যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন: বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বাঙালির ইতিহাসের স্মারক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১২ সালের জুন মাসে অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। তারই ধারাবাকিতায় এবার বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, গ্রিস শাখার উদ্যোগে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটি গ্রিক ভাষায় রূপান্তর করে প্রকাশ করা হল; যা সত্যিই আনন্দের। এমন মহৎ কর্মের সাথে যারা সম্পৃক্ত, আমি সকলকে জানাচ্ছি প্রাণঢালা অভিনন্দন।
সোমবার গ্রীস যুবলীগের আহবায়ক মো.কামরুল হাসান এর সভাপতিত্বে ৩১ অক্টোবর ২০২১ গ্রীসের রাজধানী এথেন্স এর ত্রিয়ানন থিয়েটারে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর গ্রীক ভার্সন বই এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে উক্ত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
এসময় পরশ বলেন: বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের স্মারক এই গ্রন্থটি প্রকাশ পাবার পর এ-পর্যন্ত ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চিনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কী, নেপালি, স্পেনীয়, অসমীয়া, ইতালীয়, মালয়, কোরীয়, রুশ ও সর্বশেষ মারাঠি ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাঠকদের কথা বিবেচনা করে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির ব্রেইল সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং প্রথম ধাবে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ১০০ সেট ব্রেইল সংস্করণ মুদ্রণ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন: আপনারা যারা এই গ্রন্থটি পাঠ করেছেন, আপনারা নিশ্চয় জেনেছেন-এই গ্রন্থটির নামকরণ কে করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা, আমাদের সবার প্রিয় শেখ রেহানা অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের নামকরণ করেন। শুধু অসমাপ্ত আত্মজীনী নয়, কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থের নামকরণও তাঁর। তিনি আরও বলেন-বঙ্গবন্ধুর লেখা পাণ্ডুলিপি উদ্ধার এবং যত্নের সঙ্গে গভীর মমতায় রক্ষা করে সম্পাদনা ও প্রকাশনার মূল ভূমিকায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন-‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটি আমাদের এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক সাহিত্য বা আত্মজৈবনিক সাহিত্যের ইতিহাসের ধারায় এক অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ ইতিহাসের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রটির উৎসমূলকে বুঝতে গেলে এ-বইটি পাঠ অপরিহহার্য। বিশেষ করে যারা তরুণ, যুবক; যারা আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে, তাদের জন্য এ গ্রন্থটি পাঠ করা জরুরী, কেননা এই গ্রন্থটি আগামী বাংলাদেশের কারিগরদের চলার পথের পাথেয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মপূর্ব পারিবারিক ইতিহাস দিয়ে শুরু করে তার বাল্যকাল, স্কুলজীবন, গোপালগঞ্জে বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয়ের ইতিহাস এবং তাঁর ধাপে ধাপে বেড়ে ওঠার নানা পর্যায় এত সুন্দর, আকষর্ণীয় ও অনবদ্য ভঙ্গিতে বর্ণনা করেছেন, যা পড়ে বোঝা যায় তিনি ছিলেন একজন রাজনৈতিক চিন্তাবিদ কিংবা অসাধারণ দক্ষ রাজনৈতিক সংগঠক। শুধু তা-ই নয়, একজন সুনিপুণ লেখক হিসেবেও এ বইয়ের মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। তার প্রাণবন্ত জীবনবোধের দীপ্তিতে উজ্জ্বল এ-বইটি সে জন্যই আমাদের বিশিষ্ট লেখক-গবেষক এবং সাহিত্যবোদ্ধাদের প্রশংসাধন্য হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের ইতিহাস-বিকৃতি রোধে বা বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানতে বা জানাতে অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থ দু’টি আজ সর্বমহলের সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন-যুবলীগ একদিকে যেমন বাংলাদেশ-বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে-প্রতিরোধে সোচ্চার ভূমিকা রাখছে, তেমনি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা’র এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে সহায়ক শক্তি রূপে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আবার মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাতেও যুবলীগ এক দৃষ্টান্তের নাম। সাথে সাথে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যুবলীগ পরিচয় দিচ্ছে পারঙ্গমতার। তারই প্রমাণ গ্রিস যুবলীগের এই মহৎ কর্মকাণ্ড। তিনি আরও বলেন-রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আমাদের প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়েছেন অসমাপ্ত আত্মজীবনী। আমাদের দায়িত্ব গ্রন্থটি বিশ্বপরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দেয়া। বিশ্ব পরিপূর্ণভাবে, নির্ভুলভাবে জানুক আমাদের বঙ্গবন্ধুকে, আমাদের বাংলাদেশকে। গ্রিস যুবলীগের এমন দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক যুবলীগের বিহির্বিশ্বের অন্যান্য ইউনিটগুলোতে, এটাই আমার প্রত্যাশা।
বিএনপি-জামায়াত সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক-সন্ত্রাস ও গুজব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐকব্যদ্ধ থাকতে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন- অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের ১৯১ পৃষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন: “আমি মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। রাজনীতিতে আমার কাছে মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিস্টান বলে কিছু নাই। সকলেই মানুষ” বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হবে। এদেশ মুসলমানের যেমন, তেমন হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ; এদেশ সবার। সেই সম্প্রীতির মাঝে ফাটল ধরাতে চায়ছে এদেশের পাকিস্তানি প্রেতাত্মা বিএনপি-জামায়াত। এদের ব্যাপারে সোচ্চার হবার সময় এসেছে। বাংলাদেশের মত বিশ্বপরিমণ্ডলেও প্রতিষ্ঠিত হোক- বিএনপি-জামাত উগ্র সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী সংগঠন। সেক্ষেত্রে গ্রিস যুবলীগ সহ বিহির্বিশ্বের সকল ইউনিটকে বলিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এছাড়া বিদেশে বসে যারা দেশের বিরুদ্ধে, আমাদের প্রিয় নেত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুজব-সন্ত্রাস চালাচ্ছে; তাদের সমুচিত জবাব দেবারও সময় এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেশ থেকে পলাতক সন্ত্রাসী এবং তাদের পেইড এজেন্টরা যে দেশবিরোধী গুজব-অপপ্রচার চালাচ্ছে; তাদেরকে সকল মাধ্যমেই সমুচিত জবাব দিতে হবে। এখন এর বিকল্প নাই। সবার উপরে দেশ। সেই দেশের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করবে, যুবলীগ তাদেরকে ছাড় দিতে পারে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন- বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখার পিছনে যে মানুষটির সবচেয়ে বড় অবদান তিনি হলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধু তার মনের কথাগুলো লিখেছিলেন এই অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে। বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে যখন কারান্তরীণ রাখা হয় তখন তিনি এই বইটিকে সামনে নিয়ে আসেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই আপনারা বিদেশের মাটিতে বসবাস করেও বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, আমি বাংলাদেশী।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী মানব প্রেমের আত্মজীবনী। শুধু গ্রীক ভাষায় নয় আপনারা ইউরোপের সকল ভাষায় এই বইটি অনুবাদিত করে ছড়িয়ে দিন। যেন ইউরোপবাসী বঙ্গবন্ধুর চেতনা, দেশপ্রেম, আদর্শ সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারে।
তিনি প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, করোনায় যখন সারা বিশ্ব জর্জরিত তখনও আপনারা আপনাদের পরিশ্রমের টাকা বাংলাদেশে পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পাশে থেকেছেন। এ জন্য আপনাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আপনাদের প্রতি আর একটি অনুরোধ থাকবে সেটা হলো জামায়াত-বিএনপি’র লোকেরা যেন বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোন রকম ষড়যন্ত্র করতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখবেন, তাদেরকে প্রতিহত করবেন।