চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘নোলক’-এর পরিচালক কে, জানা যাবে ঈদের পর

ঈদের পর জানা যাবে ‘নোলক’-এর পরিচালকের নাম: জানালো আদালত…

ঘনিয়ে আসছে ঈদের সময়। আর ঈদ মানেই বড় পর্দার ছবি নিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রে চলে নানা হিসেব-নিকেষ। ঈদের ছবি নিয়ে চলচ্চিত্র বাজারের দর-পতনের হিসেব করেন প্রযোজক-পরিবেশক আর হল মালিকরা। এরইমধ্যে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে একাধিক বিগ বাজেটের ছবি মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে আলোচিত ছবি ‘নোলক’।

ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকাই চলচ্চিত্রের শীর্ষ তারকা অভিনেতা শাকিব খান ও ববি অভিনীত ‘নোলক’-এর প্রচার প্রচারণা তুঙ্গে। কিন্তু এই ছবিটি নিয়ে পরিচালক ও প্রযোজকের মধ্যে বেশকিছু দিন ধরেই ছবির ‘মালিকানা’ (পরিচালক কে?) নিয়ে চলছে দ্বন্দ্ব! সাকিব সনেটের প্রযোজনায় ‘নোলক’-এর পরিচালক হিসেবে শুটিং শুরু করেছিলেন তরুণ নির্মাতা রাশেদ রাহা। কিন্তু মাঝখানে ছবি থেকে বাদ দেয়া হয় রাহাকে।

‘নোলক’-এর আনুষ্ঠানিক মহরত অনুষ্ঠান…

ছবি মুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ‘নোলক’-এর মালিকানার বিষয়টি সুরাহা করার দাবি জানিয়ে আদালতে মামলা করেন রাশেদ রাহা। গত ২৯ এপ্রিল সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় ঘোষণা মূলক মামলাটি করেছিলেন তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার (২৯ মে) শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদালত এদিন নতুন তারিখ ধার্য করেন। আগামি ১০ জুন পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়।

আদালতের এমন সিদ্ধান্তে ‘নোলক’-এর মালিকানা নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছেন রাশেদ রাহা। কারণ ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে আগামি ৫ জুন (ঈদের দিন)!

এদিকে আদালতের এমন সিদ্ধান্তে বেশ স্বস্তিতে আছেন ছবির প্রযোজক সাকিব সনেট। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি জানান, রাশেদ রাহা ছবিটির স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলা করেছিলো, তার আবেদন বুধবার (২৯ মে) না মঞ্জুর করে দেয় আদালত। ফলে আসছে ঈদে ‘নোলক’ মুক্তিতে কোনো বাঁধা নেই।

‘নোলক’-এর এই জটিলতা নিয়ে আলাপকালে রাশেদ রাহা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমি মোটেও ‘নোলক’ মুক্তির স্থগিতাদেশ চাইনি, আর আদালতও আমার আবেদন না মঞ্জুর করেনি। বরং আমি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি ছবিতে পরিচালক হিসেবে আমার নামটি যেন থাকে, এই দাবি করেছি। কারণ আমার সাথে ছবিটি নিয়ে প্রতারণা করেছেন প্রযোজক। আমি এর সুস্থ সমাধান চাইতেই আদালত পর্যন্ত গিয়েছি। এই বিষয়ে আদালত আগামি ১০ জুন শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন।

নোলক-এর পরিচালক কে, আদালত এমন রায় দেয়ার আগেই ঈদুল ফিতরের দিন (৫ জুন) থেকে সারাদেশের প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে, এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?-এমন প্রশ্নে রাহা বলেন, সামগ্রিকভাবেই এটা সমস্ত পরিচালকের ব্যর্থতা। যিনি ছবিটি পরিচালনা করেছেন তার নাম ছাড়া আরেকজনের নামে ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে, এটা দুঃখজনক। বিষয়টি একজনের সন্তান, আরেকজন পিতৃত্ব দাবি করার মতো ব্যাপার।

‘নোলক’-এ পরিচালক হিসেবে রাশেদ রাহার নামটি যেন থাকে, এ বিষয়ে বরাবরই এই নির্মাতার সাথে ছিলো পরিচালক সমিতি। ‘নোলক’ নিয়ে আদালতের এমন সিদ্ধান্তে তারাও কিছুটা বিব্রত।

রামুজি ফিল্ম সিটিতে ‘নোলক’-এর শুটিংকালে…

এ বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে কথা হয় পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার ও মহাসচিব বদিউল ইসলাম খোকনের। সভাপতি গুলজার বলেন, ‘নোলক’-এর পরিচালক কে, বিষয়টি যেহেতু এখন আদালত দেখছে ফলে চলমান এই রায় নিয়ে আমরা ভিন্ন কিছু বলতে পারি না। তবে আদালতের একটু বিবেচনা নেয়া উচিত ছিলো যে, একটি ছবি রিলিজ হয়ে গেলে পরে পরিচালক হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্তি করায় লাভ হবে কি! তারপরেও আমরা আশাবাদী, ১০ তারিখ আদালত সঠিক সিদ্ধান্তেই দিবেন।

আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো কথা না বললেও ‘নোলক’-এর প্রযোজক সাকিব সনেটের কাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন। তিনি বলেন, নোলক-এর পরিচালক কে, বিষয়টি যেহেতু আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ফলে এ নিয়ে আমরা কিছু বলেও লাভ নেই। কিন্তু সাকিব সনেট যে প্রতারণা করেছে, এটা মেনে নেয়ার মতো না। কারণ ‘নোলক’-এর পরিচালকতো সত্যি সত্যিই রাশেদ রাহা। সাংগঠনিকভাবে বলেন, কাগজে পত্রে সব জায়গায় ‘নোলক’-এর পরিচালক হিসেবে তার নাম রয়েছে।

কিন্তু সেন্সরপত্রেতো প্রযোজক, পরিচালক হিসেবে সাকিব সনেটের নাম। এ বিষয়ে পরিচালক সমিতির এই নেতা বলেন, এফডিসির কিছু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে, পয়সা দিয়ে পরিচালক-এর জায়গায় নিজের নাম লিখিয়ে নিয়েছে সাকিব সনেট। ফলে সহজেই সে ‘নো অবজেকশান সার্টিফিকেট’ নিয়ে সেন্সরবোর্ডে আবেদন করে পার পেয়ে গেছে।

একজন নির্মাতার সাথে প্রতারণা করায় সাকিব সনেটের এসব আচরণের জন্য সাংগঠনিকভাবে শাস্তি হিসেবে সহযোগি সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বদিউল আলম খোকন।

আসছে ঈদে মুক্তি পাচ্ছে ‘নোলক’…

‘নোলক’-এর পরিচালকের ক্রেডিট নিয়ে প্রতারণা করার সুযোগ পেলেও আগামিতে আর কারো এমনটা করার সুযোগ নেই জানিয়ে খোকন আরো বলেন, নোলক দিয়ে বেশ শিক্ষা হয়েছে। আগামি জুলাই থেকে সেন্সর বোর্ড হচ্ছে গ্রেড ভিত্তিক, সেখানে কোনো ছবি জমা দিলে আগে পরিচালক সমিতির প্রত্যয়নপত্র লাগবে। পরিচালক সমিতি যার নামে প্রত্যয়নপত্র দিবে, তিনিই ছবির পরিচালক। ফলে একজনের ছবি আরেকজনের নামে ছিনতাই হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

ঈদুল ফিতরে অর্ধশতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত ছবি ‘নোলক’। এরইমধ্যে ৪০টির বেশি প্রেক্ষাগৃহ চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বি হ্যাপি এন্টারটেনমেন্ট।

নোলকের ছবির কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য করেছেন ফেরারি ফরহাদ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে রামুজি ফিল্ম সিটিতে ছবির শুটিং শুরু হয়। শাকিব-ববি ছাড়াও ‘নোলক’ ছবিতে অভিনয় করছেন ওমর সানি, মৌসুমি, শহিদুল আলম সাচ্চু, রেবেকা, রজতাভ দত্ত, অনুভব মাহাবুব প্রমুখ।