সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ইভিএম বাতিল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার বন্ধ করা, নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রভৃতি ৭টি দাবি পূরণে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসভা করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকার পর চতুর্থ জনসভাটি হবে আজ রাজশাহীতে। দুপুর ২টায় রাজশাহী মহানগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে এই সমাবেশ শুরু হবে।
দুপুর ২টা থেকে ৫টার মধ্যে জনসভা শেষ করতে হবে, মিছিল নিয়ে সভায় যোগ দেয়া যাবে না, মাঠের বাইরে মাইক দেয়া যাবে না, বিশৃঙ্খলা হয় এমন কিছু করা যাবে না, রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দেয়া যাবে না – এ রকম ১২টি শর্তে জনসভার অনুমতি পেয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।
সমাবেশে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বক্তব্য রাখবেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রাজশাহী বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো। বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা আসবেন।
রাজশাহী বিএনপি নেতা ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু জানান, রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকার পতনের গণআন্দোলনের আহ্বান আসবে।
জনস্রোত রুখতে আকস্মিকভাবে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে মিনু বলেন, সরকার ঐক্যফ্রন্টের জনসভা বানচাল করতেই এটা করেছে। প্রশাসনের অতি উৎসাহী কর্মকর্তারা নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশির নামে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করছে। প্রচার কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে।
নাগরিক ঐক্যের রাজশাহী বিভাগীয় যুগ্ম সমন্বয়ক মোহান্মদ আব্দুল বারী জনসভার প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, ‘প্রস্তুতি সম্পন্ন। রাজশাহী জুড়ে পোস্টার, ব্যানার, মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি সম্বলিত হ্যান্ডবিল বিলি করা হয়েছে। লক্ষাধিক লোক সমাগম হবে বলে আশা করছি৷’
প্রথমে রোডমার্চ পরবর্তী জনসভার পরিকল্পনা থাকলেও পরে হঠাৎ রোডমার্চ স্থগিত ঘোষণা করে জনসভার কর্মসূচি বহাল রাখে ঐক্যফ্রন্ট।
জনসভায় যোগ দিতে রাজশাহীতে আছেন কাদের সিদ্দিকী। হঠাৎ রোডমার্চ স্থগিত করে শুধু জনসভা দিয়ে কি ৭ দফা দাবি আদায় হবে – এ প্রশ্নের জবাবে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ হলে দাবি পূরণ হয়। বিদ্যমান ঐক্য যত বেশি শক্তিশালী হবে ততই দাবি আদায় হবে। লিবিয়ার কর্নেল গাদ্দাফি ৪২ বছর শাসন করেছে। কিন্তু তার নির্মম পতন হয়েছে। যদি একদিন আগেও পদত্যাগ করতেন তাহলে তার নির্মম পতন হত না। এগুলো আমাদের জন্য শিক্ষা। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। জনগণকে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যাওয়া। জনগণই দাবি আদায় করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঐক্যফ্রন্ট নেতার মতে, জনসভা করেই চুপ থাকবে না ঐক্যফ্রন্ট। ঢাকায় বিশাল গণ জমায়েত হবে। সরকার যদি দাবি না মানে ১০-১২ লাখ লোক একত্রে মিলে রাজধানী অচল করে দেয়ার মতো কর্মসূচি আসবে।
রাজশাহীর জনসভার পর ঐক্যফ্রন্ট বরিশাল, ময়মনসিংহ, রংপুর, কুমিল্লায় জনসভা করবে। কিছু ক্ষেত্রে লংমার্চ করবে। এরপর চূড়ান্ত আঘাত হানতে পারে ঐক্যফ্রন্ট। তবে সরকার যদি দাবি মেনে নেয় আর কোন কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না বলছেন ঐক্যের নেতৃবৃন্দ।
গত ৭ নভেম্বর দ্বিতীয় বার সংলাপ শেষে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে দাবি আদায় করতে চাই। বল এখন সরকারের কোর্টে।’