চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পুরস্কার হয়ে ফিরলেন কবি আবুল হাসান

প্রথম পুরস্কার খুলনার অনুপম মন্ডলের পান্ডুলিপি ‘অহম ও অশ্রুমঞ্জুরী’

‘যেখানেই যাই আমি, সেখানেই রাত!’ ‘অপরিচিতি’র কবি আবুল হাসান। ১৯৭৫ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার নামে কবিতা পুরস্কার প্রবর্তিত হয়েছিল। ‘তবক দেওয়া পান’ কাব্যগ্রন্থের জন্য আবুল হাসান পুরস্কার পেয়েছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। আয়োজক ছিলেন তার ভগ্নিপতি। পরে ভগ্নিপতি খুলনায় স্থায়ী হয়ে যাওয়ায় পুরস্কার প্রথাটি আর ধারাবাহিক হয়নি। স্বল্প আয়ুর জীবনে বাংলা কবিতার আকাশে ধুমকেতুর মত জ্বলে ওঠা আবুল হাসান পুরস্কার হয়ে ফিরে এসেছেন ৪৩ বছর পর। তারুণ্যের সাহিত্যের অনুপ্রেরণা হয়ে। কবি আবুল হাসানের পরিবারের সম্মতিতে তার নামে নতুন করে পুরস্কার প্রবর্তন করেছে অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা ‘পরস্পর’ এবং প্রকাশনা সংস্থা ‘অগ্রদূত অ্যান্ড কোম্পানি’।

‘আবুল হাসান সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭’  সাহিত্য প্রণোদনার ঘোষণা হয়েছে শুক্রবার দুপুরে। রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এ ঘোষণা দেন পুরস্কার কমিটির আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ। পুরস্কারের অর্থমূল্য এক লক্ষ এক হাজার একশ এক টাকা।

বাংলাদেশের খুলনার তরুণ কবি ‘অহম ও অশ্রুমঞ্জুরী’ কাব্যগ্রন্থের পান্ডুলিপির জন্য প্রবর্তনের উদ্বোধনী বছরে পুরস্কারে মনোনীত হয়েছেন। আগামী ৩০ মার্চ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীর হাতে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশনাসহ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পুরস্কার কমিটির আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের কবিতার সবচেয়ে শক্তিশালী কবি ছিলেন আবুল হাসান। ভিষণ অস্থিরচিত্ত। যার সঙ্গে আমার অসাধারণ সব দিনরাত্রি কেটেছে। তার নামে এই সাহিত্য পুরস্কার ফিরিয়ে এনে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করেছে আয়োজকরা।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ, ভারত, কানাডা, ব্রিটেন ও অষ্ট্রেলিয়ার বাংলা ভাষার সাহিত্য চর্চাকারীদের মাঝ থেকে ১২৯ টি পান্ডুলিপি জমা পড়ে। এতে অধিকাংশ ছিল কবিতার পান্ডুলিপি। তবে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, অনুবাদের পান্ডুলিপিও ছিল। তিন ধাপে বাছাইয়ের পর চার সদস্যের জুরিবোর্ড ৬টি পান্ডুলিপি চূড়ান্ত হয় পুরস্কারের জন্য। যার মধ্যে ৪ টি কবিতার এবং ২টি গল্পের পান্ডুলিপি ছিল। ৬ জনের মধ্যে ২ জন ভারতীয় কবির পান্ডুলিপিও ছিল। সবশেষে চূড়ান্ত হয় কবি অনুপম মন্ডলের কবিতার পান্ডুলিপি ‘অহম ও অশ্রুমঞ্জুরী’।

কবি আবুল হাসানের ছোট বোনের স্বামী কবি হাফিজুর রহমান বলেন, আমি তার কবিতার অন্ধভক্ত ছিলাম। তার বোনের স্বামী হয়েছি পরে। কিন্তু তারও আগে থেকে তার কবিতার ভক্ত হয়েই পরিচয় ছিল। জুরিবোর্ডের সদস্য কবি রাজু আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের জুরি বোর্ডের কাছে লেখকের নামহীন পান্ডুলিপি জমা পড়েছিল। সেখান থেকে গুণাগুণ বিচার করে সেবচেয়ে যোগ্যকে বেছে নিয়েছি আমরা চার বিচারক। নামহীন পান্ডুলিপির কারণে তদবির বা পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শনের কোন সুযোগ ছিলনা। অগ্রদূত এর প্রকাশক মনি মহম্মদ রুহুল আমিন বলেন, আমরা আগামী মাসে বইটি প্রকাশ করে লেখকের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার অপেক্ষায় আছি। আবুল হাসান সাহিত্য পুরষ্কার কমিটির সমন্বয়ক এবং পরস্পর এর সম্পাদক সোহেল হাসান গালিব সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জুরি বোর্ডের সদস্য চঞ্চল আশরাফ, ষড়শ্বৈর্য মুহম্মদ, তারিক টুকু প্রমুখ।

অনুর্ধ্ব ৩৫ বছর বয়সি বয়ঃসীমার বাংলাভাষি লেখকদের প্রণোদনাতেই এই আয়োজন। মূলত তরুণদের সাহিত্যে উৎসাহ প্রদানেই এই বয়সসীমার ভাবনা বলে জানান আয়োজকরা। ২০১৫ সালে অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে যাত্রা শুরু করে পরস্পর। ৬ বন্ধুর সাহিত্য প্রয়াস এই পরস্পর গত বছরের আগস্টে পুরস্কার চিন্তার সুত্রপাত ঘটে। সেপ্টেম্বরে পান্ডুলিপি আহ্বান করা হয়।