প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ৪৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
বিবৃতিতে তারা বলেছেন: মামলাটি দায়েরের আগে-পরে এ বিষয়ে যেভাবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বক্তব্য দিয়েছেন এবং এই মামলায় প্রথম আলো সম্পাদককে যেভাবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, তাতে মামলাটি আমাদের কাছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হয়েছে।
অভিযুক্তদের উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ সীমাবদ্ধ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়: এই মামলায় সমন জারি করে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে: দেশে বাক-স্বাধীনতার ওপর একের পর এক যেসব আঘাত আসছে, তা থেকে মামলাটিকে পৃথক করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।
এই মামলায় প্রথম আলো সম্পাদকসহ সব অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিপূর্ণ আইনগত প্রতিকার ও সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার অবারিত রাখার দাবি জানান তারা।
একই সঙ্গে এ ধরনের মামলাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করার কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা থেকে সবাইকে বিরত থাকারও আহ্বান জানান বিশিষ্ট নাগরিকরা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন: এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হােসেন, হামিদা হােসেন, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, জেড আই খান পান্না, অধ্যাপক তােফায়েল আহমেদ, ড. শাহদীন মালিক, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, খুশী কবির, অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, ড. সি আর আবরার, অধ্যাপক আলী রীয়াজ, অধ্যাপক শাহনাজ সুদা, অধ্যাপক স্বপন আদনান, অধ্যাপক, আসিফ নজরুল, ব্যারিস্টার সারা হােসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, রেহনুমা আহমেদ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন।
এছাড়াও বিবৃতিতে সাক্ষর করেছেন: অধ্যাপক ফেরদাউস আজিম, ড. শহিদুল আলম, অধ্যাপক রােবায়েত ফেরদৌস, ফরিদা আখতার, অধ্যাপক পারউইন হাসান, শিরীন হক, মালেকা বেগম, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ড. ফসটিনা পেরেরা, ওমর তারেক চৌধুরী, নায়লা জামান খান, জাকির হােসেন, নূর খান লিটন, গােলাম মাের্তোজা, হাসনাত কাইয়ুম, রেজাউর রহমান লেনিন, অরূপ রাহী, হাসিবুর রহমান, সিনথিয়া ফরিদ, হানা সামস আহমেদ।
এর আগে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র নাইমুল আবরারের অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে করা মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার এই পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত।
গত বছরের নভেম্বরে আবরারের মৃত্যুকে ‘অবহেলাজনিত হত্যা’ উল্লেখ করে তার পরিবারের জন্য ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
গত ১ নভেম্বর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দৈনিক প্রথম আলো’র ম্যাগাজিন কিশোর আলো’র অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আবরারের মৃত্যু হয়।
ঘটনার জন্য দৈনিক প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে সম্পাদক মতিউর রহমান এবং অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে গত ৬ নভেম্বর মামলা করেন আবরারের বাবা মো. মুজিবুর রহমান।
পরে বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মো. আমিনুল হক আবরারের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে তার বাবার নালিশি মামলাটি এক সঙ্গে তদন্ত করতে বলেন আদালত।
আদালতের ওই নির্দেশে গত ৯ নভেম্বর সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ধন্যপুর গ্রামের মাওলানা মোহাম্মদ উল্যার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে আবরারের লাশ তোলা হয়।
পরের দিন গত ১০ নভেম্বর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।