গত বছর ছিলো সুইস লিকস তালিকা, যেখানে জেনেভার এইচএসবিসি ব্যাংকে ১১শ’র বেশি ভারতীয় নাগরিকের গোপন অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য ফাঁস হয়েছিলো। আর এবার এলো পানামা পেপারস।
ওই তালিকায় ২শ’ দেশ ও টেরিটরি সব মিলিয়ে ২ লাখ ১৪ হাজার লোকের নাম রয়েছে। যার মধ্যে ভারতীয় রয়েছেন ৫শ’রও বেশি। রয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বরিয়া রাই, কেপি সিংসহ আরো অনেকে।
পৃথিবীর নানা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে ধনী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা বিভিন্ন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে নিজেদের সম্পদকে গোপন করে রাখছেন। পানামার মোসাক ফনসেকা নামের একটি আইনী প্রতিষ্ঠানের এমন প্রায় এক কোটি পনেরো লাখ গোপন নথি ফাঁসের পর আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
বিবিসি ও গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের ১০৭টি গণমাধ্যম এবং ৭৮টি দেশ এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছে। ভারতের অন্যতম জাতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসও রয়েছে এর মধ্যে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের নির্বাহী সম্পাদক রিতু সারিনের নেতৃত্বে একটি দল গত আট মাস ধরে এ ব্যাপারে ৩৬ হাজার নথি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে আসছে।
তাদের তদন্তে নথির সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে ২৩৪টি ভারতীয় পাসপোর্টও, যেগুলো ব্যবসা নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মোসাক ফনসেকায় জমা ছিলো।
মোসাক ফনসেকার গোপন নথি থেকে পাওয়া তথ্যগুলো থেকে সেসব ব্যক্তিদের তালিকা করা হয়েছে, যারা কর ফাঁকি দিয়ে শিথিল আইনী ব্যবস্থায় নিজেদের আর্থিক কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য সংস্থাটিকে টাকা দিয়ে এসেছেন। আর মোসাকও তাদের জন্য কর কম, এমন সব দেশে ভুয়া নাম বা তথ্য দিয়ে সম্পত্তি কিনতে বা ব্যবসা পরিচালনা করতে সহায়তা করেছে।
৫শ’ ভারতীয়র মধ্যে সুপরিচিত কয়েকজনের সম্পদের তথ্য জানলেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
চলচ্চিত্র তারকা ঐশ্বরিয়া রাই
ঐশ্বরিয়া, তার বাবা, মা ও ভাইকে অ্যামিক পার্টনার্স লিমিটেড নামের ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর হিসেবে ২০০৫ সালে নিবন্ধন করা হয়। পরে ২০০৮ সালে কোম্পানিটি গায়েব হয়ে যাওয়ার আগে ঐশ্বরিয়ার পদ ডিরেক্টর থেকে বদলে শেয়ারহোল্ডার করা হয়।
চলচ্চিত্র তারকা অমিতাভ বচ্চন
পানামা পেপারসে অমিতাভ বচ্চনকে ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কমপক্ষে ৪টি অখ্যাত শিপিং কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে পাওয়া গেছে – একটি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে, বাকি তিনটি বাহামায়। প্রতিষ্ঠান চারটির অনুমোদিত পুঁজির সীমা ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার হলেও এদের ব্যবসায়িক লেনদেন লাখ লাখ ডলারের হিসেব ছাড়িয়েছে।
ব্যবসায়ী সামির গেহলাউত
ভারতীয় বিজনেস জায়ান্ট ইন্ডিয়াবুলস-এর প্রতিষ্ঠাতা সামির গেহলাউত ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত পারিবারিক ট্রাস্টের নাম করে কারনাল, দিল্লি, বাহামা, জার্সি এবং যুক্তরাজ্যে তিনটিরও বেশি লন্ডনি সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। সেগুলোতে এখন আবাসিক ও হোটেল প্রকল্পের কাজ চলছে।
এছাড়াও কর ফাঁকি ও অবৈধ সম্পদধারীর তালিকায় রয়েছে ডিএলএফ রিয়েল এস্টেটের মালিক কেপি সিং ও তার পরিবারের ৯ সদস্য, অ্যাপোলো টায়ার্স, গৌতম আদানির বড় ভাই বিনোদ আদানিসহ আরো অনেকে।
শুধু চলচ্চিত্র তারকা বা ব্যবসায়ী নয়, তালিকায় রয়েছেন রাজনীতিকরাও। পশ্চিমবঙ্গের শিশির বাজোরিয়া, দিল্লির লোকসত্ত্ব পার্টির সাবেক প্রধান অনুরাগ কেজরিওয়াল, ভারতীয় কংগ্রেস দলের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর মেয়ে পিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী রবার্ট ভদ্রের নাম এখানে উল্লেখযোগ্য।
তালিকায় প্রয়াত মুম্বাই গ্যাংলর্ড ইকবাল মিরচির নামও খুঁজে পেয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তকারী দল।
মোসাক ফনসেকায় ভারতের পঞ্চকুলা, দেরাদুন, ভদোদারা এবং মন্ডসৌর এলাকার এমন কিছু ঠিকানা পাওয়া গেছে যা বাস্তবে নেই। আবার কিছু তথ্য অনুসন্ধানে ঠিকানা খুঁজে পাওয়া গেলেও যার নামে ঠিকানা, সেই ব্যক্তির অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।
শুধু তাই নয়, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ছাড়াও ফনসেকা তদন্তে এখন পর্যন্ত কয়েকটি ক্রিকেট ফ্র্যাঞ্চাইজি ডিলসহ অজ্ঞাত কিছু চুক্তি সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য মিলেছে, যার কোনো কোনোটিতে ভারত সরকারেরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্তকারী দলটি।