কথায় বলে, বনের বাঘে খায় না; মনের বাঘে খায়। ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে মনের সে বাঘে খাচ্ছিল গত কিছুদিন, এখনও যে খাচ্ছে না এমন নয়। তবে, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় দু’ দেশের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে তাতে মনের সেই বাঘ কিছুটা দূর হবে বলেই আমরা মনে করি। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দিল্লীর হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা কাঠামো বিষয়ক যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে তাতে ভারতের তামিলনাড়ুর ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজ ও বাংলাদেশের ঢাকার মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজের মধ্যে কৌশলগত ও পরিচালনাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো হবে। ঢাকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ও নয়াদিল্লির ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং কৌশলগত শিক্ষার বিষয়ে সহযোগিতাও বাড়ানো হবে। এছাড়া সামরিক অস্ত্রাদি কেনার জন্য বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে ভারত। সেই কেনাকাটায় অবশ্য বাংলাদেশের চাওয়াটাই মুখ্য হবে। দু’ দেশের মধ্যে এছাড়াও বেশকিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।তিস্তার পানি বণ্টনে চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ খুব বেশি আগ্রহী থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবস্থানের কারণে এবারও সেটা হয়নি। তবে, আশ্বাস মিলেছে যে দু’ দেশের বর্তমান সরকার দুটি ক্ষমতায় থাকার সময়ের মধ্যেই ওই চুক্তি হবে। আমরাও আশা করতে চাই, ভারত তার প্রতিশ্রুতি রাখবে এবং শিগগিরই চুক্তিতে সই করতে পারবে দু’ দেশ। এর বাইরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে অনেক কথা হলেও সমঝোতা স্মারকে এমন কিছু হয়নি যাতে বাংলাদেশ বিন্দুমাত্র উদ্বেগ বোধ করতে পারে। আসলে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোন চুক্তি হওয়ার কোন কারণ নেই। এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে সুপ্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক মানে নিজের স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়া। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সেরকম আশঙ্কা করাটাই বরং বোকামি। শেষ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতায় যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে তাতে আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে দু’ দেশের সশস্ত্র বাহিনীই উপকৃত হবে। শুধু প্রতিরক্ষা নয়, আমরা মনে করি, প্রয়োজনীয় অন্যান্য ক্ষেত্রেও আমরা পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারি, বিশেষ করে সে দেশটির সঙ্গে আমাদের খুব ভাল বন্ধুত্ব থাকতে পারে যারা আমাদের জন্মইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত, যে দেশের সামরিক বাহিনীও আমাদের স্বাধীনতার জন্য নিজেদের রক্ত দিয়েছে। এবারের ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আমরা চাই, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মানের জায়গা থেকে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বন্ধুত্ব আগামী দিনগুলোতে আরো শক্তিশালী হবে।