ইউটিউবে নিয়মিত ঘোরাফেরা করেন এমন অনেকের চোখেই হয়তোবা ‘নবাব কিচেন ফুড ফর অল অরফান’ চ্যানেলটি চোখে পড়েছে। চ্যানেলটি দেখলে অবাক না হয়ে উপায় নেই। নওয়াব কিচেনের বাসিন্দা মূলত ১২০০ এতিম শিশু।
তাদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রান্না করে খাওয়ান খাজা মইনুদ্দি নামের তেলেগুর এক প্রাক্তন সাংবাদিক। অন্যের মুখে হাসি ফোটানোই তার আনন্দ। ৩৮ বছর বয়স্ক এই মানুষটি খাবার নিয়ে ইউটিউবে এখন পর্যন্ত ২২০ টি ভিডিও শেয়ার করেছেন। আর তার সাবস্ক্রাইবার সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে ৭ লক্ষ।
তবে উদ্যেগ পাঁচ বছর আগেই মইনুদ্দিন তার দুই বন্ধু শ্রীনাথ রেড্ডি এবং ভাগাত রেড্ডিকে নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। তারা এমন কিছু করতে চেয়েছিল যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একধরণের হইচই ফেলে দেয়।
২০১৭ সালে খাবারের একটা চ্যানেল খোলেন ইউটিউবে। যেখানে রান্নার সময় মইনুদ্দিনকে শ্রীনাথ এবং ভাগাত রেড্ডি সাহায্য করে।
শুরু থেকেই মইনুদ্দিন তার রান্নার জন্য জনপ্রিয়। কারণ এত পরিমাণ রান্নার উপকরন দিয়ে বড় কড়াই বা পাতালে কেউ কখনো রান্না দেখায় নি।
প্রথমে তারা রান্না করার পর আশেপাশে যে বাচ্চারা থাকত তাদেরকেই খাবার গুলো খেতে দিত। কিন্তু আস্তে আস্তে মইনুদ্দিনের মাথায় আসলো রান্নার পরিমাণটি যদি বাড়িয়ে দেয় তাহলে এতিম শিশুদের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
প্রতিমাসে বিভিন্ন এতিমখানা থেকে প্রায় ১২০০ জন এতিম শিশু এই খাবার খেতে শুরু করে। পরে এটা ছড়িয়ে গেলে অনেক রাস্তার শিশুরাও এই খাবার খুব পছন্দ করে খায়।
ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর মইনুদ্দিন প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনটি খাবার রান্না করে এতিম শিশুদের জন্য।
তবে কিছুদিন শুটিং করার পর তারা তাদের জমানো সব টাকা শেষ করে ফেলে। এর মধ্যে অনেকের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে পড়ে চ্যানেলটি। তারা আরও ভিডিও দেখার আবেদন করতে থাকে।
তারমধ্যে কিছু ভিউয়ার তাদের অর্থায়ন দেয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখায়। ওই ১৮ জনের এমন ইতিবাচক আগ্রহ দেখে তারা আবার শুরু করে শুটিং।
‘নবাব কিচেন ফুড ফর অল অরফান’ চ্যানেলটি প্রথম ভাইরাল হয় ‘পেন কেক’ তৈরির ভিডিও দিয়ে। কেকটি ওভেন ছাড়াই কাঠ পোড়ানো চুলাতে বানানো হয়েছে।
সম্প্রতি মইনুদ্দিন ২৫ কেজি ওজনের একটা ‘ব্ল্যাক ফরেস্ট ‘ কেক বানিয়েছে। তবে ভিডিওটা বানাতে তাদের দলের সময় লেগেছে পাক্কা ৫ ঘণ্টা। মইনুদ্দিন বলেছে, এই ভিডিওটি তখনই সার্থক হয়েছে যখন তিনি এতিম শিশুদের মুখে হাসি দেখেছেন।
একটা ভালো বেতনের চাকরি ছেড়ে অন্যকে খুশি করার স্বপ্নে মইনুদ্দিনের এমন উদ্যোগ যা সমাজ পরিবর্তনের অনুসঙ্গ।