দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও মানুষসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অসামরিক-সামরিক সমন্বয়ে আঞ্চলিক পরামর্শক দলের চতুর্থ সভা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয় তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দুর্যোগ প্রতিরোধ করতে পারব না। তবে আমাদের দূরদর্শী কাজের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করতে পারি। বাংলাদেশে আমরা ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে প্রশমন কর্মসূচির উপর গুরুত্বারোপ করেছি।’
তিনি এ সময় মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলার জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমরা যানবাহন দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, ভবন বা সেতু ধ্বংস, সন্ত্রাসী আক্রমণের মত মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগকেও উপেক্ষা করতে পারি না। এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খড়াসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে চলেছে। প্রকৃতি আর মানুষের সৃষ্টি এসব দুর্যোগের বড় শিকার বাংলাদেশ। জার্মান ওয়াচের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯। হাওড়ে আগাম বন্যা, পাহাড় ধস, মৌসুমি বন্যা, এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখানে নিয়মিত।
বাংলাদেশ সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়, বিশেষ করে জরুরি প্রস্তুতি এবং সাড়াদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতা ও দুর্যোগ-ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত ঢাকা ঘোষণা এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। এটি দুর্যোগ-ঝুঁকি হ্রাসে সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নে প্রায়োগিক নির্দেশনা হিসেবে কাজ করছে’।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার এক্ষেত্রে সমাজের সকলকে নিয়ে কাজ করার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মানবিক সহায়তার কাজে সব সময় স্বেচ্ছাসেবক এবং সুশীল সমাজের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, বদ্বীপ পরিকল্পনা অংশ হিসেবে আগামী ১০০ বছরের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ক্রমে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলাসহ দুর্যোগ ঝুঁকি-হ্রাস পাবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও ১১ লাখ রোহিঙ্গার পুনর্বাসন করে বাংলাদেশ মানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রাকৃতিক ও মানুষসৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান জানান।
তিনদিনের এ সম্মেলনে ২৬ সদস্য রাষ্ট্রসহ ২৪ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ১শ’ ৫০ জন প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।