প্রস্তাবিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে’র খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর থেকেই তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখা গেছে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে ‘#আমিগুপ্তচর’ হ্যাশট্যাগ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সাংবাদিকদের কাছে।
ওই আইনের খসড়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার অনেককেই দেখা গেছে নিজেদের ফেসবুকে প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করতে। না, আলাদা কোনো ফ্রেমে নয়, কাগজে ‘#আমিগুপ্তচর’ লিখে ছবি তুলে নতুন প্রোফাইল ছবি হিসেবে তা আপলোড করেছেন তারা।
সমালোচনার মুখে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে প্রস্তাবিত নতুন আইনের খসড়ায় দেখা যায় বিতর্কিত ৫৭ ধারার অপরাধগুলোকেই ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’– ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে চারটি ধারায় ৫৭ ধারার অপরাধগুলো ভাগ করে রাখা হয়েছে।
তবে এই আইনের ৩২ ধারা নিয়েই বিতর্ক হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এই ধারায় ডিজিটাল অপরাধের বদলে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য সাজা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- কোনো সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ঢুকে কেউ কোনো কিছু রেকর্ড করলে তা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে। এর জন্য ১৪ বছরের জেল এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
এর প্রতিবাদেই সোচ্চার হয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়।
একাত্তর টিভির বিশেষ প্রতিনিধি পারভেজ নাদির রেজা, প্রতিনিধি কাবেরী মৈত্রেয়, হাবিবুর রহমান রিখেছেন: “কোন ব্যক্তি বেআইনী প্রবেশের মাধ্যমে কোন সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বা বিধিবদ্ধ কোন সংস্থার অতিগোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল যন্ত্র, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিডিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহলে সেই কাজ হবে কম্পিউটার বা ডিটিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ। আর এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। কেউ যদি এই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করেন, তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।”
তারা আরো লিখেছেন: “মন্ত্রিসভায় পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ নম্বর ধারার এই অপরাধ আমি আমার সাংবাদিকতা জীবনে বহুবার করেছি। যেহেতু আমি আমার অনেক সহকর্মীর মতো এই পেশা এখনো ছেড়ে যাইনি, বিদেশে পাড়ি দেইনি। যেহেতু আগামী দিনগুলোতেও সাংবাদিকতা করেই যেতে চাই। সেহেতু আমি নিজেকে আইনের ভাষায় গুপ্তচর হিসেবে ঘোষণা করলাম। আজ থেকে শুরু হোক ‘#আমিগুপ্তচর’ শ্লোগানের আন্দোলন। আসুন স্বঘোষিত এই গুপ্তচরকে গ্রেপ্তার করুণ এবং সাংবাদিকতার গলাটিপে হত্যা করার মিশনে সফল হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। #আমিগুপ্তচর
মাছরাঙা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার মাজহার মিলন #আমিগুপ্তচর লিখে তার ফেসবুক প্রোফাইল ছবি করেছেন এবং লিখেছেন:
#আমিগুপ্তচর
এই দেশে অসাধুরাই সবচেয়ে শক্তিশালী। গোপনীয়তার সংস্কৃতি চর্চায় কঠোর অবস্থান তাদেরই। কোনটা গোপনীয় আর কোনটা ”পাবলিক/ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট” সেই ব্যাখ্যা কে দেবে? অসাধুদের মুখোশ উম্মোচনের উপায় তাহলে কি? অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দিন কি শেষ হয়ে এল? গণমাধ্যম আর সাংবাদিকতার টুটি চেপে ধরতে এই আইনের ব্যবহার হবে না সে নিশ্চয়তা কে দেবে?
দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র প্রতিনিধি জামিউল আহসান শিপলু লিখেছেন: ভালই তো। আমরা এখন “গুপ্তচর”।
যমুনা টিভির সাংবাদিক শোয়েইব হোসেন #আমিগুপ্তচর লিখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এভাবে আরো অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।