জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনের ফাঁকে ইউএনজিএ সদরদপ্তরে ওআইসির কন্ট্রাক্ট গ্রুপের বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে ছয় দফা প্রস্তাবনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ছয় দফা হলো: ১) এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। ২) নিরপরাধ বেসামরিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মিয়ানমারের ভেতরে নিরাপদ এলাকা তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে তাদের সুরক্ষা দেওয়া হবে। ৩) বাস্তুচ্যুত সব রোহিঙ্গা যেন নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ৪) রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ৫) রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে চিহ্নিত করার যে রাষ্ট্রীয় প্রপাগান্ডা মিয়ানমার চালাচ্ছে, তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ৬) রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে না ফেরা পর্যন্ত তাদের জরুরি মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে হবে ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশগুলোকে। জাতিসংঘের এবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সাহসী উচ্চারণের মাধ্যমে যেমন রোহিঙ্গা সমস্যা সারাবিশ্বের কাছে পৌঁছে গেছে, তেমনি এই ৬ দফার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এই গাইডলাইনও এসেছে সামনে। বিষয়টি আশাব্যাঞ্জক। তবে এই ৬ দফা বাস্তবায়নে কে করবে? বা কীভাবে করবে, এ বিষয়ে স্পষ্টতা আসলে তা ইতিবাচক হবে বলে আমরা মনে করি। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটারেস ইতিমধ্যে বলেছেন, মিয়ানমারে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে ও রোহিঙ্গাদের নিরাপদে দেশে ফেরা নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে এক সাক্ষাৎকারে সু চি কে ‘শেষ সুযোগ’ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন অ্যান্টোনিও গুটারেস। এখান দেখার বিষয় জাতিসংঘ কী করে। অধিবেশন শেষ হবার পরেও দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোকে বিশ্বজনমত তৈরি ও প্রধানমন্ত্রীর ৬ দফা বাস্তবায়নের জন্য চাপ অব্যাহত রাখা জরুরি বলে আমরা মনে করি। রোহিঙ্গা ইস্যুর গুরুত্ব, দীর্ঘমেয়াদি ভয়াবহতা ও মানবিক দিক বিবেচনা করে এ বিষয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ সক্রিয় থাকবেন বলে আমাদের আশাবাদ।