একটি জাতির সবচেয়ে কলংকিত অধ্যায় তার নিজেদের অস্তিত্বকে, নিজেদের জন্মকে অস্বীকার করা। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে কলংকিত দিন পনেরো আগস্ট। সহস্র বছরের ইতিহাসে হাতেগোনা কিছু মানুষ বহুমাত্রিক নেতৃত্বের মতো বিরল গুণের অধিকারী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর বিশাল মানবিক নেতৃত্ব দিয়েই লক্ষ মানুষের নেতা হয়েছিলেন, লক্ষ মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন, তাদের নিষ্প্রাণ দেহে প্রাণ সঞ্চার করতে পেরেছিলেন, সর্বোপরি বাঙ্গালির জন্য একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন করে দিয়েছেন। আর সেই সুমহান নেতার ঔদার্যে বেড়ে উঠেছিল কতিপয় হীন কৃতঘ্ন অমানুষ। এই পথভ্রষ্ট কতিপয় উম্মাদ তাকে দৈহিকভাবে নিষ্প্রাণ করে দিলেও, তাঁর ঐতিহাসিক যোগ্যতার কণামাত্র স্পর্শ করতে পারেনি।
বাঙ্গালির এক অতিকায় মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু। হাজার বছরের পিছিয়ে পড়া, পশ্চাৎপদ, অপমানিত, পরাধীন বাঙ্গালির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা বিরল এক সিংহহৃদয় নেতা বঙ্গবন্ধু। তাঁর ছিল মহাসাগরসম ঔদার্য। আক্ষরিক অর্থেই এই দেশ তার ঔদার্য ধারণ করতে পারেনি। নিরন্ন, দলিত-শোষিত বাঙ্গালির আজ যে স্বাধীন উত্থান, বিশ্বসভায় দাঁড়ানোর যে শক্তি, আত্মমর্যাদার অহংকার-এসবই একজন বড় মাপের মানুষের অবদান। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে, বাঙ্গালি যে কৃতঘ্নতার পরিচয় দিয়েছে, তাকে অস্বীকার করে, তাকে সংকীর্ণ-দলীয় বৃত্তে আবদ্ধ করে আমরা আরও অধিক অধঃপতিত জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে আসছি। মূঢ় মানুষের এইসব আত্মঘাতী প্রবণতা ইতিহাসের পাতায় পড়ে থাকে মলিন ধূসর হয়ে। কিন্তু ইতিহাসের সহস্র পৃষ্ঠা ওল্টালেও মিলবে না এমন মহান নেতার আলোকিত ঔদার্য।
জাতীয় জীবনের শোকবিধূর লগ্নে আমরা মনে করি, ইতিহাস বঙ্গবন্ধুকে তাঁর মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। তাঁকে কোনে দলের, কোনো গোষ্ঠীর নেতা বানিয়ে নিজেদের আর অপমানিত না করি। তাঁর সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতাকে যেনো আমরা মেনে নিয়ে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের রাজনীতিকে স্বচ্ছ নির্মল করার প্রয়াসে সম্মিলিত উদ্যোগে কাজ করি। আমরা যেনো তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে পারি। একটি সমৃদ্ধ উন্নততর বাংলাদেশ গড়ার শপথে এই শোককে শক্তিতে পরিণত করি। এই দিনে এটাই হোক প্রকৃত শপথ। তাতেই তাকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার রক্তের ঋণ শোধ করতে পারবো।