পাকিস্তান তার স্বভাব সুলভ নির্লজ্জ মিথ্যাচার আবারো প্রচার করেছে। বিএনপি স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের শাস্তি কার্যকর করার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর ‘বিরক্তি’, ‘উদ্বেগ’ এবং ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছে; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের বিচার ব্যবস্থাকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছে। বাংলাদেশ পাকিস্তানী ঔদ্ধত্যের জোরালো প্রতিবাদ করলে বিশ্বব্যাপী ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত দেশটি একাত্তরের গণহত্যা এবং ব্যাপক নির্যাতন অস্বীকার করে বলেছে, “বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য ভিত্তিহীন এবং বাস্তবতা বিবর্জিত”।
বাংলাদেশ ধ্বংস করার জন্য, বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্য নস্যাৎ করার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশে যেসব ঘাতকেরা পাকিস্তানের চর হিসেবে কাজ করেছে তাদের জন্য পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল- পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাদের), জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান, পাক মুসলিম অ্যালায়েন্সসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা দুজনের ফাঁসির রায় কার্যকর করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং নিন্দা জানিয়েছে। ফাঁসির প্রতিবাদ করে সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে একটি প্রস্তাব এনেছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপন করার জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে দ্য ডন, ডেইলি টাইমসসহ বিভিন্ন পত্রিকার খবর ও সম্পাদকীয়তে বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পাকিস্তান সরকার শুরু থেকেই বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে আসছে। এর আগেও যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর দেশটির সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এসব দেখে পাকিস্তানের মানবতাকর্মী আসমা জাহাঙ্গীর বলেছেন, “সরকারের কার্যক্রম প্রমাণ করে যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ পাকিস্তানের রাজনৈতিক এজেন্ট ছিলেন এবং তারা পাকিস্তানের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছে”।
৪৪ বছর আগের অত্যাচারের ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছে এখনো বহু মানুষ। দেশে, বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ভিডিও, সংবাদপত্রের কপি, বইপত্র, সাক্ষাৎকার। এসবের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের নাগরিকদের লেখা বই, সাক্ষাৎকার, ভিডিও সংবাদ, এমনকি হামদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট। পাকিস্তানীরা এত বছর পরেও কি করে তাদের দ্বারা সংগঠিত একাত্তরের নৃশংসতা অস্বীকার করে? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তান এসব দলিলাদি অস্বীকার করে কি বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে পারবে?
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী যাদের চুয়াত্তর সালের ত্রিদেশীয় চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিচারের জন্য পাকিস্তানের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল তাদের বিচার সম্পন্ন না হবে; আটকে পরা পাকিস্তানীদের ফিরিয়ে না নেয়া হবে; হানাদার বাহিনী যেসব সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে তা ফেরত না দেবে; একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যে সম্পদ গচ্ছিত ছিল তার ন্যায্য হিস্যা ফেরত না দেবে; এবং একাত্তরের গণহত্যা ও নির্যাতনের জন্য পাকিস্তান যত দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা না চাইবে – ততদিন পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরী হওয়ার সুযোগ নেই। ততদিন পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে সব রকমের সম্পর্ক বন্ধ রাখা দরকার। সরকারের উচিত এখনই পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা।
পাকিস্তানের ৩০ নভেম্বরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিদেশীয় চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ক্ষমাশীলতার নিদর্শন অনুসারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে না। চুয়াত্তর সালের চুক্তি সম্পর্কে এমন ব্যাখ্যা ডাহা মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। চুক্তিটির কোথাও যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে না – এমন কথার আভাসও নেই। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেন। তিনি এখনো জীবিত এবং বহাল তবিয়তে রাজনীতি করে চলছেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে পাকিস্তানের এমন নির্লজ্জ মিথ্যাচারের জবাবে ডঃ কামাল এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবাদ করেন নি।
২০১৩ সালে বাংলাদেশের রাজনীতি একাত্তর ইস্যুতে বিভক্ত হয়ে পড়লে হেফাজত, জামায়াত, বিএনপি, নেজামে লীগ, ইত্যাদির সঙ্গে ডঃ কামালের গণফোরাম একই সুরে কথা বলে চলছেন। এদের সুর আবার মিলে যায় পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং আমেরিকার সঙ্গে। বাংলাদেশে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের দালালেরা দেশের সবচেয়ে সংবেদনশীল ইস্যু ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয়েও পাকিস্তানের সঙ্গে একই তালে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, সভা, সমাবেশে নিজেদেরকে তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি হিসেবে জাহির করে চলছেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের ৩০ নভেম্বরের প্রেস বিজ্ঞপ্তি আরও বলেছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে ভ্রাতৃবৎ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তান সম্পর্কে কুৎসা রটাচ্ছে। পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য আগ্রহী; বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য তাদের হৃদয় আকুলি-বিকুলি করে; দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামে দুই দেশের জনগণের ভূমিকা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। অতএব শুভেচ্ছা, ভালবাসা এবং বন্ধুত্ব নিয়ে দুই দেশের যৌথ মঙ্গলের জন্য ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়েছিল দ্বিজাতি ত্বত্তের ভিত্তিতে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলো নিয়ে ভারত এবং মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলো নিয়ে পাকিস্তান গঠন করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের বিশ্ব বাস্তবতায় ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ ছিল হাস্যকর পদ্ধতি। পাকিস্তানী দাবীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এমন হাস্যকর কর্মটি করেছিল যুক্তরাজ্য। মানব সভ্যতার এই পর্যায়ে এসে পৃথিবী জেনে গেছে অতীতে ধর্ম নিয়ে কত শত যুদ্ধ হয়েছে, কত কোটি মানুষ মরেছে। সভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যেসব কারণে মানুষ হত্যা করা হয়েছে তার মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে ধর্ম। বর্তমান পৃথিবীতেও এ কথার নিদর্শন জ্বলজ্বল করছে। ধর্মের নামে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর এখনো চলছে নির্যাতন। এ নির্যাতনের হার আরও বেড়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পরে। নির্যাতনের ফল দেখা যায় হিন্দু জনগোষ্ঠীর ক্রমহ্রাসমান উপস্থিতিতে।
সাম্প্রতিক সময়ে নির্যাতন হয়েছে বৌদ্ধদের উপর, খ্রীষ্টান যাজকের গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, শিয়াদের জমায়েতের উপর হয়েছে হামলা, গুলি করে প্রার্থনারত মানুষ হত্যা করা হয়েছে শিয়া মসজিদে। বিশ্বব্যাপী চলছে ধর্ম নিয়ে মধ্যযুগীয় বর্বরতা। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হওয়া ছিল ঐতিহাসিক ভুল। আবহমানকালের অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সে ভুলের মাশুল দিয়েছে ২৪ বছর ধরে পাকিস্তানী উপনিবেশের দাসত্ব করে। ভুলের দায় শোধ করেছে ত্রিশ লক্ষ জীবন আর চার লক্ষ সম্ভ্রম দিয়ে। স্বাধীনতাকামী কোন বাংলাদেশী ধর্মের কারণে ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের বর্বর নাগরিকদের সঙ্গে যৌথ মঙ্গলের জন্য ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে চায় না।
বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতকদের বিচার হলে পাকিস্তানের আঁতে কেনো ঘা লাগে তা আসমা জাহাঙ্গীরের মন্তব্যে পরিষ্কার। প্রশ্ন তার পরেও থেকে যায় – ৪৪ বছর পরে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘৃণিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষাবলম্বন কেনো করে পাকিস্তানী রাজনৈতিক দলসমূহ, প্রগতিশীলতার ধ্বজাধারী সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সরকার? কেনো অস্বীকার করে একাত্তরের নৃশংসতার দায়? কেনো রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চায় না একাত্তরের কৃতকর্মের জন্য? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় একটি পয়েন্টে, আর তা হলো – পাকিস্তান এখনো বাংলাদেশকে তার উপনিবেশ বানানোর চক্রান্ত বন্ধ করেনি।
ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিভ্রান্ত করে পাকিস্তান তার উপনিবেশ বানানোর উদ্দেশ্য পূরণ করতে চায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে জেনারেল জিয়ার হাতে পাকিস্তানের দোসরদের বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সে চক্রান্ত কার্যকর করার প্রথম পর্ব শুরু হয়। একাজে তার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে পাকিস্তানে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী এবং পাকিস্তানী আদর্শে সৃষ্ট মুসলিম লীগের পরবর্তী প্রজন্মের দল, বিএনপি।
বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামিকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিতে গিয়ে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পলাতক স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সামরিক এবং জনপ্রশাসনের সর্বোচ্চ পদগুলোতে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাকেও দেশে ফিরে আসার সুযোগ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এতেই ঘটে বিপত্তি। শেখের বেটির ধীর, স্থির এবং বলিষ্ঠ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কাছে একটু একটু করে হেরে যাচ্ছে সকল পাকিস্তানী চক্রান্ত। পরাজিত পাকিস্তানী শক্তির ধারকেরা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালালেরা আন্তর্জাতিক মিডিয়া, তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠন, সৌদি আরব এবং আমেরিকাকে দিয়ে বিভিন্ন চাপ দিয়েও কাবু করতে পারছে না বাঙালি জাতীয়তাবাদের মানসকন্যাকে।
এতকিছু দেখেও থামে না পাকিস্তান। এখনো দিবাস্বপ্ন দেখে বাংলাদেশকে তাদের করদ রাজ্য বানানোর। জামায়াত যেমন কখনো একাত্তরে তাদের ভূমিকাকে ভুল মনে করে না তেমনি পাকিস্তানও একাত্তরের অপরাধের জন্য অনুতপ্ত নয়। বাস্তবতা বিবর্জিত এই রাজনীতি তাদের নিঃশেষ করে দিচ্ছে। সামাজিক উন্নয়নের মাপকাঠিতে দেশটি দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ ও দারিদ্র তাদের গ্রাস করছে। চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন না এলে দেশটি অচিরেই পুরোপুরি তাদের সার্বভৌমত্ব হারাবে। ইতোমধ্যেই তারা অনেকখানি সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে আমেরিকার কাছে।
পাকিস্তানের প্রেতাত্মা জামায়াতেরও একই দশা। পাকিস্তানে তাদের সামান্য উপস্থিতি থাকলেও ভারতের রাজনীতিতে তারা ধর্তব্যের মধ্যে পড়েনা। জেনারেল জিয়া এবং তার পত্নীর ছায়া তলে তাদের দিন ভাল কাটলেও ২০০৮ সালে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। সে বছর জাতীয় নির্বাচনের ইস্তেহারে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করলে বিপুল উৎসাহে জনগণ তাদের বিজয়ী করে। বিদায় ঘণ্টা বেজে ওঠে বাংলাদেশে জামায়াত রাজনীতির। শুরু হয় একাত্তরের ঘাতকদের বিচার পর্ব। এ পর্যন্ত রায় হয়েছে বেশ কয়েকটি; আদালতের দেয়া সর্বোচ্চ দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে চারটি রাজাকারের ক্ষেত্রে। একাধিক মামলায় জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে রায় দিয়েছে আদালত। নির্বাচন কমিশনে তাদের নিবন্ধন হয়েছে বাতিল। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। কিছু কালের মধ্যেই নিষিদ্ধ হবে জামায়াত। চলমান জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান সম্পন্ন হওয়ার পড় সন্ত্রাস করার শক্তিও অবশিষ্ট থাকবেনা তাদের। তারপর শুধুই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে বসবাস।
একাত্তরে সংগঠিত নৃশংসতার ক্ষত বাঙালির হৃদয়ে ধিকধিক করে জ্বলছে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর এদেশীয় সহযোগী – রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত; বিচারের জন্য পাকিস্তান সরকারের হাতে দেয়া ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচার না হওয়া পর্যন্ত ইতিহাসের দায় শোধ হবে না; শান্ত হবে না বাঙালির চিত্ত। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ – এমন মন্ত্রে দীক্ষিত; হাজার বছর ধরে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত; চণ্ডীদাসের, লালনের, নজরুলের বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতির সুযোগ নেই। একথা ধর্মান্ধ পাকিস্তানীরা ‘৪৭ এ বোঝেনি, এখনো বোঝে না। বোঝেনা বলেই তারা এখনো স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশকে উপনিবেশ বানানোর; পাকিস্তানী ভাবাদর্শে ‘বাংলাস্তান’ বানানোর। পাকিস্তানের অনুসারীরা ফেসবুক পেজ বাশের কেল্লায় ‘বাংলাস্তানের’ স্বপ্ন ফেরি করে বেড়ায়। ‘১৩ সালে তারা উড়িয়েছিল ‘বাংলাস্তানের’ পতাকা; ভেঙ্গে ছিল শহীদ মিনার; পুড়িয়েছিল জাতীয় পতাকা। ৩০ নভেম্বরের পাকিস্তানী প্রেস বিজ্ঞপ্তি সে স্বপ্নকে রাঙিয়ে দিয়েছে অনেক গুণ। পাকিস্তানের সঙ্গে সকল রকমের সম্পর্ক ছিন্ন করাই হচ্ছে এসবের সমুচিত জবাব।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)