চিত্রনায়িকা নিপুণ আপিল বিভাগের আদেশ ভঙ্গ করেছেন বলে হাইকোর্টকে জানালেন চিত্রনায়ক জায়েদ খানের আইনজীবী।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে জারি করা রুল শুনানি হয়নি। কার্যতালিকার ৩৬ নম্বরে থাকা বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে ম্যানশন করেন জায়েদ খানের আইনজীবী আহসানুল করিম।
আদালত থেকে বেরিয়ে এই আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে কার্যতালিকায় (লিস্টে) এই বিষয়টি একটু পেছনের দিকে ছিল। আমরা ম্যানশন করেছি। পরে আদালত বলেছেন আগামীকাল বিষয়টি কার্যতালিকার টপে থাকবে।’
আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘আমরা আদালতে বলেছি, আপিল বিভাগের যে আদেশ আছে সেটাকে ভঙ্গ করে উনি (নিপুণ) বসছেন এবং তার কাজ ‘পারপোরটেডলি’ চালিয়ে যাচ্ছেন, যেটা নির্ঘাত আইনের একটা অবমাননাকর পরিস্থিতি। তবে কোর্ট বলেছেন, এটা ভিন্ন (কজ অফ অ্যাকশন) বিষয়। আমাদের এখানে যে রুল শুনানি তার সাথে এর সম্পর্ক নেই।’
এক্ষেত্রে আলাদা করে আদালত অবমাননার (কন্টেম্পট) আবেদন করবেন কি না? এমন প্রশ্নে এই আইনজীবী বলেন, ‘জায়েদ সেটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিক করবেন।’
হাইকোর্টে আজ জায়েদ খানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম ও নাহিদ সুলতানা যুথি।
গত ২৮ জানুয়ারি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে শনিবার ভোরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহিদুল হারুন এফডিসিতে ফলাফল ঘোষণা করেন। তাতে গত দুই মেয়াদে শিল্পী সমিতির সভাপতি থাকা মিশা সওদাগরকে ৪৩ ভোটে হারিয়ে এবার সভাপতি হন ইলিয়াস কাঞ্চন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাট্রিক করা জায়েদ খানের কাছে ১৩ ভোটে হারেন ইলিয়াস কাঞ্চনের প্যানেলের প্রার্থী নিপুণ আক্তার।
তবে অর্থ দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ এনে নির্বাচনী আপিল বোর্ডে জায়েদ খান ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য চুন্নুর পদ বাতিলের আবেদন করেন নিপুণ। সে আবেদনে বিষয়ে নির্বাচনী আপিল বোর্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে সমাজসেবা অধিদপ্তর চিঠি দেয়। এরপর জায়েদ খান ও চুন্নুর বিষয়ে বৈঠকে বসে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনী আপিল বোর্ড। বৈঠকে শেষে বোর্ডের প্রধান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল বলে সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার পরদিন ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ পরিষদের বিজয়ীরা শপথ নেন।
তবে নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা এবং নিজের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। সে রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনী আপিল বোর্ড কর্তৃক জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। সেই সাথে জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিজয়ী ঘোষণার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করা হয়। এছাড়া নিপুণের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচনী আপিল বোর্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের চিঠির কার্যকারিতাও স্থগিত করা হয়। তবে হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে নিপুণ। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করে বিষয়টি প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। সে পর্যন্ত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দুজনের কেউই দায়িত্ব পালন করতে পারবে না মর্মে (স্ট্যাটাসকো) আদেশ দেয়া হয়।
এরপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে এবিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্টকেই তাদের জারি করা রুলটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়। তবে হাইকোর্টে রুল নিস্পত্তির আগ পর্যন্ত চেম্বার আদালতের দেয়া আদেশই বহাল থাকবে বলে নির্দেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।