প্রেক্ষাগৃহে এ বছর নতুন কোনো ছবি নেই?
প্রেক্ষাগৃহে নতুন ছবির অভাব: সামনে নতুন ছবি না এলে আমদানিতে ইচ্ছুক হল মালিকরা
বেশ ক’বছর ধরেই চরম সংকটে দেশের চলচ্চিত্র। এরমধ্যে বৈশ্বিক করোনাভাইরাস ঢালিউডকে আরও ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়! গেল মাসে হল খুললেও প্রায় দর্শকশূন্য প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির জন্য চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে নেই নতুন কোনো ছবি!
প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, অনেকগুলো ছবি মুক্তির অপেক্ষায় থাকলেও চলতি নভেম্বর ও আসন্ন ডিসেম্বরে মাত্র তিনটি ছবি মুক্তির জন্য তারিখ নেয়া রয়েছে! তবে সেগুলো আদৌ মুক্তি পাবে কিনা চূড়ান্ত নয়।
এর মধ্যে ৬ নভেম্বর ডি এ তায়েবের ‘আমার মা’ এবং ১১ ডিসেম্বর অনুপ বড়ুয়ার ‘বান্ধব’ এবং গোলাম মোস্তফা শিমুলের ‘মুখ ও মুখোশ’ এর তারিখ নেয়া।
নায়ক ডি এ তায়েব চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ৬ নভেম্বর ‘আমার মা’ মুক্তি দিচ্ছি না। এখন ছবি প্রেক্ষাগৃহে দিলে দর্শক যাবে না। ভালো ছবি হলেও দর্শক না গেলে খারাপ রিপোর্ট ছড়াবে। করোনার অবস্থা একটু ভালোর দিকে গেলে, মানুষ আবার প্রেক্ষাগৃহমুখী হলে তখন নতুন করে মুক্তির প্রস্তুতি নেব।
অনুপম কথাচিত্রের কর্ণধার ও প্রযোজক অনুপ বড়ুয়ার প্রথম ছবি ‘বান্ধব’। গত ২০ মার্চ ছবিটি তিনি মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৮ মার্চ থেকেই বন্ধ হয়ে যায় প্রেক্ষাগৃহ। নতুন করে আবার ১১ ডিসেম্বর মুক্তি প্রসঙ্গে এ প্রযোজক বলেন, ৫ তারিখ থেকে ‘ছায়াবৃক্ষ’ ছবির শুটিংয়ে যাচ্ছি। ২০ দিনের এ লট। ফিরে ‘বান্ধব’-এর মুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবো কিনা যথেষ্ট কনফিউশন রয়েছে। তাছাড়া ডিসেম্বরে করোনা প্রকোপ বৃদ্ধির ভয় কাজ করছে। এসবের মধ্যে ছবি মুক্তি দিতে পারবো কিনা বুঝতে আরও সময়ের প্রয়োজন।
এদিকে, ‘মুখ ও মুখোশ’ ছবির পরিচালক গোলাম মোস্তফা শিমুল বলেন, নির্ধারিত তারিখে ছবি মুক্তি দেয়ার ইচ্ছে আছে। বাকিটা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির উপরে। ডিসেম্বরে পরিস্থিতি যদি খারাপ হয় তাহলে ছবি দেয়া সম্ভব হবে না। হাতে যেহেতু এখনও কিছুদিন সময় রয়েছে আরও কিছুদিন পরিস্থিতি বুঝতে চাই।
প্রায় সাত মাস পর ১৬ অক্টোবর স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রেক্ষাগৃহ খোলার অনুমতি দেয় সরকার। ওইদিন ৪০ প্রেক্ষাগৃহে ‘সাহসী হিরো আলম’ নামে মাত্র একটি ছবি মুক্তি পায়। মুক্তির পর ছবিটির চরম ব্যবসায়িক বিপর্যয় ঘটে। এক সপ্তাহের মাথায় তিনভাগের দুইভাগ প্রেক্ষাগৃহ থেকে নেমে যায় ‘সাহসী হিরো আলম’।
ঠিক এর পরের সপ্তাহে রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স এর সবগুলো শাখা, যমুনা ব্লকবাস্টার ও চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে মুক্তি পায় মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। শুরু থেকেই ছবিটি দর্শকের প্রশংসা পাচ্ছে।
এদিকে প্রদর্শক সমিতির তথ্যমতে, দেশে ৬০ টির মতো প্রেক্ষাগৃহ বর্তমানে চালু রয়েছে। নতুন ছবি না থাকায় ওইসব প্রেক্ষাগৃহ সচল রয়েছে চলচ্চিত্রের সেরা নায়ক শাকিব খানের কিছু পুরাতন ছবির মাধ্যমে। যেসব ছবি দর্শক আগেই দেখেছেন।
প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, দেশে খাদ্য ঘাটতি হলে বাইরে থেকে সরকার আমদানি করে থাকে। এখন আমাদের ছবির সংকট। অনেকগুলো ছবি মুক্তির অপেক্ষায় থাকলেও লোকসানের ভয়ে কেউ মুক্তি দিচ্ছে না। অন্যদিকে, নতুন ভালো ছবি না থাকায় দর্শক প্রেক্ষাগৃহে আসছে না। এ ক্ষেত্রে মহাসংকটে পড়েছে হল মালিকরা।
তিনি বলেন, আরও এক সপ্তাহ আমরা পর্যবেক্ষণ করবো। তারপর যদি দেশের নতুন ছবি না আসে তাহলে আমরা আমদানির দিকে যাবো। এ ক্ষেত্রে প্রযোজক সমিতি ও আমদানিকারকদের সাথে আলোচনা করবো। ছবি না পেলে হল খোলা রেখে লাভ নেই। নইলে আবার সিনেমা হল বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, কীভাবে সার্ভাইব করা যায় সেজন্য আমরা প্রদর্শক সমিতির সঙ্গে শিগগির বসবো। দরকার হলে যেসব প্রযোজকদের ছবি মুক্তির জন্য প্রস্তুত তাদের সঙ্গেও বসবো।
তিনি বলেন, কদিন আগে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রযোজক সমিতির সভাপতি, পরিচালক সমিতির সভাপতি ও মহাসচিবসহ বসেছিলাম। প্রযোজকদের সুবিধার জন্য সরকারের কাছে ভর্তুকি চেয়েছিলাম। তথ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই এটা কার্যকর হবে।