রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মো. হাসান আলী ওরফে হাসেন আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬টি অভিযোগ এনেছিলো রাষ্ট্রপক্ষ। এসব অভিযোগের মধ্যে ছিলো গণহত্যা, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ইত্যাদি।
প্রথম অভিযোগ: হাসান আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৭ এপ্রিল সহযোগী রাজাকারদের নিয়ে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার সাচাইল গ্রামের হাসান আহমেদ ওরফে হাসু ব্যাপারীর ৭টি ঘরে লুটপাট চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে হাসুকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ: একাত্তরের ২৩ আগস্ট তাড়াইল থানার বাড়তি ইউনিয়নের কোনা ভাওয়াল গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া ওরফে লালু ভূঁইয়াকে হত্যা করে দুটি ঘরে লুণ্ঠন ও দু’জনকে অপহরণ করে আটকে রাখে।
তৃতীয় অভিযোগ: ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর তাড়াইল থানার শিমুলহাটি গ্রামের পালপাড়ার আক্রুর পালসহ ১২ জনকে হত্যা ও ১০টি ঘরে লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগ করে। আগুন লাগার পর যখন পুরুষেরা বের হচ্ছিল, তখন তাদেরকে ধরে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে হাসান ও তার সহযোগীরা।
চতুর্থ অভিযোগ: একাত্তরের ২৭ সেপ্টেম্বর তাড়াইল থানার ভোরগাঁও গ্রামের বেলংকা রোডে সতীশ ঘোষসহ ৮ জনকে হত্যা ও ১০ জনকে অপহরণ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটে হাসান আলীর নেতৃত্বে। ওই দিন বর্তমান নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার পাকুড়া গ্রামে ৮ জন পুরুষ ও ৪-৫ জন নারী ভারতে যাওয়ার জন্য নৌকাযোগে তাড়াইলে আসেন। নৌকার ৮ যাত্রীকে গুলিকরে হত্যা করেন হাসান ও তার সহযোগীরা। নৌকার ছইয়ের ওপর থেকে আরও তিনজনকে নামিয়ে আনা হয়। যাদের হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে ছিল মঞ্জুবালা ঘোষ, সুরেশ চন্দ্র ঘোষ, জগদীশ চন্দ্র ঘোষ, কৃষণ চন্দ্র ঘোষ শিবু, সুকুমার ঘোষ ও রুহিনী চন্দ্র ঘোষ।
পঞ্চম অভিযোগ: একাত্তরের ৮ অক্টোবর হাসান আলীর নেতৃত্বে তার রাজাকার বাহিনী তাড়াইল থানার তাল জাঙ্গলা ইউনিয়নের আড়াইউড়া গ্রামের চামেলী কুমার ঘোষের বাড়িতে আক্রমন করে। সেখানে কামিনী কুমার ঘোষ এবং জীবন ঘোষকে হত্যা করে ৬টি ঘরে লুটপাট চালায়। রাজাকার বাহিনী জীবন কৃষ্ণ ঘোষের স্ত্রী মিলন রানী চক্রবর্তীকে ভয় ভীতি দেখিয়ে সোনা রুপা লুট করে। এরপর জীবন ঘোষকে রাইফেলের বাঁট দিয়ে আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে হাসান আলীর নির্দেশে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর কামিনী কুমার ঘোষকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।
ষষ্ঠ অভিযোগ: দেশের স্বাধীনতার ৫ দিন আগে ১১ ডিসেম্বর হাসান আলীর নেতৃত্বে তাড়াইল থানার সাচাইল গ্রামের রাশেদ আলী ব্যাপারীকে হত্যা করা হয়। সেই সাথে লুণ্ঠন ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। ওই দিন রাজাকার বাহিনীর ৪০-৫০ জন সদস্য আব্দুর রশিদের বাড়ি ঘেরাও করে। এরপর তাকে ধরে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এর আগে ওই গ্রামে লুটপাট চালানো হয়।
ওই দিন ৬৪ টি হিন্দু পরিবারের ১০০টি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।