বাংলা একাডেমির বইমেলার সঙ্গে বয়সোচিত কারণেই সহজাতভাবেই আমাদের প্রজন্মের একটা আত্মিক বন্ধন গড়ে উঠে। কলেজে উঠার পর পরই বইমেলা হয়ে উঠে তারুণ্যের প্রাণপ্রাচুর্যের বিচরণক্ষেত্র। সেই সময় নিজের মনে করে সবে ক্ষমতার দখল নেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ। সাইকেল চালিয়ে আর কবিতা লিখে তিনি যতই সর্বসাধারণের মন জয় করার চেষ্টা করুন না কেন, ছাত্র সমাজ তাঁকে একদমই মেনে নিতে পারেন নি।
ছাত্রদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কলাভবন থেকে শিক্ষা ভবন অভিমুখে ছাত্রদের মিছিলে ট্রাক তুলে দেয় পুলিশ। জাফর, জয়নাল, দীপালিরা জীবন দিলে ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভের আগুন। সেই আগুনের আঁচে এলোমেলো হয়ে যায় জমজমাট বইমেলা। সেদিনও ছিলাম বইমেলায়। আর বাংলা একাডেমির বইমেলা ছিল এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার।
রাজপথ উত্তাল হয়ে উঠার পাশাপাশি বইমেলা প্রাঙ্গণে তার উত্তাপ দারুণভাবে টের পাওয়া যেত। কবি মোহন রায়হানদের সাহসী তৎপরতা তো ছিল। কবি-লেখকদের কলমে ছিল তীব্র ঝাঁজ। আবৃত্তিকারদের কণ্ঠের নিনাদে প্রকম্পিত হয়েছে পুরো চত্বর। আর তখন তো লিটল ম্যাগাজিনের স্বর্ণযুগ। তাতেও থাকতো প্রতিবাদী সব লেখা ও কার্টুন। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ তো ছিলই। আমাদের তখন তরুণবেলা।
প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ আমাদের দারুণভাবে নাড়িয়ে দিত। বইমেলায় গেলে মনে হতো, আমিও বুঝি আন্দোলনের অংশীদার। এ কারণে বইমেলা আমাদের চুম্বকের মতো টানতো। তাছাড়া কত কত বইয়ের স্পর্শ ও সুঘ্রাণ মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতো। (অথচ কী এক অদ্ভুত কারণে ক্লাসের পাঠ্য বইয়ের স্পর্শ তো দূরে থাক, ঘ্রাণ নিতে একটুও ইচ্ছে করতো না।) তখন তো আর বইমেলায় খুব বেশি বই প্রকাশিত হতো না। মোটামুটিভাবে সব বই ও লেখকের খোঁজ-খবর রাখাটা মোটেও কঠিন ছিল না। সেটাও এক ধরনের আনন্দ ছিল বৈকি।
বইমেলা যখন সাবালক হয়ে উঠতে থাকে, তখন থেকেই তাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। সঙ্গত কারণে আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে একুশের বইমেলা। সেই থেকে বইমেলার সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক কখনই শিথিল হয় নি। বরং বদলে গেছে ভূমিকা। শুরুর দিকে কেবলই দর্শক হিসেবে বইমেলায় গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পকর্টা গভীরতর হয়েছে।
বইমেলা উপলক্ষে কত কিছু যে আয়োজিত হতো। বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠান ও কর্মকাণ্ডে সরগরম থাকতো বাংলা একাডেমি এবং সংলগ্ন এলাকা। নাটকের একটি মঞ্চ গড়ে তোলার জন্য অভিনেতা শংকর সাঁওজালের নেতৃত্বে ‘কারক’ নাট্যগোষ্ঠীর ব্যাঙ্গাত্মক পথনাটক দারুণ উপভোগ করেছি। এজন্য লাল সালুতে টাকা-পয়সা ভালোই জমতো। সেই মঞ্চ কি গড়ে উঠেছে? তাছাড়া মেলায় আগত শিল্প-সাহিত্য-নাটক-সংস্কৃতি-সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি জগতের দূরের মানুষদের কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়।
কত খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব যে আসতেন। লেখক ইমদাদুল হক মিলন, হুমায়ূন আহমেদ, তসলিমা নাসরিনদের তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তাও দেখেছি। মনে পড়ে, শাড়ি পরা তসলিমা নাসরিনকে প্রথম যেদিন মুগ্ধ হয়ে দেখি, তাঁকে কেন্দ্র করে স্বভাববিরুদ্ধভাবে একপাক ঘুরপাক খেয়েছিলাম। কবি নির্মলেন্দু গুণের হাত ধরে কন্যা মৃত্তিকা গুণ, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারের সঙ্গে কন্যা ত্রপা মজুমদারকে অনেক দিন দেখেছি। এই কিশোরী কন্যারা এখন কত বড় হয়ে গেছেন! সে সময় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে দেখতে পাওয়া ছিল রোমাঞ্চকর একটি ব্যাপার।
বইমেলা উপলক্ষে লিটল ম্যাগাজিনের ঢেউ আমার বুকেও দোলা দিয়ে যায়। কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই ১৯৮৩ সালে ‘আবাহন’ নামে একটি সাহিত্য সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ নেই। সেই সুবাদে বাংলা একাডেমি চত্বরে যাতায়াত বেড়ে যায়। একে একে পরিচিত হতে থাকি নবীন-প্রবীণ লেখকদের সঙ্গে। বিশেষ করে কবি আবিদ আজাদ, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন সহ প্রমুখের সঙ্গে সম্পর্কটা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এছাড়াও বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়। সাহিত্য জগতের অনেক অভিসন্ধিও নজরে আসে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এক বছর পর সংকলনটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়। বইমেলায় সংকলনটি নিয়ে যাওয়ার পর নিজেকে সাহিত্য জগতের কেউকেটা মনে হতে থাকে। বইমেলার সঙ্গে অনেক বেশি নিবিড়তা অনুভব করতে থাকি। মনে হতে থাকে, এত দিনে বইমেলার একজন হতে পেরেছি।
১৯৯০ সালে সাবের হোসেন চৌধুরী সম্পাদিত (প্রধান সম্পাদক ছিলেন কবি শামসুর রাহমান) সাপ্তাহিক মূলধারা পত্রিকার রিপোর্টার হয়ে অনেক লেখক-সাহিত্যিক-প্রকাশকের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। এরপর থেকে পেশাগত কাজে অসংখ্যবার বইমেলা চত্বরে যেতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পর একুশে বইমেলা উপলক্ষ্যে ক্রীড়া বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশ করার উদ্যোগ নেই। তারই অংশ হিসেবে ১৯৯৩ সালে ২৬ জন লেখকের লেখা নিয়ে ‘খেলার কথা কথার খেলা’ এবং পরবর্তীকালে বাংলা ভাষায় সম্ভবত প্রথম ক্রীড়া বিষয়ক ছড়াগ্রন্থ কবি সানাউল হক খানের ‘ছন্দে ছন্দে খেলার আনন্দে’ প্রকাশ করা হয়। আর বই বিক্রির জন্য ১৯৯৩ সালে প্রথম সমিতির উদ্যোগে বইমেলায় স্টল নেওয়া হয়। তাতে শুধু সমিতির নয়, অন্যদের লেখা ক্রীড়া বিষয়ক বই নিয়ে সাজানো হয় সেই স্টল। সব দিক দিয়ে এটি ছিল ব্যতিক্রমধর্মী একটি প্রয়াস। এছাড়া বই বিক্রি করার অভিনব একটি কৌশলও নেওয়া হয়। প্রতিদিন কোনো না কোনো ক্রীড়া তারকা ক্রীড়ালেখক সমিতির স্টলে উপস্থিত থাকতেন এবং বইয়ের ক্রেতাদের অটোগ্রাফ দিতেন।
তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ফুটবলার আশরাফউদ্দীন চুন্নু, সালাম মুর্শেদী, শেখ মোহাম্মদ আসলাম, কায়সার হামিদ, মোনেম মুন্না, রুমি রিজভী করিম, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, রক্সি, ক্রিকেটার ওমর খালেদ রুমি, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ব্যাডমিন্টনের কামরুন্নাহার ডানা, টেবিল টেনিসের জোবেরা রহমান লিনু। এঁদের কেউ কেউ আসতেন সপরিবারে।
সবচেয়ে সাড়া জাগিয়েছিল সে সময়কার সুপারস্টার সদ্য বিবাহিত মোনেম মুন্না ও কায়সার হামিদের উপস্থিতি। এই দুই দম্পতির হাতের মেহেদির রং তখনও টাটকা ছিল। মুন্না সস্ত্রীক মেলায় যে দিন স্টলে বসেছিলেন, সেদিন আমাদের স্টলকে কেন্দ্র করে পুরো মেলা যেন ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এ কারণে সম্ভবত মেলার আয়োজকরা আমাদের সতর্ক করে দিয়েছিল।
১৯৯৩ সালেই প্রকৃত প্রকাশক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করি। সে সময় বেশ সুখ্যাতিও অর্জন করি। এ কারণে বইমেলার সঙ্গে সম্পর্কটা আরো দৃঢ় হয়। আর প্রকাশক হওয়ার পেছনে অবদান রাখেন লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। ১৯৯২ সালে দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জনক কে?’ শিরোনামে একটি লেখা। আলোচিত এ বিষয়টি নিয়ে তখন সর্বত্র তোলপাড় চলতে থাকে। সেই আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করে এ লেখাটি। হঠাৎ মাথায় এলো, এ লেখাটিকে বই আকারে প্রকাশ করলে কেমন হয়?
বাংলার বাণীর সাংবাদিক সহকর্মী সুধীর কৈবর্ত দাস, প্রণব সাহা, নান্টু রায়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করলে তাঁরা সায় দেন। এরপর আর এগিয়ে যেতে সময় লাগে নি। চারজনের অর্থে গড়ে উঠে ‘অক্ষরবৃত্ত’ প্রকাশনী। এই প্রকাশনীর উদ্যোগে লেখকের অনুমোদন নিয়ে বইমেলা উপলক্ষে ‘আমরা বাংলাদেশী না বাঙালি?’ বইটি প্রকাশ করা হয়। যদিও আমাদের কোনো স্টল ছিল না। তারপরও মেলায় বইটি হটকেক হয়ে ওঠে। একাধিক সংস্করণও ছাপতে হয়। একটি প্রবন্ধের বই এতটা সাড়া জাগাবে, এটা আমাদের ধারণায় ছিল না।
তখন দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় বইমেলা কাভার করতেন জনপ্রিয় ছড়াকার ও লেখক লুৎফর রহমান রিটন। তিনি এ বইটিকে কেন্দ্র করে প্রকাশক হিসেবে আমার এক টুকরো সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। এ বইটি দিয়ে আমরা বেশ মুনাফা করতে সক্ষম হই। সেটা হয়ে যায় আমাদের ভালো একটা পুঁজি। প্রকাশনা ব্যবসায় আমরা বেশ উৎসাহী হয়ে ওঠি। পরের বছর থেকে আমরা বইমেলায় নিজেরাই স্টল নেওয়া শুরু করি।
দৈনিক বাংলার বাণীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত আবদুল গাফফার চৌধুরীর স্মৃতিচারণমূলক লেখা ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’ও আমরা প্রকাশ করার অনুমতি পাই। এ বইটিও পাঠকরা লুফে নেন। কিন্তু এরপর কোনো বিবেচনা ছাড়াই আমরা একের পর এক গ্রন্থ প্রকাশ করতে থাকি। যার তেমন কোনো পাঠক চাহিদা ছিল না। সব মিলিয়ে বোধকরি ১৮টি বই হবে। এ কারণে আমাদের মূলধন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে।
তাছাড়া প্রকাশক চার জন হলেও সব চাপ গিয়ে পড়ে বাংলা বাজার এলাকায় সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব সুধীর কৈবর্ত দাসের কাঁধে। প্রকৃতঅর্থেই ‘জুতা সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ’ তাঁকেই করতে হয়। আর আমরা বাকি তিন প্রকাশক অনেকটা মেহমান হিসেবে মাঝে-মধ্যে স্টলে চেহারা দেখাতে যেতাম। খোঁজ-খবর খুব একটা নিতাম না। যদিও বইয়ের ব্যবসার প্রসার বাড়তে থাকে। কিন্তু একার পক্ষে এ ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সুধীর দা’র পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ব্যবসায় লালবাতি জ্বলতে সময় লাগে নি। এ কারণে প্রকাশক হিসেবে বইমেলার সঙ্গে ২০০০ সালের পর আর সম্পর্ক থাকে নি।
১৯৯৮ সাল থেকে বইমেলার সঙ্গে গড়ে ওঠে নতুন এক সম্পর্ক। সে বছর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় আমার প্রথম গ্রন্থ ‘দেখা হলো লংকায়’। ভ্রমণবিষয়ক এ গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সংযোজন না হলেও বাংলা একডেমির বইমেলায় অভিষেক হয় একজন লেখকের। তবে এটাও ঠিক, অভিষেক হওয়ার আনন্দ অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা চলে না। যদিও অভিষিক্ত ক্রিকেটারদের মতো মাথায় কেউ ক্যাপ পরিয়ে না দিলেও অদৃশ্য এক ক্যাপ নিজেকে নিজেই পরিয়ে দেই। লেখক হিসেবে বইমেলার সঙ্গে সেই যে হার্দিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, সেটা আর কাটিয়ে ওঠা যায় নি। এখন তো আর আগের সেই দিন নেই। বইয়ের প্রচার-প্রচারণায় লেখক নিজে সক্রিয় না হলে বইয়ের নাকি কাটতি হয় না। কিন্তু এই দক্ষতা আজও অর্জন করতে পারলাম না। তবে ২০০৫ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় আমার দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘স্টেডিয়ামের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’। এ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমির বটতলায় বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাতে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, কবি হালিম আজাদ সহ অন্যরা।
সম্ভবত ২০০৮ সালে বাংলা একাডেমি চত্বর দিয়ে একদিন হাঁটাহাঁটির সময় পরিচিত ছড়াকার ও লেখক আমিরুল ইসলাম ঠেলেঠুলে লুৎফর রহমান রিটন ভাইয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দেন। ২০০৪ সাল থেকে চ্যানেল আই বাংলা একাডেমি চত্বর থেকে সরাসরি বইমেলা সম্প্রচার করা শুরু করে। এ অনুষ্ঠানের প্রযোজক আমিরুল ইসলাম। আর দীর্ঘ এক দশক এর উপস্থাপক রিটন ভাই। বিস্মিত আমি সেদিন নিজের বই সম্ভবত ‘আছি ক্রিকেটে আছি ফুটবলেও’ এবং ক্রীড়া বিষয়ক প্রকাশনা নিয়ে কী বলেছিলাম, সেটা আজ আর স্মরণ নেই। বইমেলায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়ায় যে দু’বার সাক্ষাৎকার দেই, ঘটনাক্রমে দু’বারই সাক্ষাৎকার নেন আমার একজন অত্যন্ত প্রিয় মানুষ রিটন ভাই। তবে এরপর আর নিজের বই নিয়ে বইমেলায় কখনও কোথাও কিছু বলতে হয় নি।
তারপর থেকে মাঝে-মধ্যে নিজের বই প্রকাশিত হওয়ায় বইমেলার সঙ্গে আবেগগত ও ভালোবাসার একটা বন্ধন গড়ে উঠেছে। তাছাড়া মনের মধ্যে একটা লেখক লেখক ভাবও বোধকরি এসে গেছে! বইমেলা এলে কাছের জনরা জানতে চান, এবার কী বই বের হচ্ছে? এটাও কি কম আনন্দের? বিভিন্ন সময়ে বদলেছে বইমেলার নামকরণ। সাম্প্রতিক সময়ে বইমেলার ব্যাপ্তি বেড়েছে। বিশালত্ব বেড়েছে। বইয়ের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু সৃজনশীল বইয়ের পাঠক কি বেড়েছে? তবে বইমেলা এলে এখনও বুকের মধ্যে উড়তে থাকে রঙিন প্রজাপতি। যতই কাজে ব্যস্ত থাকি না কেন, নতুন প্রেমে পড়া কিশোরের মতো বইমেলায় ঢু মারার জন্য মনটা সারাক্ষণ উচাটন হয়ে থাকে। আর প্রেমিকা যখন অপেক্ষায় থাকে, তখন যত কাজই থাকুক না কেন, ছুটে না গিয়ে পারা যায়?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)