জীবনের ৪৮ বসন্ত পেরিয়ে এসে কনকচাঁপা আজ পা রাখলেন ৪৯ বছরে। জন্মদিন ঘিরে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বললেন এই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুদীপ্ত সাইদ খান।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা। জন্মদিন কিভাবে কাটাচ্ছেন?
কনকচাঁপা: জন্মদিন আসলে ঐভাবে কখনোই পালন করিনা। ছোটবেলা থেকেই জন্মদিন পালন করার অভ্যাস ছিল না। তবে বাচ্চারা যখন বড় হয়েছে তখন তারা ১২টা ১মিনিটে মায়ের জন্য কেক কেটে জন্মদিন পালন করে। সেটাও ঘরোয়াভাবে। আমাদের পরিবারগতভাবেই জন্মদিন পালনে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম না।
জমকালো আয়োজনে জন্মদিন পালন না করার কারণ কি?
কনকচাঁপা: আসলে ধর্মীয় বা অন্য কোন কারণ নেই এর পেছনে। আমরা তো মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। ছোটবেলায় মা হয়তো একটু পায়েস টায়েস রান্না করতেন। কেকটেক এগুলো তো আমাদের কালচারে তখন ছিল না। এখন যেটা ছেলেমেয়েরা করে সেটাই হয়। এখন তো কেক সহজে পাওয়া যায়। ফলে জন্মদিন এলেই কেকে কাটা হয়।
জন্মদিনে কেমন লাগছে?
কনকচাঁপা: আজ তো ৪৮ পেরিয়ে ৪৯ এ পা রাখলাম। আজ মনে হচ্ছে জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় তো কাটিয়েই দিলাম। এখন জন্মদিন আসা মানেই একটা বছর আরও চলে যাওয়া। এটা ভাবতেই মনের ভেতর কষ্ট হয়। আর কিছুদিন পরেই তো দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে।
খুব কষ্ট হয়?
কনকচাঁপা: না। খুব কষ্ট হয়না। (হাসি)। জীবন তো একসময় না একসময় শেষ হবেই। আমি তো এটা নিয়ে একটুকুও আফসোস করি না। হা হুতাশ করার অভ্যাস আমার নেই।
তো গান গেয়েই তো জীবনের অর্ধেকটা সময় পার করে দিলেন?
কনকচাঁপা: সব শিল্পীরই তো একই অবস্থা। গান গাইতেই গাইতেই পরিচয় গান গাইতেই গাইতেই জীবনের অবসান। আমার বয়স যত তার চেয়ে গানের ক্যারিয়ার বেশি লম্বা। কারণ অক্ষর জ্ঞান হওয়ার আগেই তো গান শেখা শুরু।
এখনো তো গান নিয়েই ব্যস্ত আছেন…
কনকচাঁপা: হ্যাঁ। এখনো গান নিয়েই পড়ে আছি। গান আর সংসার আমার আধাআধি। গানের ব্যস্ততা সংসারের ব্যস্ততা আধাআধি।
গান গাওয়ার ক্ষেত্রে সংসার কি কখনো অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি?
কনকচাঁপা: না, না। গানও সংসারের অন্তরায় না। সংসারও গানের অন্তরায় না। কারণ আমরা দুজনই তো গানের মানুষ। আমার গানের জন্য কখনোই সংসারের ক্ষতি হয় নাই। আবার সংসারের জন্য কখনোই গানের ক্ষতি হতে দেইনি।
৩২ বছরের গানের ক্যারিয়ার আপনার। প্রচুর জনপ্রিয় গান গেয়েছেন, প্রচুর প্রশংসা ও পুরস্কার পেয়েছেন। আপনি কি তৃপ্ত?
কনকচাঁপা: কোনো শিল্পীই পরিপূর্ণ তৃপ্ত হতে পারে না। তাদের মনে সবসময় একটা আকাঙ্খা থাকেই যে আরও ভালো কাজ যদি করতে পারতাম। আমার ক্ষেত্রেও তাই। আমি তো আর এমন না যে গান থেকে ইস্তফা দিয়েছি বা গান আর করব না। আর না চাইতেই আমি অনেক কিছু পেয়েছি। মানুষের ভালোবাসা বলেন, গানের ভাণ্ডার বলেন, আমার তো মনে হয় ১০জন শিল্পীকে জোড়াতালি দিলে যা হয় তার চেয়ে আমি অনেক বেশি পেয়েছি। মানুষের ভালোবাাসা বা পরিচয়ের দিক থেকে বলেন, এটা আমি পেয়েছি। এজন্য আলহামদুলিল্লাহ। যদিও আমি এভাবে বলতে চাই না। আমি খোঁচালেন বলেই বললাম।
আপনার অনেক গানই আমাদের প্রিয়। আপনার গাওয়া প্রিয় গান কোনটি?
কনকচাঁপা: এটা আসলে এভাবে বলা যায় না। এটা আপনারা যেটা সিলেক্ট করেন সেটাই প্রিয়। আপানারা যে লিস্ট করবেন সে লিস্টটাই আমি মেনে নিব। তবে যখন কোথাও গান গাইতে যাই বা কোনো লাইভ অনুষ্ঠানে গেলে দেখি আমি যে গানগুলো গাওয়া শুরু করি সে গানগুলোরই অনুরোধ আসে। অর্থাৎ শ্রোতাদের পছন্দের সঙ্গে আমার পছন্দের মিল রয়েছে।
বর্তমানে প্রচুর তরুণরা গান করছে। তারা ভাঙাগড়াও করছে। ফিউশন করছে। তরুণদের এই ভাঙা গড়াকে আপনি কিভাবে দেখেন?
কনকচাঁপা: তরুণদের ভাঙা গড়া নিয়ে আমার কিছুই যায় আসে না। আর তরুণ শিল্পী মানেই তারা ভাঙা গড়া করবে। এটা স্বাভাবিক। যুগ তো যুগের মতোই চলবে। আমাদের সময় একরকম কাজ হয়েছে। এখন আরেক রকমের কাজ হচ্ছে। আমাদের সময়েই অনেকে বলছে তরুণরা কি করছে না করছে।বর্তমান সবসময় অতীতকে ভালোবাসে ও ভবিষ্যতকে ঘৃণা করে। মুরুব্বিরা এটা সবসময় বলে, এই যে ছেলেমেয়েরা কিভাবে কথা বলে, কিসব জামাকাপড় পড়ে, কী আদব কায়দা। একটা সময় পার হওয়ার পর দেখা যায় যে এই তরুণরাই আদর্শ। ফলে বর্তমানে যারা ভাঙা-গড়া করছে বা ফিউশন করছে তাদেরকে আমি নেগেটিভলি দেখি না। তরুণদের ভাঙা গড়ার ভেতর থেকে যেসব কাজ ভালো হবে সেগুলো টিকে যাবে যেগুলো ভালো হবে না সেগুলো এমনিতেই ঝরে যাবে। এসব নিয়ে সমালোচনার দরকারই পড়ে না।
আপনি তো বইও লেখেন। সামনে কি বই আসবে?
কনকচাঁপা: আমি একটা অনলাইন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ‘কাটাঘুরি’ নামে একটা লেখা লিখছি। সামনের বইমেলায় এটাকে বই আকারে প্রকাশ করার ইচ্ছে আছে।
ভবিষ্যতে আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছে আছে কিনা?
কনকচাঁপা: আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছে নেই। কারণ আত্মজীবনী শেষে আত্মঅহংকার হয়ে যায়। কারণ আমার তো সবকিছুই পজেটিভ। কারণ আমি যখন লিখব তখন তো আমি আমার ভালো দিকগুলোই লিখব। আমি অমুক জায়গায় গেলাম সবাই আমায় পছন্দ করল, আমার ভালো বলল। এরকম লিখতে লিখতে দেখা যাবে সেখানে আমার সব পজেটিভ বিষয়ই উঠে এসেছে। যেমন আমি মান্না দে’র আত্মজীবনী পড়েছিলাম। পড়ে আমার মনে হয়েছিল লোকটা এত অহংকারী। এরকম আরও একটা আত্মজীবনী পড়লাম সেটা পড়েও দেখলাম তিনি আত্মঅহংকারী। কিন্তু আসলে তারা আত্ম অহংকারী না। কিছু ভালো পজেটিভ জিনিসগুলো তিনি তুলে ধরেছেন যার কারণে মনে হয়েছে আই অ্যাম দ্যা ওয়ান-এ রকমই একটা বটম লাইন চলে আসে। ফলে আমি ভেবেছি আত্মজীবনী না লিখে বরং ছোট ছোট ভাবে যদি জীবনের কিছু গল্প বলা যায় বলব। যেমন ভ্রমণ কাহিনি বা আমার গানের যে সেক্রিফাইস নিয়ে বা অন্যকিছু। তবে একদম আত্মজীবনী যে লিখব না- তা কিন্তু বলতে পারছি না। কারণ জীবনের যেকোন মুহূর্তে যেকোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে (হাসি)।
চ্যানেল আই অনলাইনের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ
কনকচাঁপা: চ্যানেল আই অনলাইনকেও ধন্যবাদ।
উল্লেখ্য ‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’, ‘তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই’ ‘আমার নাকেরই ফুল বলে রে তুমি যে আমার’, ‘তুমি আমার এমনই একজন’, ‘নীলাঞ্জনা নামে ডেকনা’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুমানা মোর্শদ কনক চাঁপা। ১৯৬৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটবেলাতেই গানে হাতেখড়ি। সঙ্গীতে তালিম নেন শিল্পী বশির আহমেদের কাছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন কনক চাঁপা।