জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এনে দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মৌন মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে পৃথকভাবে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রজোট সহ বিভিন্ন বিভাগ ও হলের শিক্ষার্থীদের একাধিক দল।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে পাদদেশে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে প্রশাসনের এই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে শিক্ষার্থীরা বলেন, আরমান ও সানাউলের বহিষ্কারাদেশ কিছুতেই মেনে নেয়া হবেনা। এটি প্রত্যাহার করতে হবেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়পক্ষ অভিযোগপত্র দিলেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে বিনা তদন্তে ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এতে প্রশাসন শিক্ষকদের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করেছে আমাদের।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের একটি মৌন মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে শেষ হয়। মানববন্ধন ও মৌন মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও সংগঠনের একাদিক দল।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে উপাচার্যের সাথে দেখা করে বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনার দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ। পরে একই দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীবৃন্দ।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাদের বলেন, আরমানকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ডিসিপ্লিনারী বোর্ড। এটি সিন্ডিকেটে উঠলেই তা কার্যকর হবে না হবে তা নির্ধারিত হবে।
দ্বিতীয় দফায় উপাচার্যের সাথে দেখা করতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রায় কয়েক’শ শিক্ষার্থী। এসময় বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনার দাবিতে স্মারকলিপি জমা দিলে উপাচার্য তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আরমান ও সানাউলকে বহিষ্কার করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারী বোর্ড থেকে সুপারিশপত্র পাঠানো হয়েছে কেবল। সিন্ডিকেট থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
এসময় আইন ও বিচার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আরমানের সহপাঠীরা আসন্ন ফাইনাল পরীক্ষায় আরমান অংশগ্রহণ না করতে পারলে ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করলে উপাচার্য বলেন, আরমানকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। সিন্ডিকেট সভায় ব্যাপারটি পেশ করা হবে।
গত ২৬ জানুয়ারি দুপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার খাবারে দোকান সংলগ্ন রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করাকে কেন্দ্র করে দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক নাহরিন ইসলাম খান ও উম্মে সায়কা।
ওইদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর আরমানুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সানাউল হকের নাম উল্লেখ করে প্রক্টর বরাবর ‘মৌখিক লাঞ্ছনার’ লিখিত অভিযোগ করেন দুই শিক্ষক। পরে আরমানুল ইসলাম খান প্রক্টর বরাবর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগে অশোভন আচরণ, শারীরিক লাঞ্ছনা ও হুমকির বিচার চেয়ে আবেদন করেন।
এরপর দুই সহকর্মীকে লাঞ্ছনার অভিযোগে রোববার থেকে বিভাগের ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা। একই দিন শিক্ষকরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। পরে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়া তড়িঘড়ি করে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে আরমান ও সানাউলকে বহিষ্কারের আদেশের এমন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।