ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে গিয়ে পাইকারিভাবে অনেক আসল অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক। ১৫ তারিখ সকাল থেকে অনেকেই ঢুকতে পারছেন না নিজের অ্যাকাউন্টে। আবার একাধিক ভুয়া অ্যাকাউন্টের মালিক নিজের আসল অ্যাকাউন্টটি বন্ধ পেয়েও হয়েছেন হতবাক।
কোনো রকম নোটিশ না পেয়ে এভাবে সামাজিক মাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাদের মধ্যে আছেন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গণমাধ্যমকর্মীও।
গণমাধ্যমকর্মী আদিত্য শাহীনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টও শিকার হয়েছে এই ‘পাইকারি বন্ধযজ্ঞের’।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন,‘গতকাল রাতে ফেসবুকে ঢোকার চেষ্টা করেও পারিনি। মনে হলো এই সামাজিক মাধ্যমের যুগে অসামাজিক হয়ে গেলাম। প্রায় ৫ হাজারের কাছাকাছি মানুষ ছিলো আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে। কয়েকটি ফেসবুক পেইজও চালাতাম। সেসব পেইজেও লাইক ছিলো কয়েক হাজার।’
কেনো তার আইডি বন্ধ করা হলো সেসম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই বলে জানান তিনি। বলেন,‘আমাকে কোনো নোটিশ পাঠানো হয়নি। আমার মনে হয় ফেসবুকে প্রোফাইল ছবিতে আমি নিজের ছবি ব্যবহার করিনি বলে এমনটা হয়ে থাকতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারোয়ার শাতিল চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, নিছক মজা করার জন্য এবং বন্ধু-পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ রাখতে নিজের সুপরিচিত একটি আইডিসহ চারটি অ্যাকাউন্ট চালাতেন তিনি। গতকাল থেকে তিনটি অ্যাকাউন্ট যা তিনি অন্য নামে চালান সেগুলো সচল থাকলেও বন্ধ পাচ্ছেন নিজের সুপরিচিত অ্যাকাউন্টটি।
সাংবাদিক আরেফীন ফয়সল অবশ্য নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিয়ে তেমন উৎকণ্ঠা করতে নারাজ। এখনো তার কাছে ভার্চুয়াল জগতের চেয়ে বাস্তব জগতের সম্পর্কগুলোই বেশি মূল্যবান।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন,‘ খুব একটা হতাশ নই। চেষ্টা করেছি আগের অ্যাকাউন্টটা ফিরে পাওয়ার , পাচ্ছিনা। সমস্যা নেই নতুন আরেকটা অ্যাকাউন্ট খুলবো। আমার বেশ কিছু লেখা, ছবি এসব হয়তো এই অ্যাকাউন্ট বন্ধের কারণে হারাবে। তবু বাস্তব জগতে আমাকে যারা চেনেন তাদের কাছ থেকে কোনো মাধ্যম আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের লাখ লাখ আইডি ভুয়া অভিযোগে বন্ধ করে দিচ্ছে ফেসবুক। তবে, এর উল্লেখযোগ্য একটা অংশ ভুয়া না হলেও ফেসবুকের কর্তন নীতির আওতায় পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। ফেসবুক ভুয়া আইডি বন্ধ করার সম্ভাব্য যে ৩ শতাংশ হারের কথা বলেছে তাতে ৯ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।
আবার বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় গণমাধ্যম এবং ব্যক্তিত্বের পেজ হিসাব করে দেখা গেছে, তারা গড়ে ৩ শতাংশ হারে লাইক হারিয়েছে। সে হিসাবেও বন্ধ হয়ে যাওয়া আইডির সংখ্যা ৯ লাখ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে, এ ৯ লাখের সবার আইডি যে ভুয়া এমনটা নয়। অনেকেই চ্যানেল আই অনলাইনে ফোন করে জানিয়েছেন, তাদের আইডি আসল হওয়ার পরও ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছে।
ফেসবুক বলেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ শুরু হয়েছে। একই ধরনের পোস্ট বারবার দেওয়া, একই লিংক বার বার শেয়ার করা, পর্ন ওয়েবসাইটের লিংক, ছবি ও ভিডিও শেয়ার ইত্যাদি বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে ভুয়া আইডিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করা হচ্ছে।
এরকম ভুয়া আইডিগুলোর উপর বিশেষ নজর রাখা হবে বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ফেসবুকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে ভুল তথ্য, ভুয়া খবর ঠেকানোর অংশ হিসেবে আইডিগুলো বন্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া আরো কিছু আইডি চিহ্নিত করা হচ্ছে।
মূলত সাধারণ ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করতে ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর হাত থেকে মুক্তি দিতেই ফেসবুকের নতুন এই পদক্ষেপ।