চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ন্যাটো ধ্বংসই কি পুতিনের সিরিয়া যুদ্ধের কৌশল?

একটি যুদ্ধবিরতি আসলে কখনো যুদ্ধবিরতি হয় না। এটা সম্ভবত তখনই হয়, যখন একটি রক্ত-জবজবে অত্যাচারী শাসক তার অবাধ্য সম্প্রদায়ের উপর বৃষ্টি মতো অবিরত ব্যারেল বোমা  নিক্ষেপ করতে সক্ষম হয়। বর্তমান সিরিয়ার মতো একটি দেশে ‘দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতি’ কল্পনা করাটাও তাই এক রকম নিরর্থক।

বাসার আল-আসাদের বন্ধু রাশিয়া এটা নিশ্চিত করেছে যে, মিউনিখ স্বাক্ষরের পরও ‘সন্ত্রাসীদের’ উপর হামলা চালানো কোনোভাবেই থামানো যাবে না। সর্বপরি আসাদ তার বিরোধী প্রত্যেক সিরিয়ানকেই ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। সুতরাং আসাদের জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওটা ওই যুক্তি ‘সন্ত্রাসীদের’ উপর হামলা চালানোর অনুমোদন দিয়েছে এবং শাসকের শত্রুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ একরকম স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

আসাদ সম্ভবত আলেপ্পো ঘেরাও করে শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এই শহরটি যুদ্ধের প্রায় শুরু থেকে বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে। আসাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রাশিয়া ও ইরান। আকাশ থেকে বোমা ফেলছে রুশ যুদ্ধবিমান। আর মাটিতে যুদ্ধের জন্য যোদ্ধা সরবরাহ করছে ইরান।

সত্যিটা হলো সিরিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনা এখন আরও বেশি উদ্বেগজনক। এর সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হলো আলেপ্পো এখন ইউপোরের নিরাপত্তা ঝুঁকিকে আরও বিস্তৃত করছে। ন্যাটো ও রাশিয়া মধ্যে সরাসরি সংঘাতের ঝুঁকির সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিপদ মিশিয়ে দিচ্ছে।

এই সংঘাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রথম সম্ভব্য আক্রমণের শিকার হতে পারে ন্যাটোর বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে তুরস্ক নিজেও ন্যাটোর সদস্য এবং রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক এখনো স্মরণকালের মধ্যে তলানিতে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগান এরই মধ্যে হুমকি দিয়েছেন যে, আইএস দমনের জন্য তার দেশের সৈন্যরা যেকোনো সময় সিরিয়া সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। যদি আরেকধাপ এগিয়ে এরদোগান সিরিয়ায় তুর্কি সৈন্য মোতায়েন করেন, তাহলে ঝুঁকি নিয়ে হলেও তাদের মোকাবেলা করতে সেখানে বিমান হামলা চালাবে রাশিয়া।

যদি এমনটা ঘটে, তাহলে সম্ভব্য চিত্রটা কেমন হবে? রাশিয়ার বিমান  হামলার পর সিরিয়া সীমান্তে স্থলসেনা মোতায়েন করবেন এরদোগান। এরপর রাশিয়ার দু-তিনটি মিগ বিমান ভূ-পাতিত করবে তুরস্ক। এরদোগানের সিদ্ধান্তকে টোপ হিসেবে নিয়ে মিগ ধ্বংসের পর সমুচিত জবাবের জন্য তুর্কি ঘাঁটি হামলা চালাবে রাশিয়া।

ক্রেমলিনের বোমায় বিমান বা স্থলঘাঁটি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তুরস্ক ঘোষণা দেবে রাশিয়ার আক্রমণে বিপর্যস্ত তার দেশ। এরপর ন্যাটোর সংবিধান অনুযায়ী মিত্রদের কাছে সাহায্য চাইবেন তিনি। ন্যাটোর ‘আর্টিকেল ভি’তে বলা আছে, ‘সংগঠনের কোনো একটি দেশ অন্য কোনো দেশ বা সংগঠন কর্তৃক আক্রমণের শিকার হলে সেটা সদস্য সব রাষ্ট্রের উপর আক্রমণ বলে বিবেচিত হবে।’

এরদোগান ইউরোপকে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে যেতে আমন্ত্রণ জানাবে বা যৌথ নিরাপত্তার যে গ্যারান্টি ন্যাটোর ভিত্তি হিসেবে কাজ করে তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা চালাবে। এরদোগান যদি এই রকম প্রস্তাব দিয়েই বসে তাহলে ইউরোপ কিভাবে সাড়া দেবে?

এটা যখন সন্ত্রাসবাদের প্রশ্ন আসে তখন? ইসলামিক স্টেট অব ইরাক ও লেভান্ট (আইএসআইএল)  শুধুমাত্র এই গ্রুপটি দ্বারা ইতিমধ্যে ইউরোপ আক্রান্ত হয়েছে। অবস্থা ঘোলাটে হলে এইরকম সিরিয়ার আরো সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে আসাদ এবং রাশিয়ার ক্ষমতার ত্রিমুখী আক্রমণের ভোগ করতে হবে ইউরোপকে। তাই একনায়কদের কৌশল দেখতে এখনো বাকি আছে।

কিন্তু সেখানে এই অনৈতিক পরিকল্পনা সঙ্গে একটা টালমাটাল অবস্থা হবে। সাধারণ লাখ লাখ সিরীয়দের নানা রকম ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হতে পারে। এই অবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নী সম্প্রদায় কোন দিকে মোড় দেবে? যদি তাদের আইসিসের সুন্নি ব্লকের পক্ষ নিতে বাধ্য করা হয় বা  শিয়া একনায়ক যারা শিয়া ইরান ও খ্রিস্টান রাশিয়ার সাহায্যে তাদের স্বদেশবাসীদের জবাই করছে তাদের পক্ষে। তাহলে কতজন জিহাদীদের পেছনে লাইন দেবেন? আর কতজন বিদ্রোহী বা আসাদের সাড়াশীতে ধরা পড়বেন?

হিসেবে জটিল। সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে বহু তরুণ আজ এক গ্রুপের হয়ে অস্ত্র নিয়েছে তো দিন কয়েক পর আরেক গ্রুপের অস্ত্র হাতে নিয়েছে। তারা দেশের সেনাবাহিনী, ইসলামী বিদ্রোহী গোষ্ঠী এমনকি আইএসআইএলের মধ্যে ঘোরপাক খাচ্ছে।

এই দিকভ্রান্তদের অনেকেই এখন পরাজয়ের ঝুঁকি কিংবা একনায়কের ভয়াবহ জেল জীবনের পরিবর্তে নন-ইসলামিক ও আইএসআইএলে যোগ দিচ্ছে। যদি তেমনটাই হয়, তাহলে আলেপ্পোতে আসাদের সম্ভব্য বিজয়ের পরিবর্তে আইএসআইএল বিজয়ী হতে পারে। কিন্তু এটা হলে ইউরোপ ও তথা ন্যাটোভুক্ত ইউরোয়ি দেশগুলোকে সন্ত্রাসবাদ থেকেও একটি বৃহত্তর বিপদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। আর এই সুযোগই নিতে চাইছে রাশিয়া।

‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এ ডেভিড ব্লেয়ারের লেখা অবলম্বনে