ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তের দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্বীকৃতি দেওয়ার পর নানান প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পশ্চিমা নেতারা।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের এই প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে মস্কোর এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
মিনস্ক শান্তি চুক্তির ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং জার্মানির নেতারা পুতিনের এই কর্মকাণ্ডকে মিনস্ক শান্তি চুক্তির ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, এই কর্মকাণ্ডের কড়া জবাব দেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো ও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘রাশিয়ার এই পদক্ষেপের জবাব না দিয়ে থাকবে না’।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক টুইট বার্তায় বলেন, পুতিনের এই সিদ্ধান্তের ‘একটি দ্রুত এবং দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানানো প্রয়োজন এবং আমরা আমাদের অংশীদারদের সমন্বয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবো’।
ইউক্রেনের পূর্বাংশে বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকায় রাশিয়ার সৈন্য মোতায়েনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশের জবাবে প্রাথমিক সাবধানতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। প্রয়োজনে আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে বলে জানায় ওয়াশিংটন।
জাতিসংঘ: ‘নীতি লঙ্ঘনে’ নিন্দা
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাস বলেছেন, রাশিয়ার সিদ্ধান্ত ‘ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘের সনদের নীতির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ’।
নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি সভা
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো যিনি ইউক্রেন ইস্যুতে সোমবার পর্যন্ত কূটনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তিনি পুতিনের এই সিদ্ধান্তের পর মস্কোর উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানান।
এছাড়াও ম্যাঁক্রো তার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকেরও আহ্বান জানান।
যুক্তরাজ্য: ‘শক্তিশালী’ নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি
যুক্তরাজ্যের প্রেসিডেন্ট বরিস জনসন পুতিনের এই সিদ্ধান্তকে ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেন রাশিয়ার প্রথম আক্রমণের সাথে সাথে একটি শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাজ্য।
জার্মানি: মস্কো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, মস্কো ২০১৪ সালে স্বাক্ষরিত মিনস্ক শান্তি চুক্তি ভঙ্গ করেছে।
তিনি বলেন, রাশিয়া তাদের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে করা তাদের সকল প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করেছে।
ন্যাটো: ইউক্রেনে আক্রমণের অজুহাত খুঁজছে রাশিয়া
ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেরবার্গ বলেন, পুতিনের সিদ্ধান্ত ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতাকে ক্ষুণ্ন করেছে, তারা এই সংঘর্ষের সমাধানের পথ বন্ধ করে দিচ্ছে এবং মিনস্ক চুক্তি লঙ্ঘন করছে।
মস্কো ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আর্থিক এবং সামরিক সহায়তা প্রদান করে এই সংঘর্ষে আরও ইন্ধন জোগাচ্ছে। যার মাধ্যমে মস্কো ইউক্রেনে আক্রমণের অজুহাত খুঁজছে বলে জানান তিনি।
ইইউ: সংঘবদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রতিশ্রুতি
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দুই জ্যেষ্ঠ নেতা উরসুলা ভন ডার লেইন এবং চার্লস মিশেল টুইটারে পুতিনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অভিন্ন বার্তা প্রকাশ করেছেন।
বার্তায় তারা বলেন, পুতিনের সিদ্ধান্ত ‘আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এর অংশীদারেরা এই বিষয়ে সংঘবদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানাবে।
সার্বিয়া: সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে
সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সেন্ডার ভুসিস ইউক্রেন সংক্রট ইউরোপ এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশ বিশেষত পশ্চিম বলকানে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন।
রোমানিয়া: ভ্রমণ সতর্কতা
রোমানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউক্রেনে অবস্থানরত রোমানিয়ার সকল নাগরিককে দ্রুত দেশটি ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন।
জাপান: সংঘবদ্ধ প্রতিক্রিয়া
জাপানের প্রেসিডেন্ট ফুমিও খিসিদা বলেছেন, রাশিয়া সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতাকে লঙ্ঘন করে যা সহ্য করা যায় না।
তিনি বলেছেন, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আক্রমণ করে তবে জি-৭ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে নিষেধাজ্ঞাসহ কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
ভারত: ধৈর্য ধরার আহ্বান
ভারতের রাষ্ট্রদূত টি. এস. তিরুমুরতি উদ্ভূত এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে ধৈর্য রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এখন অগ্রাধিকার হলো উত্তেজনা হ্রাস করা এবং সমস্ত দেশের বৈধ সুরক্ষা এবং এই অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদি শান্তির সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে কাজ করা।
চীন: ‘জটিল কারণ’ দায়ী
রাশিয়ার নিকটতম মিত্র বেইজিং কোনো পক্ষকে সমর্থন না দিয়ে এই উত্তেজনায় ইন্ধন দেয়; এমন কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীনের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেন, ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি অনেক জটিল কারণের ফল।
অস্ট্রেলিয়া: পুতিন ‘বেকুব’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, পূর্ব ইউক্রেনে পাঠানো সৈন্যদের শান্তিরক্ষী বলে দাবি করায় পুতিনকে ‘বেকুব’ বলে নিন্দা জানায়।
এটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব নয় যেখানে সংঘাতের হুমকি দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট দেশের স্বার্থ অর্জনের চেষ্টা করা হবে। তাই এমন কাজ যারা করে তাদের বিরুদ্ধে এক হয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত বলে জানান তিনি।