নেপালের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বাংলাদেশিদের মধ্যে কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ভর্তি আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা দু’জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোনো দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদের মধ্যে শাহরীন আহমেদকে ঢাকায় ও ইয়াকুব আলীকে নয়াদিল্লিতে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া বৃহস্পতিবার হাসপাতালে থেকে রিলিজ পাচ্ছেন আলমুন নাহার অ্যানি, মেহেদী হাসান ও কামরুন নাহার স্বর্ণা। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
আহত বাকি বাংলাদেশিরা কাঠমান্ডুর তিনটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আহতদের স্বজনরা তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বার বার তাগিদ দিচ্ছেন।
এর আগে কাঠমান্ডুর ওম হসপিটাল এন্ড রিসার্চ সেন্টারের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ডা. রেজওয়ানুল হক শাওনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার রাতে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে জানানো হয়নি যে তার স্ত্রী তাহিরা তানভিন শশী আর নেই। কারণ তার নিজের অবস্থা এখনো পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নয়।
আহতদের উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩ জন বার্ন বিশেষজ্ঞ, ২ জন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ, ২ জন আইসিইউ বিশেষজ্ঞ এবং ১ জন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞসহ ৯ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম বৃহস্পতিবার সকালের দিকে নেপাল পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন তাদের স্বজনরা। নেপালের হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের অবস্থা খুবই নিম্নমানের বলে অভিযোগ তাদের। এরপর বাংলাদেশ থেকে মেডিকেল টিম পাঠানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বজনদের মতে, বাংলাদেশের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের তুলনায় নেপালের হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না দুর্ঘটনায় আহতরা। এ কারণেই অন্য কোথাও নিয়ে তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চাইছেন স্বজনরা।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোনো দেশে, এমনকি বাংলাদেশেও ফিরিয়ে নেয়ার অনুমতি দিচ্ছে না বলে বুধবার তারা অভিযোগ করেন।
মরদেহ ১৫ দিনের আগে হস্তান্তর হবে না
নিহতদের মরদেহ কমপক্ষে ১৫ দিন আগে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে না বলেও জানিয়েছে নেপাল সরকার।
নিহত ৫০ জনের মরদেহ এখনো কাঠমান্ডুর টিচিং মেডিকেলেই রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত ১১ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও পাঠানো হচ্ছে যেন স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে মিলে তারা ময়নাতদন্তগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে পারেন।
মঙ্গলবার ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্রি ফ্লাইট হতাহতদের স্বজনদের নিয়ে নেপালের কাঠমান্ডুতে পৌঁছায়। কিন্তু এখনো কেউই তাদের নিহত স্বজনদের দেখতে পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ময়না তদন্ত ছাড়া কোনো মরদেহ হস্তান্তর করা হবে না।
নিহত ৫০ জনের মরদেহ নিয়ে জটিলতায় শুধু বাংলাদেশি স্বজনদেরই নয়, নেপালিদের মধ্যেও অসন্তোষ আছে। উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পর সার্বিক বিষয়ে প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে সাহায্য নিতে নেপাল সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ঘটনার শিকার নেপালিদের স্বজনরা। তাদের দাবি, সেখানে এখন মূল সমস্যা লোকবলের।