কোরবানির ঈদের পরে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে দেশের ৩৮ থেকে ৪০ জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৬টি বিভাগের ৬০ ভাগ জেলা শহরে গড়ে ৫০ জনের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। কোরবানির ঈদের আগে পশুর হাট কেন্দ্রীক এবং ঈদে উৎসব ঘিরে জনসমাগমের কারনেই করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই রোগী শনাক্ত-আইসোলেশন ও চিকিৎসা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কোরবানির ঈদকে ঘিরে দেশে করোনার সংক্রমণ দ্বিতীয় ধাপে আবারো বাড়বে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ৫ আগষ্টের সাথে ১০ আগষ্টের তুলনামুলক বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বাস্তবে করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করছেন।
ঐ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানের ঢাকা শহরে করোনার রোগী শনাক্ত বেড়েছে ১০ হাজার। চট্টগ্রামে বেশি শনাক্ত হয়েছে তিন’শ থেকে সাড়ে তিন’শ।
রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে শনাক্ত বেড়েছে দুই’শ করে। এছাড়াও বরিশাল ও ময়মনসিংহে শনাক্ত হয়েছে এক’শর বেশী। আর বৃহত্তর রংপুর বিভাগে বন্যা পরিস্থিতির কারণে পুরো তথ্য পাওয়া না গেলেও এক নীলফামারি জেলাতেই করোনা শনাক্ত রোগী বেড়েছে দুই’শ জন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা.মোস্তাক হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, প্রায় ৬০ ভাগ জেলা শহরে সংক্রমণটা বেড়েছে। ৫ আগস্টের তুলনায় অন্তত পক্ষে ৫০ জনের বেশি রোগী পাওয়া গেছে। এ বাড়ার গতিটা একটু ধীর হলেও আমরা আশঙ্কা করছি এই সপ্তাহে আরো বাড়বে। এবং যারা জটিল রোগী তাদের সংখ্যাটা বাড়তি দেখব এই সপ্তাহে বা পরের সপ্তাহে। এই মুহূর্তে আমাদের প্রস্তুতি বাড়াতে হবে বিশেষ করে অক্সিজেন ও জরুরি সেবায় যা প্রয়োজন।
এই বাস্তবতায় গ্রাম এবং শহরে কমিউনিটিকে অর্ন্তভুক্ত করে রোগী শনাক্ত, আইসোলেশন ও আক্রান্তদের প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসার আওতায় এনে করোনা সংক্রমণ ও নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের।
তিনি বলেন, সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে আমাদের রোগী শনাক্ত করতে হবে। গ্রাম এবং শহরের মধ্যে আমরা যদি রোগী শনাক্ত করি এবং যারা শনাক্ত হবে (সেটা ল্যাব টেস্ট, কিংবা জ্বর, শরীর ব্যথা থাকলে) রোগীকে আইসোলেটেড করতে হবে। রোগীকে আইসোলেশনে পাঠাতে না পারলে কিন্তু আমরা সংক্রমণ কমাতে পারব না।
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে করোতে আক্রান্ত হবার পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে আক্রান্তরা নানান জটিলতা পড়েন। সেই হিসাবে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে অপক্ষোকৃত জটিল রোগীরা হাসপাতালমুখী হবেন।
তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে করোনা জটিলতা নিয়ে মৃত্যু হার বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে করোনা শনাক্তে মোট রোগীর পরীক্ষার ২১ থেকে ২৩ শতাংশ করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
যদিও দেশ থেকে করোনা পরিস্থিতি নির্মূল করতে হলে করোনাতে আক্রান্তের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। পর্যায়ক্রমে রোগী শনাক্ত আইসোলেশন এবং তাদের চিকিৎসার আওতায় আনলে তবেই পর্যায়ক্রমে দেশে করোনা পরিস্থিতি নির্মূল সম্ভব বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।