পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায় বাংলাদেশ
পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের এক মাস আগে বাংলাদেশকে নোটিশ দিতে ভারতের প্রতি অনুরোধ
ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আগামী ৩ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায় বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
একই সাথে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের অন্তত এক মাস আগে বাংলাদেশকে নোটিশ দিতে ভারতের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের আগে অন্তত এক মাসের নোটিশ দিতে ভারতের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ৩ বছরের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায় বাংলাদেশ।
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে তেমন কোনো কথা হয়নি। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই একই সময়ে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। প্রতি বছর আমাদের ঘাটতি থাকে ৮ থেকে ৯ লাখ টন। ভারত গত বছর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল, এবারও বন্ধ করেছে। গত বছর বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকায় ইঠেছিল। তখন ভারতেও দাম উঠেছিল ১৫০ রুপি। যেটা ভারতের জন্য বিরল ঘটনা।
তিনি বলেন, ভারত যেকোনো সময় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে। তাই আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে। গতবছর থেকেই চেষ্টা চলছে, যাতে ভারত বা কোনো দেশের ওপরে নিত্যপণ্যের নির্ভরশীল হতে না হয় আমাদের।
মন্ত্রী বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়া একই রকম। ভারতের যে অঞ্চল থেকে পেঁয়াজ আসে, সে অঞ্চলে বৃষ্টির জন্য উৎপাদনে ক্ষতি হয়েছে। ভারতের বন্যা আমাদের বন্যা একই রকম। তাই আমরা ভারতের ওপর বেশি নির্ভরশীল হতে চাই না, বিশেষ করে পেঁয়াজের জন্য। তারপরও যখন আমরা সুবিধাজনক দামে পাই, আমরা নিই।
আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে টিপু মুনশি বলেন, ভারত তাদের লোককে না খাইয়ে আমাদের দেবে না। তারপরও ভারতের কাছে অনুরোধ, রপ্তানি বন্ধের নোটিশ যদি এক মাস আগে পাই, তাহলে আমরা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করার সুযোগটা পাই। হঠাৎ বন্ধ করে দেয়াটা সমস্যা তৈরি করে। তাই রাষ্ট্রদূতের কাছে অনুরোধ করেছি, রপ্তানি বন্ধের এক মাস আগে যেন আমাদের নোটিশ দেয়া হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর ৮ থেকে ৯ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি থাকে। সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ঘাটতি দেখা দেয়। ভারতের পেঁয়াজের বড় অংশ এ সময় আসে। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় আমরা মিসর, তুরস্ক, ইরান, চীন, মিয়ানমার থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এতে আমদানি খরচ পড়ে ৪৫ টাকা কেজি। এরপর ৫ থেকে ৬ টাকা ভ্যাট রয়েছে। ফলে পাইকারিতে দাম পড়ে ৫০ টাকা। তাই ৬০ থেকে ৬৫ টাকার নিচে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারজাত করা যাবে না। তবে চেষ্টা করছি ৬০ টাকার নিচে রাখতে, যাতে ন্যূনতম লাভ করা যায়। কিন্তু আমদানি করা পেঁয়াজ কোনো অবস্থাতে ৫৫ টাকার নিচে খরচ ফেলা যাবে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দাম বাড়ায় কৃষকরা আরও বেশি উৎপাদনে উৎসাহী হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারবো আমরা। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ কীভাবে উৎপাদন করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে নতুন এই পেঁয়াজ আনতে পারলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।