ধর্মশালা, হিমাচল প্রদেশ(ভারত): এক সময় ঢাকার মাঠে ‘আফ্রিদি মেরি মি’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে এক বা একাধিক তরুণীর মেলে ধরা আকুতি নিয়ে অনেক সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। বুধবার ধর্মশালার মাঠে উঠেছিল প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণীদের ‘সৌম্য মেরি মি’, অথবা ‘সাব্বির মেরি মি’ প্ল্যাকার্ড ! এই তরুণীদ্বয় পড়াশুনা করছেন সিমলায়। বন্ধুদের সঙ্গে সিমলা থেকে সাত ঘন্টায় দীর্ঘ গিরিপথ ডিঙ্গিয়ে ধর্মশালা এসেছিলেন বাংলাদেশের খেলা দেখতে। সৌম্য অথবা সাব্বির যখন ফিল্ডিং’এ গ্যালারির কাছাকাছি তখন তারা প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে চিৎকার করে ইংরেজিতে ‘আমাকে বিবাহ করো’ বলে চিৎকার করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করেন! এমন উচ্চারন চিৎকারে সৌম্য-সাব্বিররা যে গ্যালারির দিকে মুখিয়ে তাকিয়েছেন তাও নয়। এমনিতে বুধবার বাংলাদেশের ফিল্ডিং ছিল গড়পড়তা অথবা হতাশাজনক। ডাচ দল ক্রিকেটে বাংলাদেশের আশেপাশেই নেই। খেলার আগে থেকে তারা নানান হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। মাঠে মাঝে মাঝে তারা হুমকি দেখাচ্ছিলও। কিন্তু তামিমময় ম্যাচে মাশরাফির বোলিং নেতৃত্বের কারণে শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশার জয় নিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে টাইগার বাহিনী।
নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো ধর্মশালায় বুধবার প্রথম খেললো বাংলাদেশ। মাঠে যাবার পথে একদল বাংলাদেশি তরুণের সঙ্গে দেখা। বাংলাদেশের জার্সি দেখে চেনা গেলো তারা বাংলাদেশি বাঙ্গালি। আপনারা কোথা থেকে এসেছেন?
বাংলাদেশ থেকে।
আপনি কোথা থেকে এসেছেন?
অস্ট্রেলিয়া থেকে।
বলেনকি ভাই, অস্ট্রেলিয়া থেকে?
আপনিতো ভালো একটা পাগল’ বলে হো হো হাসি। হ্যাঁ ভাই একটু পাগল কিসিমের না হলে এমন করা যায় না। দেশকে ভালোবাসা যায় না। জবাব আসে হো ভাই হো। বুধবার স্টেডিয়ামের কাউন্টার থেকেই টিকেট কেনা হয় ভারতীয় চারশ পঞ্চাশ রুপিতে। আইসিসির নিয়ম হচ্ছে খেলার দিন নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজের টিকেট থাকতে হবে ভেন্যুর কাউন্টারে। বুধবার যে পরিমানে ছিল তার কিয়দংশ মাত্র বিক্রি হয়েছে! কারণ এ ভেন্যু যে ভারতে হলেও বাংলাদেশ থেকে বহুদূরে। বাংলাদেশের লোকজনের আজকাল ভারতের ভিসা পাওয়ার ঝক্কি-ঝামেলাও অনেক। কাউন্টারে বিস্তর টিকেট, কিন্ত এর মাঝে একাধিক দালাল এসে কানে কানে জিজ্ঞেস করে টিকেট লাগবে নাকি! মাঠে ঢোকা নিয়ে বুধবার অনেক সমস্যা হয়।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের যত ভেন্যুতে খেলা দেখতে গেছি সব সময় ব্যাগ ছিল সঙ্গে। ব্যাগের ভিতরে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, আইপ্যাড, এসবের চার্জার সব তল্লাশী করেই সব ভেন্যুতে ঢুকতে দিয়েছে। কিন্তু হিমাচল প্রদেশের পুলিশ বললো, না এসব নিয়ে ঢুকতে দেবেনা! অনেক বাতচিতের পর অতঃপর ট্যাবলেট-আইপ্যাড নিতে দিলো! কিন্তু এমন গ্যালারিতে বসতে দিলো যেখানে কোনো দর্শক নেই! আশে পাশে যারা বসেছেন তাদের গোয়েন্দা মনে হলো। একজন বসেছেন ঠিক আমার পিছনে! আমি কি করি সারাক্ষণ সেদিকে নজর। খুব অস্বস্তি লাগছিল। গ্যালারির লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে না পারলে লিখবো কি। এক পর্যায়ে শ্রীমান গোয়েন্দার হাতে ট্যাবলেট ধরিয়ে দিয়ে কাতর স্বরে বললাম, আমার একটা ছবি তুলে দেবেন? এদিক ওদিক তাকিয়ে বেচারা ছবি তুলে দিলোও।
বাংলাদেশের ব্যাটিং এ এক তামিম ছাড়া টপ অর্ডারের শুধু আসা যাওয়া চলছিলো। ইনিংস বিরতির সময় খাবারের খোঁজে বেরিয়েছি। একটা ড্রিংকস এবার গেলাম বাংলাদেশ গ্যালারির গেটে। কাতর কন্ঠে বললাম, ‘ভাইরে আমি যেখানে বসেছি সেখানে কোন বাংলাদেশি নেই। একদম মজা পাচ্ছি না।’ বেচারা আমার কথায় হেসে ফেললো।
ঢুকতে বাধা দেয় না। বাংলাদেশ গ্যালারির প্রায় সবাই সিমলা থেকে আসা বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী। সেখানে ভারত সরকারের স্কলারশীপে পড়াশুনা করেন। এদেরই একজন সাইদুর রহমান। টাঙ্গাইলে বাড়ি। টেলিভিশনে তাকে দেখে ফোন দিয়েছেন তার মা। ছেলেটি মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আবেগে কেঁদে ফেলে। হ্যাঁ মা, আমি বন্ধুদের সঙ্গে খেলা দেখতে এসেছি। তুমি কেমন আছো মা।
বুধবারের ম্যাচটি নিয়ে টুডে অর টুমোরো ভারতীয় স্পন্সররা কথা বলবেই। মাঠে দর্শক হবে না তাই ভারতীয় ক্রিকেটের স্পন্সররা ভারতে বাংলাদেশের ম্যাচ আয়োজনে রাজি হয় না। আমরা তা নিয়ে রাগ করি। কিন্তু দর্শক যে হয় না তাতো বাস্তব সত্য। ক্রিকেটের সঙ্গে ব্যবসা জড়িত। এ অবস্থা অতিক্রম করতে বাংলাদেশের লোকজনকে দলের সঙ্গে ক্রিকেট সফর বাড়াতে হবে। অন্য অনেক দেশের ক্রিকেট সংস্থার মতো উদ্যোগটি নিতে হবে বিসিবিকেই।