চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

তামিমের মতো এক হাতে ব্যাট ধরেছেন যারা

শনিবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে চোট পান তামিম। সুরাঙ্গা লাকমলের বাউন্সার পুল করতে যেয়ে বাঁ-হাতের গ্লাভসে বল লাগান। পরে জানা যায় বাঁ-কব্জির ওপরে বৃদ্ধাঙ্গুলির জোড়ায় চিড় ধরেছে।

কিন্তু বাংলাদেশের ৯ উইকেট যাওয়ার পর ব্যান্ডেজ নিয়েই ব্যাট হাতে মাঠে নামেন তামিম ইকবাল। এরপর একটি বল মোকাবেলা করেন তিনি।

৪৬ ওভারের পাঁচ নম্বর বলে মোস্তাফিজুর রহমান আউট হয়ে যান। কার্যত সেখানেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথাছিল বাংলাদেশের ইনিংস। তবে এমন সময় মাঠে নেমে সবাইকে অবাক করে দেন তামিম। ৪৭তম ওভারের শেষ বলটি মোকাবেলাও করেন।

এরপর ২ ওভার তিন বলে মুশফিকুর রহিম স্ট্রাইক ধরে রেখে ৩২ রান তোলেন। যাতে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৬১। ম্যাচে বাংলাদেশ ১৩৭ রানে জয় পায়।

প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পর জানানো হয় পুরো এশিয়া কাপে ব্যাট করতে পারবেন না তামিম। ছয় সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে যেতে হবে তাকে। তামিম পুনরায় ব্যাট হাতে নামার দু’ঘন্টা আগে চিকিৎসক জানান তিনি এই এশিয়া কাপে আর খেলতে পারবেন না।

তামিম এমনভাবে ব্যাট করতে নামেন মনে হচ্ছিল বাঁ-হাত বাহুবন্ধনীতে আটকে আছে। বাঁম-গ্লাভ থেকে চারটি আঙ্গুল বের করে রাখেন যাতে গ্লাভের রক্ষাদেয়াল সুরক্ষিত থাকে।

তবে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে নামায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রিকেট ভক্তরা অনেকেই প্রশংসা করার পাশাপাশি সংশয়ও প্রকাশ করেছেন।

তবে তামিমই প্রথম ব্যাটসম্যান নন, যিনি এক হাতে ব্যাট করতে মাঠে নেমেছেন। তার আগে এমন সাহসী পদক্ষেপ যারা নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে তিনজনের কীর্তি বেশ আলোচিত। তাদের নিয়েই একটি প্রতিবেদন করেছে বিবিসি বাংলা।

গ্রায়েম স্মিথ (সাউথ আফ্রিকা), ২০০৯, সিডনি
ভাঙ্গা হাত নিয়ে মাঠে নামেন গ্রায়েম স্মিথ গ্রায়েম স্মিথ ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনিতে একটি টেস্ট ম্যাচ বাঁচাতে ভাঙ্গা হাত নিয়ে মাঠে নামেন।

প্রোটিয়া তারকার যখন মাঠে নামেন তখন ম্যাচের ৮ ওভার ২ বল বাকি ছিল। স্মিথ মিচেল জনসন, ডগ বলিঞ্জারের মতো গতিতারকাদের একের পর এক বল ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন এক হাতে ভর করে। কিন্তু ঠিক ১০ বল বাকি থাকতে জনসনের একটি বল ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে বেড়িয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বাঁচাতে না পারলেও স্মিথের এই ইনিংস বহুদিন ক্রিকেট ভক্তরা মনে রেখেছেন।

ম্যালকম মার্শাল, ১৯৮৪, হেডিংলি
বাঁ-হাত ভাঙ্গা থাকলেও ১৯৮৪ সালে হেডিংলিতে ডান হাত নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার ম্যালকম মার্শাল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেডিংলি টেস্টের প্রথম দিনে ইংল্যান্ডের ক্রিস ব্রডের ব্যাট থেকে ছুটে আসা একটি বল ঠেকাতে গিয়ে মার্শালের বাঁ-হাতের বুড়ো আঙ্গুলে দুটি চিড় ধরে।

যদিও তিনি ডান হাতি বোলার ছিলেন, চিকিৎসকরা তাকে পরামর্শ দেন যাতে তিনি ওই টেস্ট তো বটেই, আরো অন্তত ১০ দিন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকেন।

কিন্তু তৃতীয় দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ল্যারি গোমেজ যখন ইংলিশদের বিরুদ্ধে একাই লড়ছিলেন তখন, সফররতদের ৯ উইকেটের পতন ঘটে। ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন গোমেজ।

গোমেজ প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা শুরু করলে মারশাল ব্যাট হাতে মাঠে নেমে সবাইকে অবাক করে দেন। পরবর্তীতে মারশাল অবশ্য বলেন, ব্যাট করার ইচ্ছা ছিল না তার। কিন্তু গোমেজ সেঞ্চুরির এত কাছে ছিল যে তাকে নামতে হয়।

এটাই শেষ নয়। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে বা হাতে কনুই পর্যন্ত ব্যান্ডেজ দিয়ে পেচিয়ে বল করতে নামেন ম্যালকম মার্শাল। ২৬ ওভার বল করে ৫৩ রান দিয়ে ৭ টি উইকেট নেন সেই ইনিংসে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যতম সেরা এই পেস বোলার মাত্র ৪১ বছর বয়সে মারা যান, ১৯৯৯ সালে।

এগুলো বহুল আলোচিত ঘটনা। এছাড়া অনিল কুম্বলে ২০০২ সালে অ্যান্টিগা টেস্টে ভাঙ্গা চোয়াল নিয়ে বল করতে নামেন। সে অবস্থাতে ব্রায়ান লারার উইকেটও পান তিনি।

২০০৯ সালে ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডের ইয়ান বেল বাংলাদেশের বিপক্ষে ভাঙ্গা পায়ের পাতা নিয়ে খেলতে নামেন। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পায়।