বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী প্রয়াত চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের নাম দেশের সকল স্থাপনা থেকে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মুক্তিযুদ্ধের সময় চাকমা সার্কেলের এই প্রধান পাকিস্তান বাহিনীকে সহযোগিতা করেন। বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পর তিনি পাকিস্তানে চলে যান। তারপর আর কোনদিন বাংলাদেশে ফেরেনি। ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রতি অানুগত্য রেখে সেদেশেই মারা যায় ত্রিদিব রায়। মৃত্যুর আগে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদায় আর্জেন্টিনায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পুরোসময়ই ত্রিদিব রায় পার্বত্য অঞ্চলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে তার কাজ চালিয়ে যায়। তার আহ্বানেই দলে দলে চাকমা যুবকেরা ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সে ভর্তি হয়। এ বিষয়ে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র-৯ম খন্ড’ ৯৩ পৃষ্ঠায় মীর শওকত আলীর (বীর উত্তম) উদ্ধৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘চাকমা উপজাতিদের সাহায্য হয়ত আমরা পেতাম। কিন্তু রাজা ত্রিদিব রায়ের বিরোধিতার জন্য তারা আমাদের বিপক্ষে চলে যায়।’ তীব্র পাকিস্তান প্রেমী এমন একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পরেও তার নামে খাগড়াছড়িতে রয়েছে ত্রিদিব নগর, ত্রিদিব নগর স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও সেসব স্থাপনা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়নি। তবে দেরিতে হলেও হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর সেই প্রক্রিয়ার সূচনা হলো। আমরা জানি; ত্রিবিদ রায়ের মতো সারাদেশেই অনেক স্বাধীনতাবিরোধীর নামে এমন হাজার হাজার স্থাপনা এখনো রয়েছে। সেগুলো থেকেও তাদের নাম দ্রুত মুছে ফেলা জরুরি। যদিও এরই মধ্যে সরকার আদালতের নির্দেশে তা সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক বিশেষ সভায় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা, সড়ক ও রাস্তাঘাট থেকে তাদের নাম মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেশের সব জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। তবে আমাদের জানা মতে ওই কাজ এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। এই কাজে অস্বাভাবিক ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ গত বছরের ৬ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব স্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম মুছে ফেলে সে বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু সেই নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। আর হয়নি বলেই ত্রিদিব রায়রা মরে গিয়েও বহাল তবিয়তে থাকে। আমরা চাই অতিদ্রুত এসব স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম মুছে ফেলে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক। এই কাজে আর কোন শিথিলতা আমরা দেখতে চাই না।