চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

তাড়াহুড়ো করে সাংঘর্ষিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন?

সাংবাদিকদের আপত্তি আমলে না নিয়ে, আইনে অস্পষ্টতা রেখেই আমলাদের চাপে তাড়াহুড়ো করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হলো বলে মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জায়েদুল আহসান পিন্টু।

আইনের খসড়া নিয়ে সাংবাদিকরা বার বার আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সাংবাদিকদের আপত্তিকে পাশ কাটিয়ে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আজ বুধবার বিলটি সংসদে পাস হওয়ার পর চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে এই মন্তব্য করেন ওই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি’র সম্পাদক জায়েদুল আহসান বলেন,‘এতো তাড়াহুড়ো করে এই আইন পাস করার কোন দরকার ছিলো না। সাংবাদিকদের আপত্তিগুলো আমলে উচিৎ ছিলো।’

সদ্য পাস হওয়া এই আইনে একই সঙ্গে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এবং ঔপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট যুক্ত করাকে সাংঘর্ষিক বলছেন এই সাংবাদিক।

জায়েদুল আহসান পিন্টু

তিনি বলেন,‘এই আইনের সবচেয়ে বাজে দিকটি হলো, ৯৫ বছর আগের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টকে আবার সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। অন্যদিকে তথ্য অধিকার আইনও সংযুক্ত করা হয়েছে। অথচ একটির সঙ্গে আরেকটি সাংঘর্ষিক।’

এই আইন অবাধ তথ্য প্রবাহের বাধা হয়ে দাঁড়াবে মন্তব্য করে তিনি বলেন,‘এই আইনের কয়েকটি ধারা স্বাধীন গণমাধ্যমের বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার চেতনা পরিপন্থী। এই আইনের ফলে প্রতিনিয়ত কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের দোহাইয়ের মুখে পড়বেন। সরকারি কর্মকর্তারা তথ্যদানে বিরত থাকবেন। এটা অবাধ তথ্যপ্রবাহের বাধা।’

তবে আজ জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে এই আইনটি পাস হওয়ার আগে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন,‘এই আইনে সমালোচিত ৫৭ ধারা বাতিল হয়েছে। এখানে বিতর্কের কিছু নেই। সংবাদমাধ্যমকে দমন করা, নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই আইন নয়। আমরা এই আইনের প্রতিটি লাইন সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেছি।’

ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ ওই আইন ভঙ্গ করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার সাজা হবে। আইনের আওতায় সর্বোচ্চ সাজা হবে ১৪ বছরের কারাদণ্ড। আইনে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও তল্লাশির ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে।

গত ২৯ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। তখন থেকেই আইনটি নিয়ে আপত্তি ওঠে। সম্পাদক পরিষদ এই আইনের ৮,২১,২৫,২৮,২৯,৩১,৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানায়। এছাড়া ১০টি পশ্চিমা দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা আইনের ২১,২৮,৩২ ও ২৫ ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। সংসদীয় কমিটি সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। কমিটি প্রতিবেদন দিতে তৃতীয় দফায় ১১ সেপ্টেম্বর এক মাসের সময় নিয়েছিল। কিন্তু পরদিনই তারা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। এই প্রতিবেদনে অংশীজনদের মতামতের তেমন কোন প্রতিফলন ঘটেনি।