‘পাখ-পাখালি দেশের রত্ন, আসুন করি সবাই যত্ন’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পাখিমেলা-২০১৯’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে এ মেলার আয়োজন করা হয়।
সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন উড়িয়ে পাখি মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘পাখির অভয়ারণ্য নিশ্চিত করতে হলে সুন্দর এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশ ধরে রাখতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। এ কারণে প্রতি বছর শীত মৌসুমে পরিব্রাজক পাখি নিয়মিতভাবে এখানকার জলাশয়ে আসে।’
তিনি বলেন, ‘শিশুদের সবচেয়ে প্রিয় প্রাণির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাখি। পাখি মেলায় এসে বাচ্চারা নানা প্রজাতির পাখির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। এতে পাখির প্রতি মমত্ব এবং সংযোগ বাড়ছে।’
উপাচার্য তার ভাষণে বিগত শতকের ষাট এবং সত্তর দশকের ঢাকার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘সেই সময়ে ঢাকা সবুজ ছিল। অনেক জলাশয় ছিল। সেখানেও পাখি আসতো। পাখির ডাকে তখন ঘুম ভাঙত, পাখি আমাদের সময় শেখাতো। এখন সেই ঢাকা নেই। জলাশয় ভরাট, ইট, পাথর, কংক্রিটের নানাবিধ কাজের মধ্যদিয়ে মানুষ সবুজ প্রকৃতি ও পাখ-পাখালির ঢাকার পরিবেশ নষ্ট করেছে।’
সুন্দর ও বাসযোগ্য পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। পাখি থাকলে গাছ থাকবে, গাছ থাকলে ফুল থাকবে, ফল থাকবে। পাখিকে ভালোবাসলে পাখি আমাদের প্রকৃতিতে অনেক কিছুই ফিরিয়ে দিবে।’
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা পরিবেশ নষ্ট না করে সুন্দর ও বাসযোগ্য পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘পাখিকে আমরা ভালোবাসি শুধু সৌন্দর্য ও গান গাওয়ার জন্য নয়। পাখি প্রকৃতিতে আমাদের জন্য বিশাল ভূমিকা রাখছে। পাখি দেশ’সহ পৃথীবির বিভিন্ন প্রান্তে বীজকে ছড়িয়ে দিচ্ছে, বীজ থেকে গাছ হচ্ছে এবং সেই গাছই আমাদের অক্সিজেনের ভাণ্ডার।’
প্রকৃতির ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে পাখি রক্ষার জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে পাখি আমাদের উপকার করে সেই পাখিকেই আমরা হত্যা করছি। পাখি শিকার করে মূলত আমরা নিজের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছি। আমাদের প্রয়োজনে, বাঁচার তাগিদে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই আমাদের পাখিকে রক্ষা করতে হবে। পাখি না থাকলে আমরাও একসময় হারিয়ে যাবো। কারন প্রকৃতির সব উপাদানের সমন্বয়েই আমরা জীবন ধারণ করছি। আমাদের স্বার্থে, আমাদের জন্য এবং আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মের ভালোর জন্য প্রকৃতিতে পাখি ও অন্যান্য প্রাণি রক্ষা করতে হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শেখ মো. মঞ্জুরুল হক, আইইউসিএনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রকিবুল আমিন, বিশিষ্ট পাখিবিশারদ ড. ইনাম আল হক, কথা সাহিত্যিক আখতার হোসেন এবং মেলার আহ্বায়ক ও পাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান।
দেশে পাখি সংরক্ষণ ও নতুন প্রজাতির পাখি সনাক্তকরণে ভূমিকা রাখায় মেলায় শফিকুর রহমান শুভ্র, আফজাল হোসেন এবং তৌকির হাসান হৃদয়’কে ‘বিগবার্ড অব দ্য ইয়ার’ সম্মাননা দেয়া হয়।
অন্যদিকে পাখির কিচির-মিচির ও গুঞ্জন শুনতে সারাদেশের পাখিপ্রেমিরা সকাল থেকেই সকাল থেকেই ভিড় জমাতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোতে। দর্শনার্থীরা জলাশয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দিনব্যাপী পাখিদের ডানা মেলে আকাশে ওড়াউড়ি, সাঁতার কাটা উপভোগ করে। এসময় কিছুক্ষণ পরপর পাখিরাও এক লেক থেকে আরেক লেকে ওড়াউড়ি করে দর্শনার্থীদের আনন্দ দেয়।
দিনব্যাপী এই মেলায় পাখির আলোকচিত্র ও পত্র পত্রিকা প্রদর্শনী, টেলিস্কোপে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা ও পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পাখি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে পাখিমেলা অয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রণিবিদ্যা বিভাগ।