রাশিয়া বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর বাকি ষোলো দিন। তার আগে ইউরোপ সেরার আসর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে এক ভয়ঙ্কর ও লজ্জাজনক রাতের সম্মুখীন হয়েছেন লিভারপুল গোলরক্ষক লরিস কারিউস। জার্মান কিপারের ভুলে দুটি গোল উপহার পায় রিয়াল মাদ্রিদ। বিশ্বকাপের সব গোলকিপাররা এখন সমানভাবে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন যাতে করে কারিউসের মতো একই স্পটলাইটে নিজেদের বসতে না হয়।
সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত যাই হোক না কেনো, কারিউসকে বিশ্বকাপ দলে ডাকেননি জার্মান কোচ জোয়াকিম লো। তাতে পরের মৌসুম শুরু হওয়ার আগে তিনি হয়ত নিজের পারফরম্যান্সের আলোচনা ঢেকে ফেলতে পারবেন। কিন্তু ডেভিড ডি গিয়া, ম্যানুয়েল নয়্যার এবং কেইলর নাভাসের মতো অন্য গোলরক্ষকদের দেশের হয়ে সেরা পারফরম্যান্সের সুযোগ থাকছে বিশ্বকাপেই।
আগের দুটি বিশ্বকাপ আসরে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইকার ক্যাসিয়াস ও ম্যানুয়েল নয়্যার। তবে এই বছর ইনজুরির কারণে মৌসুমের বেশিরভাগ সময় খেলতে পারেননি নয়্যার। ক্যাসিয়াস এই বিশ্বকাপের দলে জায়গাই পাননি। কিন্তু তার উত্তরাধিকারী ডি গিয়া সমান কঠিন প্রতিপক্ষ। তেমনি পাঁচজন গোলরক্ষকের দিকে তাকানো যাক; যারা বিশ্বকাপে জ্বলে ওঠার মতো প্রতিযোগী।
থিবো কোর্তোয়া (বেলজিয়াম)
লিভারপুলের সিমন মিগনোলেট থাকার পরও থিবো কোর্তোয়াই বেলজিয়ামের একনম্বর পছন্দের গোলরক্ষক। বেলজিয়ামের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী গোলরক্ষক হিসাবে অভিষেক হওয়ার পর দেশের জার্সিতে এপর্যন্ত ৫৫টি ম্যাচ খেলেছেন ২৬ বছরের কোর্তোয়া।
ব্রাজিল বিশ্বকাপেও প্রতিটি ম্যাচে দলের প্রথম একাদশে ছিলেন কোর্তোয়া। গত আসরে কোর্য়াটার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়া বেলজিয়াম এবার আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে। এবছর আরও সামনে এগোতে পারে হ্যাজার্ড-লুকাকুদের দল।
৬ ফুট ৬ ইঞ্চির কোর্তোয়া বিশ্বকাপের লম্বা গোলরক্ষকদের একজন। সেট পিচ এবং বাতাসে ভেসে বল আটকানোর দুর্দান্ত ক্ষমতা আছে তার। বেলজিয়াম তাই বিনা দ্বিধায় প্রতিটি ম্যাচে কোর্তোয়াকে দলে নিতে পারে।
অ্যালিসন বেকার (ব্রাজিল)
ব্রাজিল দলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটিতে দুর্দান্ত অভিষেক মৌসুম কাটানো এডারসন। গত মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাও জিতেছে সিটি। কিন্তু তারপরও বিশ্বকাপ মঞ্চে একনম্বর পছন্দ হিসাবে সেলেসাওদের গোলপোস্ট সামলাবেন অ্যালিসনই। এএস রোমার হয়ে নিজের দ্বিতীয় মৌসুমটা দারুণ কাটিয়েছেন তিনি।
সিরি আ’র তথ্য বলছে, গত মৌসুমে ৩৪ ম্যাচে দলের গোলপোস্ট সামলেছেন অ্যালিসন। তাতে ১৫ ম্যাচেই ক্লিনসিট পেয়েছেন তিনি। ম্যাচ প্রতি গোল হজমের গড় মাত্র ০.৭৯। প্রতি ম্যাচে গড়ে ৩.৪৯টি করে গোল সেভ করেছেন। সফলতার হার ৮৩%। যদিও তার দাবি গোল সেভের ক্ষেত্রে সফলতার হার ৯০% বেশি।
রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলে অ্যালিসন নিজেকে আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত করবেন। এরইমধ্য তিনি প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো নজরে আছেন। লিভারপুল তাকে দলে নিতে খুবই আগ্রহী। রোমার নজরকাড়া মৌসুম কাটানোর পর এখন বিশ্বকাপ মঞ্চে নজরেই থাকবেন অ্যালিসন।
ম্যানুয়েল নয়্যার (জার্মানি)
ইনজুরির কারণে সদ্যসমাপ্ত মৌসুমে মাত্র চারটি ম্যাচ খেলেছেন নয়্যার। যার মধ্যে অবশ্য এক ম্যাচে গোল হজম করতে হয়েছে তাকে। তার জায়গা নিতে প্রস্তুত হয়ে আছেন বার্নড লিনো ও মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন। জার্মান জাতীয় দলের কোচ অবশ্য নয়্যারের দক্ষতার ব্যাপারে অকপট। তবে বিশ্বকাপের মূল একাদশে খেলতে হলে বায়ার্ন তারকাকে অবশ্যই পুরোপুরি ফিট প্রমাণ করতে হবে।
গত কনফেডারেশনস কাপে দলের গোলবার পাহারায় ছিলেন স্টেগেন। অনেক সমর্থক তাই বার্সেলোনা কিপারকেই বিশ্বকাপ মঞ্চে দেখতে চাইবেন। তারপরও অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে জার্মান কোচ জোয়াকিম লো ৩১ বছরের নয়্যারের ওপরই আস্থা রাখবেন বলে জানিয়েছেন। কারণও আছে, কোচ লোর অধীনেই ২০১৪ বিশ্বকাপ জিতে গোল্ডেন গ্লোভ জিতেছিলেন নয়্যার।
ওজিচিক সজেনি (পোল্যান্ড)
ইতালিয়ান কিংবদন্তি গোলকিপার জিয়ানলুইজি বুফনের জন্য জুভেন্টাসে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি ওজিচিক সজেনি। তবে এবার বুফন ক্লাব ছাড়লে নিশ্চিতভাবেই জুভদের একনম্বর কিপার হবেন তিনি। তার দেশ গত দুটি আসর মিস করলেও এবার বিশ্বকাপ অভিষেক হচ্ছে সজেনির। ২০০৬ বিশ্বকাপের ব্যাকআপ কিপার হিসাবে অভিজ্ঞায় সজেনির চেয়ে এগিয়ে আছেন আর্সেনালে থাকার সময় তারই সতীর্থ লুকাজ ফ্যাবিনাস্কি। তারপরও বিশ্বকাপ আসরে দেশের একনম্বর ভরসা হবেন সজেনিই।
২৮ বছরের পোলিশ গোলকিপার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে চাঙা সময়ে আছেন। ক্যারিয়ারের বেশিভাগ সময় আর্সেনালে কাটিয়েছেন। গার্নারদের সঙ্গে থাকার সময় ডেসিংরুমে ধুমপান করা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। তবে লোনে জুভেন্টাসে যাওয়ার পর নিজের ভেতরে পরিপক্কতা এনেছেন, সেইসঙ্গে শক্তিশালীও হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি পেনাল্টি সেভ করার কৌশলের সঙ্গেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। রাশিয়ায় নজরে থাকবেন সজেনিও।
ডেভিড ডি গিয়া (স্পেন)
রাশিয়া বিশ্বকাপে সেরা গোলরক্ষকের অ্যাওয়ার্ড জয়ের অন্যতম দাবিদার ডেভিড ডি গিয়া। ১৮ ম্যাচে গোল হজম না করে গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের সেরা হয়েছেন তিনি। পেপে রেইনা ও ইকার ক্যাসিয়াসের পেছনে ফেলে স্পেনের ২৩ সদস্যের দলে নাম উঠেছে তার। দুরপাল্লা ও জোড়াল শট সেভ করতে দারুণ সক্ষম ডি গিয়া। প্রিমিয়ার লিগে এই মৌসুমে ম্যাচ প্রতি গড়ে ৩.৫৮টি করে গোল সেভ করেছেন। সফলতার হার ৮৬%। ইংল্যান্ডে যেটা সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানটাও খুব খারাপ না ডি গিয়ার। স্প্যানিশ জার্সি ২৭ ম্যাচে গোলবারের নিচে দাঁড়িয়ে ১৪ ম্যাচেই ক্লিন সিট পেয়েছেন। স্পেনের গ্রেট জার্নিতে সারথী হয়ে এবার নিজেকে বিশ্বসেরা হওয়া সুযোগ ডি গিয়ার সামনে।