প্রটোকলের বাইরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং সদ্যপ্রয়াত ফার্স্ট লেডি শুভ্রা মুখার্জির যে গভীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক ছিলো সেটা আরেকবার দেখলো ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব।
নয়াদিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবন কিংবা ১৩, তালকাটোরা রোডের বাড়ি যেখানে শুভ্রা মুখার্জির মরদেহ রাখা হয়েছিলো, দু’ জায়গাতেই ভিড় করা ভারতের সবক্ষেত্রে শীর্ষ ব্যক্তিত্ব দেখেছেন, তাদের এ সম্পর্ক কতো গভীর এবং কতোটা পারিবারিক আবহের।
সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার সুবিধায় শুভ্রা মুখার্জির মরদেহ প্রণব-শুভ্রার ছেলে অভিজিৎ মুখার্জির তালকাটোরার বাড়িতে রাখা হয়েছিলো।
ভারতীয় সাংবাদিকরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোটবোন শেখ রেহানা এবং মেয়ে সায়মা হোসেন সেখানে পৌঁছানোর পর বাড়ির প্রতিটি মানুষের মুখের ভাষা বলে দিচ্ছিলো, তাদের পরম দুঃখের সময় তারা যেনো একজন বোন, মা অথবা একজন নিকটাত্মীয়কে কাছে পেয়েছেন।
তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা, সান্ত্বনা দেন।
মুখার্জি পরিবারের সকল সদস্যও তার কাছে ছুটে আসেন। আগে পরে জন্মের কারণে তাদের কারো সঙ্গে শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, কারো সঙ্গে বেশ কয়েক বছরের। কিন্তু, তাদের সবার কাছেই তিনি যেনো খুব কাছের আত্মীয়, খুব নিকটজন।
প্রণব মুখার্জি এবং শেখ হাসিনার পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক প্রায় চার দশকের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবার নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনার কয়েক বছরের দিল্লীবাসের সময় অনেক ভারতীয়র সঙ্গে তাদের পরিচয় হলেও বাঙালি প্রণব মুখার্জি এবং শুভ্রা মুখার্জির মতো আর কেউ অতোটা ঘনিষ্ঠ হতে পারেননি।
প্রধানমন্ত্রীর একজন সফরসঙ্গী চ্যানেল আইন অনলাইনকে বলেন, রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে শেখ হাসিনা দেখা করে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সময় দু’জনের চোখে যে জল চিকচিক করছিলো সেটা যেনো বলে দিচ্ছিলো, হয়তো এই প্রথম তাদের মধ্যে সাক্ষাতে শুভ্রা মুখার্জি নেই।
মঙ্গলবার ৭৪ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন বাংলাদেশের নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে জন্ম নেওয়া শুভ্রা মুখার্জি। সঙ্গে সঙ্গেই প্রণব মুখার্জিকে ফোন করে শোক প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আনুষ্ঠানিক শোক প্রকাশের পাশাপশি বুধবার ভোরেই শেখ হাসিনা দিল্লীর উদ্দেশে রওনা হন।
ভারতীয় সাংবাদিকরা বলেছেন, তারা জানতেন যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দিল্লী আসছেন। তবে সেটা যে শুধু আনুষ্ঠানিকতা না, দুটি বাঙালি পরিবারের স্বার্থহীন সম্পর্ক; একজনের দুঃখের সময় অন্য পরিবারটিরও সমব্যাথী হওয়া; সেটা আজ দেখেছে রাষ্ট্রপতি ভবনে উপস্থিত ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব।
এক সিনিয়র সাংবাদিক বলেন: এখানে কোনো রাজনীতি নেই, কূটনীতিও নেই। তারপরও আরো একবার ভারতীয়দের হৃদয় জয় করে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।