দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সম্প্রতি স্বীকার করেছিলেন, দুদকের করা মামলার ৭০ শতাংশই চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধে হয়েছে। দুর্নীতির বড় বটগাছ উপড়ে ফেলা কষ্টকর, কিন্তু তারপরও বড়দের ধরতে সচেষ্ট দুদক।
দুদক যে এ বিষয়ে সচেষ্ট, চলতি সপ্তাহের শুরুতেই দু’টি খবরে তার প্রমাণ পাওয়া গেল। অবশ্য এই দু’টি প্রতিবেদন একইসঙ্গে আশার এবং বেদনাদায়ক। এর মধ্যে একটি হলো- ঘুষের টাকাসহ সিলেটের ডিআইজি (প্রিজন) গ্রেপ্তার, আর অন্যটির শিরোনাম, ঘুষ নেয়ার সময় দুদকের হাতে আটক গৃহায়ণের দুই কর্মকর্তা।
চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদনে জানা যায়: রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিকের বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা পাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক।
এই অর্থ ঘুষের দাবি করে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: রোববার তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবহেলায় জড়িত থাকার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর তার রাজধানীর ধানমণ্ডির ভূতের গলির বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখানে ঘুষের ৮০ লাখ টাকা পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অন্যদিকে দিনাজপুরে বাড়ি বরাদ্দের জন্য ঘুষ গ্রহণকালে ৬০ হাজার টাকাসহ জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ দিনাজপুর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইনসহ দু’জনকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আটক করা হয়েছে একজন উপসহকারী প্রকৌশলীকেও।
রোববার রাত সাড়ে ৮টায় গোপনে অভিযান চালিয়ে বাড়ি বরাদ্দের জন্য আবেদনকারীর কাছ থেকে নগদ ঘুষ গ্রহণকালে নিজ কার্যালয় থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইনকে আটক করা হয়। এ সময় দুদকের উপস্থিতি টের পেয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াদুদ পালিয়ে যায়। পরে তাকেও আটক করে দুদক।
এই দুই ঘটনায় বুঝা যায়, সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতি কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আশার বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের হাত থেকে তারা রেহাই পায়নি। এর আগে ডিআইজি মিজান এমনকি খোদ দুদকের একজন পরিচালকও দুর্নীতি করে পার পেয়ে যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকার গঠনের আগেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছিলেন। নির্বাচনের আগেও তিনি এ বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় দুদকের এই শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেই আমরা আশা করি। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চুনোপুঁটিদের পাশাপাশি দুর্নীতির রাঘব বোয়ালদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।