বেশ কিছুকাল আগেও শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ-আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট (ইসিডি) নিয়ে খুব একটা আলোচনা ছিলোনা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় গুলোতে শিশুর পূর্ণ বিকাশে বৈজ্ঞানিক কৌশলের প্রয়োগের বিষয়টি যেমন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত ঠিক তেমনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিকাশ-আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট (ইসিডি)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন: উন্নত ও জ্ঞানী জাতি গড়ে তুলতে ইসিডি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
শিশু স্বাস্থ্য, মানসিক বিকাশ নিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে কাজ করে আসছেন বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) পরিচালক ড. আমিনুর রহমান। ইসিডির গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, শিশুর ভবিষ্যৎ পথচলায় দিক নির্দেশকের ভূমিকা পালন করে ইসিডি।
তিনি বলেন: আমরা যখন শিশু ছিলাম তখন আমাদের বিকাশের ক্ষেত্র হিসেবে প্রধান ভূমিকা রেখেছে পরিবার। কিন্তু এখন একটা সাবজেক্টই এসেছে- আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট। মানুষ এখন মাস্টার্স করছে, পিএইচডি করছে এ বিষয়ের ওপর। যতদিন যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে বিষয়টির আরও বেশি বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ সম্ভব। আর আমরা যদি সেটি করতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের জাতিকে একটি উন্নত ও বিজ্ঞ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
তবে এক্ষেত্রে পূর্ণফল তখনই পাওয়া সম্ভব যখন ইসিডি’র পুরো প্রসেসটাকে ফলো করা হবে বলে জানান ড. আমিনুর।
আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্টের গুরুত্ব তুলে ধরে এ শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন: শিশুকালের প্রথম পাঁচ বছর মস্তিস্কের মেক্সিমাম ডেভলপমেন্ট হয়। এছাড়া মেন্টাল, ফিজিক্যাল ডেভলপমেন্ট হয়-পুষ্টিতে আমরা বেড়ে উঠি। এই সময়টাতে শিশুকে যদি আমরা ছবি আঁকা, নাচ-গান, ছড়া বলা, খেলাধুলা, পানি নিয়ে নাড়াচাড়ার মতো বিষয় গুলোতে অ্যাঙ্গেজ রাখতে পারি। প্রতিটি বিষয়ই শিশুকে একটা ষ্টিমুলেশন (উদ্দীপনা) দেবে। এগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে।
এই সবগুলো বিষয়কে একটি বিজ্ঞান সমর্থিত সিলেবাসের আওতায় নিয়ে আসার মধ্যদিয়ে ইসিডি’র পূর্ণ প্রয়োগ সম্ভব বলে মনে করছেন ড. আমিনুর রহমান। জানান: এতে শিশুর পূর্ণ ফিজিক্যাল, ইন্টেলেকচুয়াল, লিঙ্গুয়েস্টিক-কথা বলা, সোস্যাল এবং ইমোশনাল ডেভলপমেন্ট সম্ভব।
শিশু নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পরামর্শক সংস্থা সিনার্গোস’র পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার ওবায়দুল ফাত্তাহ তানভীর এ প্রসঙ্গে বলছেন: বিভিন্ন স্বীকৃত গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে, ইসিডির মধ্যদিয়ে যে শিশুটি বেড়ে উঠছে সে অন্য যেকোন সাধারণ শিশুর তুলনায় শারীরিক-মানসিকসহ অন্যসকল দিক থেকে এগিয়ে। জন্মের পর ইসিডির মধ্যদিয়ে যে শিশুটি বেড়ে ওঠে সে অন্যশিশুদের তুলনায় শিক্ষা জীবনে সাফল্যের সাক্ষর রাখে বেশি।
শিশুর বিকাশে-আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট’র (ইসিডি) বাস্তবিক প্রয়োগ তখনই সম্ভব হয়ে ওঠে যখন শিশুদের দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় দিবা যত্নকেন্দ্রে রাখা সম্ভব হয়। সম্প্রতি বছরগুলোতে শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় (সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা) দিবা যত্ন কেন্দ্রে রাখার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় এসেছে।
দিনের এ সময়টাতে অভিভাবকরা সাধারণত গৃহস্থালীসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। কাজের মাঝে তাদের সামান্য অসতর্কতা ঘটাতে পারে শিশুর অকাল মৃত্যু। গবেষণা বলছে, দিনের মাত্র ওই চার ঘণ্টা শিশুকে দিবা যত্নকেন্দ্রে রাখা গেলে ৮০ শতাংশ মৃত্যু রোধ করা সম্ভব।
সেক্ষেত্রে ২০ থেকে ২৫ জন শিশুর জন্য একএকটি দিবাযত্ন কেন্দ্র ইসিডি’র সিলেবাস মেনে পরিচালনা করা সম্ভব হলে শিশুর পূর্ণ বিকাশ যেমন সম্ভব হবে ঠিক তেমনই জাতি হবে উপকৃত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর তিন লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যান। এরমধ্যে বাংলাদেশে ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের এ সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার।
এছাড়াও পানিতে ডোবার কারণে আরো ১৩ হাজার শিশু স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে। আহত হয় আরও এক লাখ শিশু।