বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ছয় সেমিফাইনালের একটিতেও জয় পায়নি নিউজিল্যান্ড। সেই দলটিই টানা দুবার শেষ চারের বাধা পেরিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। রোববার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড।
শিরোপার মঞ্চে গত আসরের পরিণতি এড়াতে পারলে আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে পারবে কিউইরা। ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে শিরোপার স্বপ্ন বিসর্জন দেয়া দলটি এবার আর হারের বেদনায় দগ্ধ হতে চায় না!
নিউজিল্যান্ডের আসরের শুরুটা দুর্দান্ত হলেও ফাইনালে ওঠার পথটা মসৃণ ছিল না। দুর্দান্ত শুরুর পর পথ হারিয়ে ফেলে কেন উইলিয়ামসনের দল। শেষদিকে পথ হারিয়েও শ্রেয়তর রানরেটের কারণে সমান পয়েন্ট(১১) থাকা পাকিস্তানকে টপকে টেবিলের চতুর্থ দল হিসেবে সেমিতে জায়গা করে নেয় গত বিশ্বকাপের রানার্সআপরা। সেরা চারে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে ফাইনালে আসে নিউজিল্যান্ড।
দ্বাদশ আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে উড়ন্ত সূচনা পায় নিউজিল্যান্ড। শ্রীলঙ্কাকে ১০ উইকেট উড়িয়ে শুরুতে ইঙ্গিত দেয় দারুণ পথচলার। কিউইরা আগে বোলিংয়ে নেমে লঙ্কানদের মাত্র ১৩৬ রানে গুটিয়ে দেয়। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে মাত্র ১৬.১ ওভারে জয় নিশ্চিত করে উইলিয়ামসনের দল।
নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে হারাতে অবশ্য যথেষ্ট ঘাম ঝরাতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। বাংলাদেশের ফিল্ডিং ব্যর্থতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২ উইকেটের টানটান জয় পায় কিউইরা। টাইগারদের ছুঁড়ে দেয়া ২৪৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ২ উইকেট হাতে রেখে ৪৮তম ওভারে জয় নিশ্চিত করে দলটি।
তৃতীয় ম্যাচে কোনো ধরনের পরীক্ষায় পড়তে হয়নি নিউজিল্যান্ডকে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় জয় দিয়ে টেবিলে অবস্থান শক্ত করে কিউইরা। আফগানদের করা ১৭২ রান ৭ উইকেট ও ১০৭ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।
নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মাঠেই নামতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। বৃষ্টির কারণে কোনো বল মাঠে গড়ানোর আগেই ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়। তাতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে দুদল।
পঞ্চম ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে রোমাঞ্চকর জয় দিয়ে সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। প্রোটিয়াদের করা ২৪১ রান ৪ উইকেট হাতে রেখে ৪৯তম ওভারে পেরিয়ে যায় কিউইরা।
পরের ম্যাচে, তথা ষষ্ঠ ম্যাচে হারতে হারতে রোমাঞ্চকর জয় দিয়ে কার্যত সেমিফাইনাল নিশ্চিতই করে ফেলে নিউজিল্যান্ড। এবার তাদের শিকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিউজিল্যান্ডের করা ২৯১ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯তম ওভারের শেষ বলে ২৮৬ রানে গুটিয়ে যায় ক্যারিবিয়ানরা।
এরপরই ছন্দপতন ঘটে নিউজিল্যান্ডের। সপ্তম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৬ উইকেটে হেরে কিউইদের শঙ্কার শুরু। বার্মিংহামে নিউজিল্যান্ডের করা ২৪৩ রান ৫ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় সরফরাজের দল।
লন্ডনের কেনিংটন ওভালে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিয়েও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পেরে ওঠেনি নিউজিল্যান্ড। অজিদের করা ২৪৩ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫৭ রানে গুটিয়ে গিয়ে ৮৬ রানের হার জোটে উইলিয়ামসনের দলের।
লিগপর্বের শেষ ম্যাচেও হারের মুখ দেখে নিউজিল্যান্ড। এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৯ রানের বড় ব্যবধানে হার। তবে রানরেটে এগিয়ে থাকায় পাকিস্তানের সমান ১১ পয়েন্ট নিয়েও সেমিতে জায়গা করে নেয় গত বিশ্বকাপের রানার্সআপরা।
সেমিফাইনালে ভারত তো বটেই, গোটা ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে দেয় নিউজিল্যান্ড! শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের কোহলিদের বিপক্ষে মাত্র ২৩৯ রানের পুঁজি নিয়েও দুর্দান্ত জয়। মেলে ফাইনালের টিকিট। নিউজিল্যান্ড বোলারদের তোপে শেষ দিকের দুর্দান্ত লড়াই সত্ত্বেও ২২১ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। তাতে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে পা রাখে কিউইরা।
যেখান থেকে শিরোপা কেবল এক কদম দূরে!