পোশাক শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে নগদ সহায়তার ওপর আয়কর কর্তনের হার আগামী ৫ বছরের জন্য শূন্য শতাংশ করাসহ ১৭ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রস্তাবনা তুলে ধরে বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধিদল।
সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন, বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী এমপি, সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) এমপি, বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন, সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী, পরিচালক আসিফ আশরাফ, পরিচালক মোহাম্মদ মেরাজ-ই-মোস্তফা (কায়সার) ও সাবেক পরিচালক মুনির হোসেন প্রমুখ।
এছাড়া বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং এনবিআরের পক্ষ থেকে সদস্য (আয়কর নীতি) আলমগীর হোসেন, সদস্য (শুল্ক নীতি) সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া, সদস্য (ভ্যাট নীতি) মাসুদ সাদিক ও সদস্য (ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. আব্দুল মান্নান শিকদার উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, করোনা মহামারিতে পোশাক শিল্প ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। এনবিআরের পক্ষ থেকে শিল্পকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর সংক্রান্ত নীতি সহায়তা দেয়া হলে তা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
বিজিএমইএর প্রতিনিধিদের আশ্বাস দিয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, প্রস্তাবগুলো গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করে যৌক্তিকতা অনুযায়ী সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভ্যাট রিটার্ন দাখিল বাদ দেয়া যাবে না। তবে সব প্রতিষ্ঠান যদি নিয়মিতভাবে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে, তাহলে অতিরিক্ত কোনো প্রত্যয়নপত্র লাগবে না।
এনবিআরের কাছে বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলের উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো হলো:
পোশাক শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নগদ সহায়তার ওপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা এবং তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখার দাবি।
রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর দশমিক ৫ শতাংশ চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে গণ্য করে আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখতে হবে।
তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য করপোরেট ট্যাক্স হার ১২ শতাংশ এবং গ্রিন কারখানার জন্য ১০ শতাংশ আগামী ৫ বছর পর্যন্ত রাখা। রপ্তানির স্বার্থে তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শুল্কমুক্ত-রেয়াতি হারে ও আমদানির অনুমতি দেয়ার অনুরোধ।
এসআরও তালিকাভুক্ত সব অগ্নি-নির্বাপণ পণ্য-উপকরণ বিকল বা নষ্ট হলে অগ্নি-প্রতিরোধক দরজার ন্যায় একই শর্তে প্রতিস্থাপনের জন্য রেয়াতি হারে শুল্কায়নের মাধ্যমে আমদানির সুবিধা দেয়া।
ইপিজেডের ভেতরের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাব-কন্ট্রাক্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য অস্থায়ী বন্ড স্থানান্তর প্রক্রিয়া সহজ করা।
ইউডি বহির্ভূত ব্যাক টু ব্যাক এল-সির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত কাঁচামাল-উপকরণ ইউডি সংশোধনীর মাধ্যমে নিরীক্ষায় সমন্বয় পূর্বক নিরীক্ষাকার্য সম্পাদনের জন্য কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া।
সূতা থেকে নিট গার্মেন্টস উৎপাদনে অপচয় হার বাড়ার কারণে জরিমানা আরোপ ও কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না করে রপ্তানিতে সহযোগিতা করা।
তৈরি পোশাক শিল্পের ওভেন গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে বার্ষিক নিরীক্ষার সময়ে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ নির্ধারণে কেজির পরিবর্তে আগের মতেই গজ-মিটার বা স্ব-স্ব একক ব্যবহার করা।
বন্ড লাইসেন্সধারী প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা যেমন-প্যাকেজিং, কার্টুন, হ্যাঙ্গার, প্লাস্টিকজাত পণ্য, এক্সেসরিজ ও সুয়েটারের সূতা শতভাগ রপ্তানিমুখী বন্ড লাইসেন্স বিহীন প্রত্যক্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করার নিমিত্তে পূর্বের ন্যায় ইউপি জারি অব্যাহত রাখা।
বন্ড লাইসেন্সে ও কাঁচামালের বিবরণ অন্তর্ভুক্তির জটিলতা নিরসন করা। ফেরতকৃত পণ্য পুনঃরপ্তানির ক্ষেত্রে মেয়াদ ৬ মাসের পরিবর্তে ১ বছর বাড়ানো। আইজিএম দাখিলের পরবর্তী সময়ে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র করা হলে জরিমানা না করা। কারখানা এক অধিক্ষেত্র থেকে অন্য অধিক্ষেত্রে স্থানান্তরে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করার অনুরোধ।
অগ্নি-নির্বাপক উপকরণের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন লে-আউট প্ল্যানের ভিত্তিতে একাধিকবার পণ্য চালানের মাধ্যমে আমদানির ক্ষেত্রে জরিমানা/ডিমান্ড না করা। প্রাইভেট আইসিডিসমূহ কর্তৃক রপ্তানিতে ভ্যাট আদায়ের উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে।
বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য বন্ড লাইসেন্সবিহীন সহযোগী রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করার নিমিত্তে আগের মত ইউপি জারি অব্যাহত রাখা।
সূতা থেকে নিট গার্মেন্টস উৎপাদনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত কমিটি কর্তৃক অপচয় বৃদ্ধির হার পুনঃনির্ধারণ ও সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন সংস্থার প্রদেয় সেবাগুলো ও বার্ষিক নিরীক্ষা, জরিমানা আরোপ ও উৎপাদন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না করে রপ্তানিতে সহযোগিতা করা।