সদ্যপ্রয়াত ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ ছিলেন বহু গুণের মানুষ। অভিনেত্রী হিসেবে দেশের মানুষের কাছে পরিচিত হলেও তিনি সাংবাদিকতা ও উপস্থাপক হিসেবেও তার দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন।
বহু গুণের অধিকারী এই কৃতি মানুষটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর শেষ করে সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন দীর্ঘদিন। কাজ করেছেন ভোরের কাগজ, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকায়। কলাম লিখেছেন আনন্দ ভুবন ম্যাগাজিনে।
এক পর্যায় সাংবাদিকতা ছেড়ে যুক্ত হন কর্পোরেট জীবনে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকে পাবলিক রিলেশন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাজিনের মা দিলারা জলির প্রোডাকশন হাউজ ছিল। মায়ের কাজেও সাহায্য করেছেন তিনি। মায়ের হাত ধরেই অভিনয় জগতে প্রবেশ। সাবলীল অভিনয়ের কারণে দ্রুত জায়গা করে নেন দর্শক হৃদয়ে।
ছোটপর্দার পাশাপাশি সরব ছিলেন মঞ্চে। কাজ করেছেন ‘নাট্যজন’ নাটকদলে। ২০০০ সালে ‘আরণ্যক’ নাট্যদলে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ‘আরণ্যক’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রেডিও এবং টেলিভিশনে উপস্থাপনা করেছেন।
তাজিনের লেখা ও পরিচালনায় তৈরি হয় ‘যাতক’ ও ‘যোগফল’ নামে দুটি নাটক। তার লেখা উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হচ্ছে ‘বৃদ্ধাশ্রম’, ‘অণুর একদিন’, ‘এক আকাশের তারা’, ‘হুম’, ‘সম্পর্ক’ ইত্যাদি।
তার এক সময়কার সহকর্মী সাংবাদিক প্রভাষ আমিন তাজিনকে স্মরণ করে ফেসবুকে লিখেছেন, “অভিনেত্রী হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন। বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে ‘টিফিনের ফাঁকে’ নামে একটা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন, যেটি এনটিভিতে প্রচার হতো। তবে এত সেলিব্রেটি হওয়ার আগে তাজিন আহমেদ আমাদের সহকর্মী ছিলেন। ভোরের কাগজের বাংলামোটরের অফিসের চারতলায় সঞ্জীব চৌধুরীর নেতৃত্বে যে কচিকাঁচার মেলা বসতো, যারা মাতিয়ে রাখতো আমাদের অফিস, তাজিন তাদেরই একজন। ভোরের কাগজের পর প্রথম আলোতেও ছিল তার প্রাণবন্ত উপস্থিতি। তারপর অভিনয়-উপস্থাপনার ঝলমলে জগত। সব এখন অতীত। তাজিন এখন দূর আকাশের তারা। আহারে জীবন এত ছোট কেনে?”
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে উত্তরার বাসাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তাজিন আহমেদ। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের রিজেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েক ঘণ্টা লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় বিকাল চারটা ৩৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বহু গুণের সমাহার এই টিভি অভিনেত্রী।