আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির গুঞ্জন সম্প্রতি রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে।
কারাবন্দীর প্যারোলে মুক্তির যুক্তি খুঁজতে হলে আমাদের প্রথমেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্যারোলে মুক্তি বিষয়ক নীতিমালাটিকে বিবেচনায় নিতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৬ সালের ১ জুন প্রণীত নীতিমালায় বলা হয়েছে:
* ভিআইপি বা অন্যান্য সকল শ্রেণীর কয়েদী বা হাজতি বন্দীদের নিকট আত্মীয়ের যেমন বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং আপন ভাই বোন মারা গেলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যাবে।
* ভিআইপি বা অন্যান্য সকল শ্রেণীর কয়েদী বা হাজতি বন্দীদের নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুর কারণ ছাড়াও কোন আদালতের আদেশ কিংবা সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্যারোলে মুক্তি দেয়া প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া যাবে। তবে উভয় ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও দূরত্ব বিবেচনায় প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ সময় নির্ধারণ করে দিবেন।
* বন্দীকে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরাধীনে রাখতে হবে।
* মুক্তির সময়সীমা কোন অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার অধিক হবে না তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার মুক্তির সময়সীমা হ্রাস বা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন।
* কোন বন্দী জেলার কোন কেন্দ্রীয় / জেলা/ বিশেষ কারাগার / সাব জেলে আটক থাকলে ওই জেলার অভ্যন্তরে যে কোনো স্থানে মঞ্জুরকারীকর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন। অপরদিকে কোনো বন্দি নিজ জেলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় / জেলা/ বিশেষ কারাগার / সাব জেলে আটক না থেকে অন্য জেলায় অবস্থিত কোন কেন্দ্রীয় / জেলা/ বিশেষ কারাগার / সাব জেলে আটক থাকলে গন্তব্যের দুরুত্ব বিবেচনা করে মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন।
তবে উভয় ক্ষেত্রেই দুর্গম এলাকা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, দূরত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর কিংবা নামঞ্জুর এর ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন।
* কারাগারের ফটক থেকে পুলিশ প্যারোলে মুক্ত বন্দিকে বুঝে নেবার পর অনুমোদিত সময়সীমার মধ্যেই পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করবেন।
* আর সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবেন।
এদিকে প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘প্যারোলে মুক্তি হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী সিদ্ধান্তের একটি বিষয়। প্যারোলে আদালতের কোন বিবেচ্য কোন বিষয় নয়।’
অন্যদিকে প্যারোল বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেকেনো সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্যারোলে মুক্তি দিতে পারেন।’
সম্প্রতি প্যারোল নিয়ে নানা গুঞ্জন ও বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বিগত কয়েকদিন বিভিন্ন মিডিয়া এবং সংবাদ পত্রে প্যারোলে সম্বন্ধে বিভিন্ন রকম বক্তব্য এসেছে। তাই আমি মনে করি প্যারোল সম্বন্ধে সবারই ধারণা থাকা উচিৎ।’
প্যারোলের বিধান ব্যাখ্যা করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকা এ আইনজীবী বলেন, ‘২০১৬ সালের ১ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নীতিমালা করা হয় প্যারোলের ব্যাপারে। এই নীতিমালা অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত আসামি বা হাজতি আসামি, যারা সাজাপ্রাপ্ত না হয়েও কারাভোগ করছেন, সবাই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্যারোলে পেতে পারেন। মৃত্যু, জানাজায় অংশ নেওয়া ইত্যাদি ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেকেনো সাজাপ্রাপ্ত আসামি বা হাজতি আসামিকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্যারোলে দিতে পারেন। এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নাই এবং দিন, তারিখও ঠিক নাই।যতদিন সরকার মনে করবে ততদিন প্যারোল দিতে পারে।’
খন্দকার মাহবুব আরো বলেন, ‘আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তিনি কিন্তু প্যারোলে গিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করে এসেছেন। আর আমাদের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্যারোলে বিদেশ গিয়েই চিকিৎসা নিয়েছেন।’