চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রসঙ্গ মিড ডে মিল

খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা (মিড ডে মিল) নিশ্চিত করতে পারে শিশুকে স্কুলমুখি করে জাতিকে শতভাগ শিক্ষিত করতে। জানা যায় ১৯৩৯ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে স্কুলগুলিতে শিক্ষার্থীর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায় এবং সে দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। জাপান সরকার তখন শিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরে একবেলা স্কুলে ফ্রি খাবারের ব্যবস্থা করে। সেই থেকে শিক্ষার্থীরা আবার স্কুলমুখি হতে শুরু করে। যত অভাবেই থাকুক বাচ্চাকে কাজে না পাঠিয়ে একবেলা খাবার গ্রহণ ও সন্তান লেখাপড়া শিখবে ভেবে, বাবা মায়েরাও নিশ্চিন্ত হয়ে সন্তানকে স্কুলে দিয়ে পূর্ণ উদ্যমে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলেন।

শুধুমাত্র এই একটি পলিসির কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সব হারিয়েও জাপানের ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগেনি। জাতি হিসেবে জাপানিরা বর্তমানে শতভাগ শিক্ষিত। জাপান এখন বিশ্বের সেরা ধনী দেশও। আজও সেদেশে মিড ডে মিল চালু রয়েছে।

মিড-ডে-মিল কি? বাড়িতে থাকি আর স্কুলে, দুপুরে আমাদের খেতেই হয়। দুপুরের খাবারই আমাদের প্রধান। অবস্থাপন্নরা স্কুল পড়ুয়া সন্তানকে বক্সে খাবার দিয়ে দেন, তাকে আমরা টিফিন বলি। আবার কারো কারো বাসা স্কুলের নিকটে থাকায় টিফিন পিরিয়ডে বাসা থেকেই খেয়ে আসতে পারে। আমাদের দেশে কোনো কোনো স্কুলে বিস্কুটও দেওয়া হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কুল কলেজে দিনের মাঝখানে সব শিক্ষার্থীদের সমান পুষ্টি নিশ্চিত করে সুষম খাবার দেওয়া হয়। মিড ডে মিল এর ব্যবস্থার কারণে কর্মজীবি বাবা মা দিনে অন্তত একবেলা সন্তানের খাবারের কথা চিন্তা না করে সন্তানকে স্কুলে দিয়ে নিজ কাজে মনোযোগ দিতে পারেন।

রাষ্ট্র শিক্ষার মাধ্যমে খাদ্য পরিবেশনে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করলেও তার বিনিময়টা নিশ্চিতভাবেই ফিরে পায়। শিক্ষিত জাতি রাষ্ট্রেরই সম্পদ। আমাদের দেশেও শিক্ষাখাতে বিনামূল্যে বই বিতরণ, শিক্ষা ভাতা, উপবৃত্তিসহ নানান প্রকল্প হাতে রয়েছে শিশুদের স্কুলমুখি করার জন্য। এর সঙ্গে একটি প্রকল্প সরকার হাতে নিয়েছে যার নাম ‘মিড ডে মিল’। তবে প্রচলিত ‘মিড ডে মিল’ এর চেয়ে ব্যবস্থাটি একটু ভিন্ন।

আমাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলছেন, মায়েরা তার বাচ্চাকে টিফিন বক্সে খাবার বাড়ি থেকে দিয়ে দিবেন সেই খাবার স্কুলে বসে খেলেই তার নাম হবে ‘মিড ডে মিল’ বা স্কুল লাঞ্চ। কারণ এই মিল খাওয়াতে হলে সরকারের চৌত্রিশ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এক বিস্কুট খাওয়াতেই নাকি কুড়ি হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। আমার নিজের জেলা ঝালকাঠিতে সেই বিস্কুট কোনো স্কুল পায়, শুনিনি। বিশ সালের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের এই প্রকল্পটিও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তিনি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গিয়ে মায়েদের বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছেন টিফিন বক্সে করে স্কুলে খাবার দিয়ে দিতে।

প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে শিশুদের মধ্যে যতটা সম্ভব বৈষম্য দূর করে স্কুলমুখি করার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা, সেখানে বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসায় একেক জনের খাবারের মান ও বৈচিত্র থেকে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। স্বল্পআয়ী পিতামাতা চাহিদামতো শিশুকে খাবার দিতে না পারা এবং প্রতিযোগিতায় টিকে না থাকতে পেরে শিশুকে স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে পাঠাতেই উৎসাহ বোধ করবেন বেশি।

আমাদের দেশে কিছু প্রাথমিক স্কুল আছে যা গরীব শিশুদের জন্য নির্মিত হয়েছে যেমন শিশুকল্যাণ, কারিগরি, উপকুলীয় এলাকা বা সরকারের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে অধিকাংশ মানুষ দিনমজুর বা শ্রমজীবী। সরকার শতভাগ স্কুলে ‘মিডে ডে মিল’ চালু না করতে পারলেও এসব এলাকার স্কুলে ঠিকাদার নিয়োগ বা উপজেলায় সেন্টার কিচেন বা অন্য যে কোন পদ্ধতিতে স্বল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে দেখতে পারে। যেমনটি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে চালু হয়েছে। প্রয়োজনে শিক্ষায় অন্য কোন প্রকল্প কাটছাঁট বা স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতা বা শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি নিয়ে সরকারের তত্ত্বাবধানে সকলের জন্য সুষম খাদ্য ‘মিড ডে মিল’ বা ‘স্কুল লাঞ্চ’ নিশ্চিত করতে পারে। তাহলে ঝরে পরা রোধ ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের স্কুলমুখি করা সহজ হবে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)