চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ: শিবলী রুবাইয়াত

দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এর আগে সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি একাধিকবার বাণিজ্য অনুষদের ডীন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য। কমিউনিটি ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের আহবায়ক।

এছাড়া তিনি সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসবিসিসিআই) এর সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই অ্যাসোসিরেশন অব ব্যাংকিং (ডুয়ার) এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ই-কমার্স ও ই-ব্যাংকিং এবং মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বইয়ের লেখক তিনি। ১৬টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং পাঁচটি আন্তর্জাতিক গবেষণা মূলক প্রবন্ধ রয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নেতৃত্ব বদলের পর থেকেই দেশের শেয়ারবাজারে আবারও নতুন নতুন করে চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরাও বাজারমুখী হতে শুরু করেছেন।

পুঁজিবাজার এখন একটা জায়গাতে চলে এসেছে। বিনিয়োগকারী সহ সবার মধ্যে একটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এটার পিছনে আপনার অবদান অপরিসীম। পুঁজিবাজার আপডাউনটা নরমাল না। পুঁজিবাজার কেন পড়ছে। এই সূচক হওয়ার কথা নয়, আরও বেশি হওয়ার কথা। বিনিয়োগকারীদের ধারণা কেন এমন হচ্ছে?

এ প্রশ্নের উত্তরে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমি তো মনে করি বিনিয়োগকারীদের ধারণা পজেটিভ। তাদের আস্থার কোনো অভাব নেই। বিশ্বাস, আস্থা এবং তাদের সঞ্চয় নিয়েই এসেছেন। এখন ফাউন্ডেশনটা খুব স্ট্রং। কারণ এখানে পার্টিকুলার কোনো সেগমেন্টের একক কৃতিত্ব নেই বা একক কন্ট্রিবিউশন নেই। ২০১০ সালের আগে আমরা একটা বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম। সেই সময় আমাদের পার্টিকুলার একটা সেক্টরের বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। ওই সেক্টরটা যখন রেগুলেটর বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। তখনই আমাদের একটা ধস নেমে যায় রেগুলেটরে। এখন পরিস্থিতি ডিফারেন্ট। এখন পার্টিকুলার কারোর ওপর আমরা নির্ভরশীল না। এখন সমিষ্টিগত শক্তিতে পুঁজিবাজার হচ্ছে। আর সূচকের ব্যাপারে আমরা বলি, সূচক ওঠানামা করনোর কাজ আমাদের না। এটা আমরা অবজার্ভ করি। এটা বিনিয়োগের ওপর ডিপেন্ড করবে। কেউ বেশি বিক্রি করলে একরকম হবে, কেউ বেশি কিনলে আবার আরেক রকম হবে। প্রাইজের ওপর এটা ভেরি করে। অনেক বিষয় নিয়ে সূচক উঠানামা করে।

তবে অনেকে বলেন, এটা এখন ওভার ভ্যালুড হয়ে গেছে সে ব্যাপারে আমার দ্বিমত আছে। কী ব্যাপারে ওভার ভ্যালুড সেটা আমাকে বলতে হবে বা বুঝিয়ে দিতে হবে। কেউ যদি বুঝিয়ে দিতে পারে তাহলে মেনে নেব। কিন্তু আমি মনে করি না। ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ সালের ওই সময় আমাদের ৬ হাজারেরও বেশি একটিভ ইন্ডাস্ট্রি ছিল। গত ছয় বছরে জিডিপির ডাবল হয়েছে। জিডিপির সাইজ যদি বড় হয়ে যায় পাবলিকের পারসেসিং পাওয়ার বাড়ে, ডিসপোসিবল ইনকাম বাড়ে, সঞ্চয় বাড়ে বা সঞ্চয়ের জন্য তারা যদি অলটারনেটিভ কোনো ভালো জায়গায় আসার চেষ্টা করে। এই জিনিসগুলো কিন্তু ইমপেক্ট মার্কেটে থাকবে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো এবার ভালো ডিভিডেন্ড দিচ্ছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে দেখা যাচ্ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রিটার্ন পাচ্ছে সবাই। মাকের্ট ভালো থাকলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো খুব ভালো করছে। যারা সঞ্চয়ের ওপর নির্ভরশীল তারা এমনেতেই মিউচ্যুয়াল ফান্ডে আসবে। আমাদের পাশ্ববর্তী ভারতেই দেখেন তারা কিন্তু মিউচ্যুয়াল ফান্ডে টাকা রাখা সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করে। ব্যাংক যদি হাই রেটে এফডিআরের ইন্টারেস্ট দেওয়া শুরু করে তাহলে সেটার ইমপেক্ট আসে লোনের ইন্টারেস্টের ওপর। লোনের ইনটারেস্টের ইমপেক্ট আসলে সেটা ইমপেক্ট হয় ইন্ডাস্ট্রি ট্রেড অব বিজনেসের ওপর। তখন কষ্ট অব প্রোডাকশন বেড়ে যায়। কষ্ট অব প্রোডাকশন বেড়ে গেলে লোন কমপেটেটিভ হয়ে যাবে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে। আমাদেরকে সব সময় দেখতে হবে যে লোনটা এক্সসেন্সিভ না হয়। তাহলে ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়ে যাবে। প্রতিটি ব্যাংক ভালো করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের মন্ত্রনালয়, মন্ত্রীর নেতৃত্বে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যেভাবে উনারা লোনকে সিঙ্গেল ডিজিটে এনেছে। উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঠিক প্রদক্ষেপ এবং ন্যাশনাল বোর্ড অফ রেমিট্যাস টেক্স কমানোর কারণে ব্যবসায়ীরা এখন ভালো ডিভিডেন্ড দিতে পারছে। তারা ভালো লাভ ক্লিয়ার করতে পারছে। তারা প্রফিট যত বেশি করবে টেক্স তত বেশি আসবে আরেকদিক দিয়ে। আবার আরেক দিক দিয়ে ডিভিডেন্ড পাচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলো। সব মিলিয়ে আমরা সত্যিকারের একটা মধ্য আয়ের দেশ থেকে ডেভেলপ কান্ট্রিতে রূপান্তিত হবো। এগুলোই হচ্ছে এটার প্রাথমিক সিগন্যাল যে আমরা আসলে ওই দিকে যাচ্ছি। আমি ধন্যবাদ দেই অন্যান্য রেগুলেটারদের তারা সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ইকোনমিগুলো সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

আপনার পদক্ষেপ গুলো মধ্যে একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে ওটিসি মার্কেট। মৃত প্রায় কোম্পানিগুলোকে মেইন বোর্ডে নিয়ে আসা। এতে কিন্তু অনেক বিনিয়োগকারী উপকৃত হচ্ছেন বা হবেন। ওটিসি মার্কেটটা আলোচনায় চলে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নড়েচড়ে বসেছেন। এই পদক্ষেপটা আপনি কী চিন্তা করে নিলেন?

এ প্রসঙ্গে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমি মনে করি এটা যদি আমার টাকা হতো। যে সব কোম্পানিগুলো ওটিসিতে আছে। সেখানে যদি আমার সঞ্চয় থাকতো। আমার কষ্টের সঞ্চয়, আমার কষ্টের অনেক পুঁজি। সেটা যদি এভাবে বছরের পর বছর একটা কোম্পানি নিয়ে আমাকে কোনো রিটার্নও দেয় না, আমার প্রিন্সিপ্যালও দেয় না, এরকম একটা পরিস্থিতিতে আমার কেমন লাগতো। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারী এতো গুলো ওটিসি কোম্পানিতে আমাদের বেসিক, এবং আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কথায় ওটিসিতে বিনিয়োগ করেছিল। প্রায় একশোর কাছাকাছি ওটিসির বিভিন্ন সমস্যার কারণে বিনিয়োগকারীরা আটকে বসেছে। বিনিয়োগকারীর কোনো দোষ নেই। তার টাকাটা সে পাচ্ছে না। রিটার্নও পাচ্ছে না। আমরা এজন্য ওই দিকে মনোযোগ দিয়েছি। বিনিয়োগকারী না থাকলে বাজেট থাকবে না। বিনিয়োগকারীকেই যদি আমরা সুস্থ না রাখতে পারি তাহলে বাজার সুস্থ থাকবে কী ভাবে? সেজন্য ওটিসি থেকে দেখে দেখে আমরা পরিদর্শনে পাঠাচ্ছি। কোম্পানির কী অবস্থা দেখছি। দেখে তাদেরকে আমাদের গভর্নিং এ নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। ওটিসিতে প্রপার গভর্নেন্স ছিল না। অনেকেই জমি-জমা, ঘর-বাড়ি বিক্রি করে বিদেশে চলে গেছেন। সেখানে স্থায়ী হয়েছেন। অনেক কোম্পানি আছে লোকই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরকম জিনিসগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। তিন ভাগে ভাগ করে কাউকে কাউকে আমরা উনাদের কারেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে নার্সিং করছি, সাহায্য করছি। আবার কাউকে কাউকে আমরা বোর্ড চেঞ্জ করে শক্তিশালী অ্যাডভাইজার দিয়ে তাদেরকে ম্যানেজমেন্টে হেল্প করছি, প্রোডাকশনের লোক দিয়ে সঠিক ভাবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। আরেকদিকে যাদেরকে খুঁজে পাচ্ছি না, যারা মৃতপ্রায় তাদেরকে কীভাবে এক্সজিট পলিসি দিয়ে আমাদের বিনিয়োগকারীদের কীভাবে রক্ষা করা যায় সেটারও কাজ করছি। এই তিনটা ভাগ করে আমরা ওটিসি জেডকে যতটা সম্ভব একটা সুস্থ অবস্থা নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। সব কিছু কিন্তু মেইন বোর্ডে আসবে না। ওটিসির ২০-৩০ বছরের যে সব পুরনো কোম্পানি আছে, এ গুলোকে আমাদের স্মল বোর্ডে আনতে হবে।

একটা কোম্পানি আইপিওতে লিস্টিং হওয়ার পর দেখছি স্মল ক্যাটাগরি থেকে হঠাৎ করে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে চলে যেতে হয়। এ সমস্যাগুলোর সমন্বয়ের জন্য আপনারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

তিনি বলেন, এটার প্রধান কারণ হচ্ছে কিছু কিছু কোম্পানি মানুষকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড ব্যাক দিত না। জন্মের প্রথম থেকে দিচ্ছে না। তারা মানুষকে বা অন্যদেরকে বোনাস শেয়ার দিতে থাকে। তার জন্য হয় কি তাদের পেইড অব ক্যাপিটাল বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে চলে যায় তারা ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার সক্ষমতা হারায় ফেলে। ধরুন, আপনি ৫০ কোটি টাকার পেইড অব ক্যাপিটাল নিয়ে আইপিওতে গেলেন। মিনিমাম ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিতে না পারেন, তাহলে আপনি জেড ক্যাটাগরিতে চলে যাবেন। ১০ শতাংশ দিতে হলে আপনার ৫ কোটি টাকা মিনিমাম থাকতে হবে ডিভিডেন্ডের সক্ষমতা। উনারা ৩০০ কোটিকে বানায় ফেলে ২৫০ কোটি, ৩০০ কোটি। রাইট শেয়ার দিচ্ছে, বোনাস শেয়ার দিচ্ছে, কিন্তু ডিভিডেন্ডটা দেয় না। এটা করতে করতে এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে কিছু কোম্পানি এখন ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। আমরা ওই জায়গাটায় আমরা মনোযোগ দিয়েছি।

কোম্পানির এরকম অবস্থায় পেইড অব ক্যাপিটাল এত বেশি যে তার প্রফিট শেয়ার করার মতো সক্ষম না। তাদের দিকে আমাদের মনোযোগ। মানুষ যদি রিটার্ন না পায় তার ইনভেস্টমেন্টের তাহলে তো মানুষ মার্কেটে আসবে না। আমরা এখন কাজ করছি, যিনি বিনিয়োগ করবেন, উনি যেনো ভালো রিটার্ন পায় সেটা নিশ্চিত করার জন্য। আগে যেগুলো হয়েছে সেগুলো এখন ঠিক করার চেষ্টা করছি। নতুন যারা আসবে, তাদেরকে আমরা কতটা সাসটেন্টনাবল, কতটা সক্ষম, তা দেখে দেখে আমরা আইপিও দিচ্ছি।

মার্কেট মেকারের জায়গাটাতে আমাদের পুঁজিবাজার এখন সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি এবং মার্কেট মেকার আমাদের মার্কেটে ওইভাবে সক্রিয় না। সেই জায়গাতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পদক্ষেপ জানতে চাই?

এ প্রশ্নের উত্তরে শিবলী রুবাইয়ত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা মার্কেট মেকারদেরকে অনুরোধ করছি, লাইসেন্স নেওয়ার জন্য। আমরা খুব শিগগিরই মার্কেট মেকার লাইসেন্স দিব। কারণ আমরা অনেক আগে থেকেই খালি বাজারে গ্যাম্বলিং এর কথা শুনতাম। উনারা গ্যাম্বলিং করে, একটা গ্রুপ গ্যাম্বলিং করে। আমরা আসলে দেখলাম মার্কেট মেকার থাকলে জিনিস অনেক কমে যাবে। সুতরাং আমরা অনুরোধ করছি মার্কেট মেকার লাইসেন্স নেওয়ার জন্য। ইতোমধ্যে আমাদের কাছে কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে থেকে দুই-তিনটা বাতিল হয়ে গেছে। বাকি দুইটা আমরা সিরিয়াসলি প্রসেস করছি। আমাদের কাছে আরও কিছু ভালো কোম্পানির আসার পথে। ফরেন ইনভেস্টমেন্টদের একটা কমপ্লেইনের জায়গা হচ্ছে আমাদের মার্কেটে ডেট কম বা লিস্টিং যে কোম্পানিগুলো আছে তার সংখ্যাও কম। ইনভেস্টমেন্টের জায়গায় তারা ভালো কোম্পানি খুঁজে পায় না। এ জায়গাটাতে আপনি কী বলবেন?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা চাই ভালো ভালো কোম্পানি আসুক এবং ভালো ভালো কোম্পানি আসছে। অডিট হয়ে গেলে আমরা আশা করব সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আরও আবেদন পড়বে। কিছু ভালো ভালো কোম্পানিগুলো আসবে। আমরা চাই ফন্ট্রিয়ার মার্কেট থেকে ইর্মাজিং মার্কেটে চলে যেতে। সে জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কাছে আবেদন আসলেই কিন্তু আইপিও দেই না। তাকে সাসটেইনাবল হতে হবে। ভালো হিস্ট্রি থাকতে হবে বিজনেস ম্যানেজমেন্টে। তাহলে জনগণকে বিনিয়োগ করতে কেন আনব। সেজন্য আমরা অনেক আইপিও দিচ্ছি না। তবে দেখে দেখে দিচ্ছি। কিছু কোম্পানি আছে যারা এখন গর্ভন্সের মধ্যে মধ্যে থাকতে চায়। যারা বড় হয়ে গেছে তারাও নেক্সট জেনারেশনের জন্য কর্পোরেট গভর্ন্সের মধ্যে চলে আসতে চায়। যাতে কোম্পানিটা সাসটেইন করে। সেই দিক থেকে আমার অনেক বড় বড় কোম্পানি এবং মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে যারা ভালো করছেন কিন্তু আইপিওতে আসেন নাই। তারাও এখন আইপিওতে আসার পথে আছে।রোড শোর ফিডব্যাক কেমন পাচ্ছেন? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গুলো কী?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, রোড শোতে আমাদের দেশের অর্থনীতির অবস্থা তুলে ধরেছি। সবকিছু জানার পর বিদেশীরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন প্রত্যেক দিন মেইল আসে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু মিউচ্যুায়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চায়। সাত ট্রিলিয়ন, তিন ট্রিলিয়ন ডলার পরিমান বিনিয়োগের সক্ষমতার ইনভেস্টরদের সঙ্গে আলাদা আলাদা মিটিং হয়েছে। কোথায় ইনভেস্ট করা যায় এমন ভালো জায়গা খুঁজছে তারা। তাদের দেশে বিনিয়োগ করে তারা তেমন কোনো রিটার্ন পাচ্ছে না। এই রেটিংয়ে যেসব দেশ রয়েছে, সে সব দেশেই তারা বিনিয়োগ করবে।

বাংলাদেশে যে ভবিষ্যৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি ও দেশের ক্যাপিটাল মার্কেটে রোল প্লে করা উচিৎ বলে মনে করি। ব্যাংকিং খাত থেকে প্রচুর ঋণ নিয়ে মানুষ বড় বড় প্রকল্পে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করছে। সামনের দিনগুলোতে আমাদের বিরাট ভূমিকা রাখতে হবে।

বাংলাদেশের প্রতি বিদেশীদের একটা নেগেটিভ ভাবমূর্তি ছিল উল্লেখ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আগে তারা আমাদের নিয়ে নেগেটিভ ভাবতো। কিন্তু চেষ্টা করছি দেশের সঠিক অবস্থান তাদের কাছে তুলে ধরতে। সে জন্যই দুবাই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের তথ্য দেখে অবাক হয়েছে। জানতে চেয়ে আমরা ঠিক বলছি কি না, আমরা বলছি এগুলো সব সঠিক। কোথাও তোমাদের সন্দেহ থাকলে গুগল সার্চ করে দেখতে পারো। তখন তারা বিশ্বাস করা শুরু করলো। বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল হবে দুবাই, লন্ডন, নিউইয়র্ক, হংকং ও সিঙ্গাপুরের মতো জায়গায় যদি বাংলাদেশের সঠিক তথ্য মানুষের কাছে, বিনিয়োগকারীর কাছে, বিদেশের সংবাদপত্র বা বিদেশের ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরতে পারি তাহলে বাংলাদেশের সম্পর্কে যে নেতিবাচক মনোভাব ছিল সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। আমাদেরকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখবে। তিনি আরও বলেন, তাদেরকে ব্যাংক, বীমা ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে বিনিয়োগের কথা বলেছি। কিন্তু সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন করতে বলেনি। এফডিআর এর চেয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মুনাফা বেশি। এটা আগেও বলেছি এখনও বলছি। তবে এর মানে এই না যে আপনি সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে শেয়ার কেনেন। ব্যাংক খাতে মন্দ ঋণ কমেছে এবার ভালো মুনাফা দেবে প্রত্যাশা জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংকের মুনাফা দেওয়ার সময় হয়েছে। তাদের হাতে ভালো তারল্য আছে। তারাও ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে।

ডিজিটাল বুথ করা হচ্ছে। সেই জায়গাতে এনআরবি যারা আছেন বা ফরেন ইনভেস্টমেন্টে যারা আছেন, তারা কীভাবে এটা থেকে উপকৃত হবেন?

এ প্রসঙ্গে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ডিজিটাল বুথের মাধ্যমে অপিশিয়ালি ওই দেশের নিয়ম কানুন মেনে কাজটা করবো, এখন দেখছি আমরা এটাকে আইটির মাধ্যমে অনেক সহজতর করে ফেলা যায়। বাংলাদেশে সফটওয়্যার দিয়ে বিদেশ থেকে কাজ করা যায়। আমাদের যে জিনিসটা দরকার রেমিট্যান্স ঠিক হবে বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। এই জিনিসটা মোটামুটি হয়ে গেছে। যিনি নতুন ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তিনি একজন আইটি বিশেষজ্ঞ। আবার এমবিএ এর ব্যাক গ্রাউন্ডও আছে। সুতরাং আমরা উনার ব্যাপারে আশাবাদী। বিএসইসি সাথে সাথে সিএসসিও ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে আপনারা বড় ধরনের একটা পরিবর্তন দেখতে পারবেন। সারা পৃথিবীর যে কোনো জায়গা থেকে আমাদের ঢাকায় পেইড এন্ড মানি এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন।

বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে ট্রেড করতে পারবে? এ জায়গা থেকে জানতে চাই, আমাদের দেশে বসেই কিন্তু দুইটা স্টক এক্সজেঞ্জের দায়িত্বে রেগুলেটারের চাইতে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো এখন ডিজিটাইজেশনের জাগাতে সম্পন্ন হতে পারেনি সেই জায়গাতে আসলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ভূমিকা কী হতে পারে?

এ প্রশ্নের উত্তরে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, আমরা পুরনো কথায় যেতে চাচ্ছি না। আমরা আগামী ৬ মাসের মধ্যে আপনাদের ডিজিটাল সক্ষমতা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। চিটাগং এক্সচেঞ্জ এমনিতেই ভালো আছে, সক্ষমতা আছে। এই দুইটা এক্সচেঞ্জই আইটিতে অনেক পরিবর্তন আসবে। এখানে ম্যাসিভ পরিবর্তন দেখতে পারবেন। তবে এটার মধ্যে পিবিআই কানেকটিভেটি লাগছে ওএমএস মতো ডেভেল্পমেন্ট করতে হচ্ছে। নতুন যাদেরকে ট্রেড দেওয়া হচ্ছে তাদের নিজস্ব ওয়েমেস ইমেজ নিতে হচ্ছে। এখানে খালি স্টক এক্সচেঞ্জ না। ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংক তাদেরও সক্ষমতা বাড়াচ্ছি। আশা করি সম্মিলিত শক্তি আমাদের সামনের দিন গুলোতে আমাদের আইটি ব্যাক বন্ড অনেক শক্তিশালী করবে।

সরকারি কোম্পানিগুলোকে লিস্টিং এ আনার জন্য আপনারা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কী?

শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, সরকারি পর্যায়ে একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। আমার মনে হয় করোনার জন্য উনারা বোধহয় একটু স্লো। এ কোম্পানিগুলোকে ভ্যালুয়েশন না করে আনা যাবে না। তবে সরকারি কোম্পানিগুলোকে যদি আনা যেত তাহলে সরকারের খুবই উপকার হতো এবং সরকারের যে চাপ সেটা অনেক কমে যেত। সরকারের রাজস্বে অনেক টাকা চলে আসতো। আমি মনে করি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ উদ্যোগে, নিজ স্বার্থেই তাড়াতাড়ি ভ্যালুয়েশন করে আমাদের মার্কেটে চলে আসবে। এসে সরকারের ওপর যে চাপটা তারা দিচ্ছে বা রাজস্বের চাপ থেকে তারা সরকারকে কিছু স্বস্তি দিবেন এবং প্রপার কিছু বাজারের প্রাইজ পেলে কোম্পানিগুলোর মধ্যে সাধারণ মানুষও অংশীদার হয়ে যাবে। সরকারের কাছে বিপুল অংকের ইনভেস্টমেন্টের টাকা ফেরত আসবে। এটা আসলে সরকারের জন্য খুবই ভালো। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলো আশা করব নিজের উদ্যোগে আমাদের মার্কেটে চলে আসতে।

মার্কেটের ট্রেড বেড়ে গেছে বা ভলিউম অনেক বেশি। ৪০ পয়সা রাখছে বাইসেলের ক্ষেত্রে। সেটা কমানোর ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের একটা আরজি আছে। যেহেতু মাকের্টটা বড় হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে কোনো উদ্যোগ আছে কী না?

শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছেও অনুরোধ এসেছে দেখার জন্য, বিবেচনার জন্য ট্রেড বেড়েছে। ইনকামও বেড়েছে। একটু সময় হলেই এ ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে এগোব। আসলে এই ব্রোকারিজ হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকসহ যারা এই ব্যবসায় আছেন, তারা কিন্তু অনেক বছর লস করেছে। তাদের এমন অবস্থাই হয়েছিল যে তারা অনেকের সেলারি দিতে পারতো না, ভাড়া দিতে পারতো না, অনেকের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, অনেকের চাকরি চলে গেছে। এখন তারা একটু সুস্থ হচ্ছে। ঋণ শোধ করছে। আমরা তাদের সময় দিতে চাই। ইন্টারমিডিয়েটারি যদি সুস্থ না থাকে, ব্যবসা লাভ না করে তারাও কিন্তু সিস্টেম করবে না। সময় দিতে চাই। অনেক লস করেছেন। উনারা খারাপ সময় গেছে। একটু সুস্থ হোক। আমরা দুই পক্ষের ব্যাপারটা নিয়ে বসব।

পুঁজিবাজারে আশার সঞ্চার শুরু হয়েছে। মানুষ এখন নিশ্চিত মনে বিনিয়োগ করছে। বিনিয়োগকারীদের একটু টেনশন থাকে মার্কেট বোধহয় কারেকশন হবে। কারেকশন আসলে কী? মার্কেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত কী না? এই চিন্তা থেকে বিনিয়োগকারীরা কীভাবে বের হয়ে আসবে?

এ প্রশ্নের উত্তরে শিবলী-রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ইনডেক্স উঠা-নামা করানো রেগুলেটরের কাজ না। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, এটা উঠা নামা করবেই। আপনারা যখন বেশি দামে কিনবেন, ইনডেক্স ভালো হবে। আবার আপনি যখন প্রফিট নিয়ে বের হয়ে যাবেন, সেটা কমবে। আবার বিক্রি করা শুরু করলে কিছুটা কমবে। এটা আপনাদের সবার সামষ্টিক একটা সারাদিনের একটিভেটিজের ফল ইনডেক্সে দেখা যায়। ইনডেক্স ভালোভাবে দিচ্ছে। কারেকশন ভালো হলে মার্কেট ভালো হয়। আবার একটু দাম কমলে অনেকে কিনতে আসে। এখন কিন্তু এরকম না সবাই বিক্রি করা শুরু করে। কেউ কম দামে বিক্রি করলে আরেকজন কিন্তু কিনে ফেলে। সুতরাং মার্কেটে বায়ার পাওয়া না যেত তাহলে পেনিক পাওয়ার ব্যাপার ছিল।

কেউ কম দামে বিক্রি করছে বা মার্কেট একক ভাবে বিক্রি করছে। বিক্রি করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। মার্কেটে তারটা কেনার লোক আছে। তার মানে বুঝা যাচ্ছে, আমি ফল পেয়ে কেন বিক্রি করে চলে যাবো। আমার টা তো আরেকজন কিনে ফেলছে। কেন কিনবে নিশ্চয়ই লাভের আশা আছে। এ জন্য বুঝতে হবে যে ভয় না পেয়ে কিছু না করে বুদ্ধি বিবেচনা জ্ঞান ব্যবহার করে নিজের বিনিয়োগকে সমৃদ্ধ করতে হবে। মার্কেটে ইনডেক্স এমন পর্যায়ে আছে বেশি লস থাকার কারোর কথা না। সবাই এখন সুস্থ মার্কেটে আছে। প্রফিট হচ্ছে। সবাই ভালোর দিকে। লস করার মানুষের সংখ্যা খুবই কম। এই মার্কেটে ভালো হওয়া ছাড়া খারাপ কিছু দেখি না। এত বড় ইকোনমিকে ভয় পেলে চলবে না। আমাদের অনেক সাহসী হতে হবে। ইনডেক্স আরও ওপরে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। বিনিয়োগ যেভাবে আসছে তাতে হয়তো ডিমান্ড আরো বাড়বে। সাপ্লাই দেওয়ার জন্য আমরা গোছাচ্ছি যাতে সুন্দর সুস্থ একটা মার্কেট করতে পারব। ফন্ট্রিয়ার মার্কেটে অনেকদিন ছিলাম। এখন আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে মার্চেন্ট মার্কেটে যাওয়ার জন্য।

পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য একটা কমিশন গঠন করা হয়েছে। একটা একটিভ টিমের দখলে তহবিলটা রাখা হয়েছে। আপনার কাছে জানতে চাই এই তহবিলের উদ্দেশ্যটা কী? এ তহবিল থেকে বিনিয়োগকারীরা কীভাবে উপকৃত হবেন?

শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, বছরের পর বছর এ টাকাটা পড়েছিল। যার টাকা সে ক্লেম করে নাই। তাকে দেওয়াও হয়নি। এখন কার দোষ আমরা সেটা জানি না। কিন্তু এটা একটা অন্যের ডিভিডেন্ডের টাকা কোম্পানি গুলোর কাছে আছে অথবা অন্যের বোনাস শেয়ার, রাইট শেয়ার, বিভিন্ন শেয়ার অন্যের কাছে পড়েছিল। আমরা বলেছি এটা এখন আর এখানে সেখানে বিভিন্ন জায়গায় পরে থাকতে পারবে না। একটা নির্দিষ্ট গভের্নেন্স বোর্ডের কাছে থাকবে। তারা এটাকে ম্যানেজ করছে। যারা ডিভিডেন্ড দিতে না পারে, ডিস্ট্রিবিউশন করতে না পারে আমাদের সরকারি কমিটির দায়িত্বে দিয়ে দেয়। তাতে হবে কী প্রয়োজনে পড়ে থাকা ফান্ডটা জাতীয় স্বার্থে কোথাও যদি কখনও বিনিয়োগ করে মার্কেট স্ট্যাবল রাখতে পারব। আবার কাউকে আমরা বিভিন্নভাবে লোন দিতে পারব।

তার জন্য হাই একটা গভর্নিং বোর্ড করা হয়েছে। তার অধীনে একটা স্ট্রং টেকনিক্যাল ফোর্স নিয়োগ পাবে। যারা এই ফান্ডটা তদারকি করবে। ওই টেকনিক্যাল ফোর্সের দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের স্ট্রাবিলাইজেশন গভর্নিং বডি ওদের সবাইকে আমরা দেখব। বড় ধরনের ফান্ড এবং স্টক শেয়ার সবই থাকবে। এগুলোকে নিয়ে আমরা চেষ্টা করব মার্কেট স্ট্যাবল রাখার। আর কেউ যদি কোনো অভিযোগ করে সাথে সাথে তা ফেরত দেওয়া হয়। এখানে কারো কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই।