরি প্রদান করা হয় এবং পরে তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামীর মধ্যে অন্যতম ছিলেন এই আবদুল মাজেদ। তার পিতার নাম মৃত আলী মিয়া চৌধুরী, মাতার নাম মৃত মেহেরজান বেগম। তার পৈত্রিক নিবাস ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানার বাটামার গ্রামে।
গােয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, আবদুল মাজেদের পরিবার বর্তমানে ঢাকা সেনানিবাসের ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকায় বসবাস করছেন। আবদুল মাজেদ ৪ কন্যা সন্তান ও এক পুত্র সন্তানের জনক। ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ সালে ধানমন্ডির ৩২ নং রোডে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সময় ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ অন্যান্য আসামীদের সঙ্গে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। হত্যাকাণ্ড শেষে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার অপর আসামী মেজর শাহরিয়ার এবং হত্যাকাণ্ডে অংগ্রহণকারী অন্যান্য সেনাসদস্যদের সাথে রেডিও স্টেশনে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ক্যু করা অফিসারদের সঙ্গে বঙ্গভবনে দেশত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী অফিসারদের সঙ্গে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের আদেশে বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকক হয়ে লিবিয়ায় যান। সেখানে তিনি ক্যু করা অফিসারদের সঙ্গে প্রায় ৩ মাস থাকেন। সে সময়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ক্যু করা অফিসারদের হত্যাকাণ্ডের পুরস্কার স্বরূপ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে বৈদেশিক বদলী প্রদান করা হয়, তারই অংশ হিসেবে ক্যাপ্টেন মাজেদকে পুরস্কার হিসেবে সেনেগাল দূতাবাসে বদলীর আদেশ দেন।
পরে ২৬ মার্চ ১৯৮০ সালে তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকার ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে বিআইডব্লিউটিসিতে চাকুরি দেন এবং উপসচিব পদে যােগদানের সুবিধার্থে সেনাবাহিনীর চাকুরী থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
পরে আবদুল মাজেদকে সচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। এরপর তিনি মিনিস্ট্রি অব ইয়ুথ ডেভলপমেন্ট এ ডাইরেক্টর, ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট পদের জন্য আবেদন করেন এবং ওই পদে যােগদান করেন। সেখান থেকে তিনি ডাইরেক্টর এন্ড হেড অব ন্যাশনাল সেভিংস ডিপার্টমেন্ট এ বদলি হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার কর্তৃক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য শুরু হলে তিনি আটক হওয়ার ভয়ে আত্মগােপন করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আব্দুল মাজেদকে ১২:১৫ মিনিটে ঢাকার সিএমএম আদালতে আনা হয়েছে। এজলাসে তোলার আগ পর্যন্ত তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
এরআগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আব্দুল মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
সোমবার রাত সাড়ে তিনটায় রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান , সন্ত্রাস দমন বিষয়ক পুলিশের বিশেষ ইউনিট কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) একটি দল, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মিরপুর এলাকার পল্লবী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি হলেন ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ। তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে পালিয়ে ছিলেন। পলাতক অন্য পাঁচ খুনি হলেন আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন। এদের মধ্যে কানাডায় নূর চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রাশেদ চৌধুরী। মোসলেম উদ্দিন জার্মানিতে ও শরিফুল হক ডালিম স্পেনে আছে। তবে খন্দকার আবদুর রশিদ কোন দেশে অবস্থান করছেন তার সঠিক তথ্য পুলিশের কাছে নেই।
২০০৯ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে এসব আসামিদের বিরুদ্ধে রেড এলার্ট জারি করে বাংলাদেশের পুলিশ।
এছাড়া আইনি প্রক্রিয়াশেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার শিকার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান।