রাজধানীর চারপাশে দখল হয়ে যাওয়া নদীর তীর উদ্ধারে সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, নদী দখলমুক্ত করে জনগণের সামনে নদীমাতৃক বাংলাদেশ উপস্থাপন করা হবে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর কামরাঙ্গিরচরের খোলামোড়া ঘাটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন কথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন: নদীর তীরবর্তী যেসব এলাকা দখলমুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো আবার কেউ দখল করার চেষ্টা করবে বলে আমি মনে করি না। কেউ যদি নদীর এলাকা দখল করার চিন্তা করেন, তাহলে ভুল করবেন। আগের সরকার আর বর্তমান সরকার এক নয়। আমরা যা বলে তা-ই করি।
কেউ দখলের চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন: নদীগুলোকে দখলমুক্ত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একে একে সবগুলো নদী দখলমুক্ত করে নদীমাতৃক বাংলাদেশকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রথম পর্যায়ে ৬ জুলাই থেকে নদী বন্দর এলাকায় ৩ হাজার ৮০৩টি আরসিসি সীমানা পিলার, রামচন্দ্রপুর থেকে বসিলা ও রায়েরবাজার খাল থেকে কামরাঙ্গিরচর পর্যন্ত এক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, এক কিলোমিটার কিওয়াল, আড়াই কিলোমিটার ওয়াকওয়ে অন পাইল নির্মাণ করা হবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এগুলোর স্থাপন কাজ শেষ হবে।
এছাড়া, বিআইডব্লিউটিএ’র আরেক প্রকল্পের আওতায় নদীর তীরে ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ১০ হাজার ৮২০ টি সীমানা পিলার, তিনটি ইকোপার্ক, ১৯টি আরসিসি জেটি, ১০০ টি আরসিসি সিঁড়ি, ৪০৯ টি বসার বেঞ্চ, ৪৪ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। ৮৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের জুন মাসে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন: নদীগুলো দখল করা হয়েছে বিষয়টি আমি মানতে নারাজ। আমি বলবো, ইতোপূর্বে রাষ্ট্র এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শুধুমাত্র নদী দখল নয়, আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশের পরিচয় বদলে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
দখলদারদের হাতেই সবকিছু তুলে দেয়া হয়েছিলো। সেই সময় রাষ্ট্র কোন ভূমিকা নেয়নি বলেই নদীগুলো দখল হয়ে গেছে।
আগামী ১০ বছরের মধ্যে বুড়িগঙ্গাসহ সকল নদীকে দখল ও দূষনমুক্ত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। নদীগুলো মানুষের উপকারী হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।
মসজিদ-মাদ্রাসা স্থাপন করে নদী দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন: আমরা ইসলামী চিন্তাবিদদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে, অবৈধ জায়গায় মসজিদ হতে পারে না। তাই আমরা অবৈধস্থানে স্থাপিত মসজিদগুলো অপসারণ করে অন্য একটি স্থানে স্থাপনের ব্যবস্থা করছি।
নদীর জায়গা দখলমুক্ত করার কার্যক্রমে যারা বাধা দিতে আসবেন তারা কেউই রেহাই পাবেন না। এ কার্যক্রমে কেউ হস্তক্ষেপ করলে তার পরিনাম হবে ভয়াবহ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন: যারা নদী দখল করে তাদের কোন পরিচয় নেই। তারা যে সরকার ক্ষমতায় আসে সেই দলের নেতাদের ঘাড়ে পাড়া দিয়ে দখল কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। কিন্তু আমরা নদী দখলদারদের প্রশ্রয় দেবনা।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ।
বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরে সীমানা পিলার স্থাপন, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো নির্মান প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।