কমপক্ষে সাতটি বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন রাজধানীর মানুষ। এসব ঝুঁকির সবগুলোতেই কোনো না কোনোভাবে প্রাণহানির আশংকা চিহ্নিত হয়েছে। আবার কোনো কোনোটিতে তাৎক্ষণিক মৃত্যু বা আহত না হলেও দীর্ঘমেয়াদি রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন রাজধানীবাসী।
সাতটি বড় সমস্যার পেছনে কমপক্ষে ২১টি কারণ বা আইন না মানাকে দায়ী করা হয়েছে।
কোনো অপরাধমূলক ঘটনা ছাড়াই রাজধানীর যে কোনো মানুষ যে কোনো সময় অস্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার হতে পারেন। বাস-ট্রাকের ধাক্কায়, অগ্নিকাণ্ডে বা ভূমিকম্পে। আবার এভাবে তাৎক্ষণিক মৃত্যু না হলেও বায়ু, শব্দ, পানি বা বর্জ্য দূষণে দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, যা আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির সঙ্গে ধীরে ধারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বেশিরভাগ রাজধানীবাসীকে।
রাজধানীবাসীর ঝুঁকি অনুসন্ধানে মোটা দাগে যে সাতটি বিষয় উঠে এসেছে তাতে অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্প রাজধানীবাসীর সবচেয়ে বড় আতংকের। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা, বিকল্প পথ না থাকা এবং ভবন ভূমিকম্পসহনীয় না করায় এসব দুর্ঘটনায় অসহায়ের মতো মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই বাস করেন বেশিরভাগ রাজধানীবাসী।
শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ ও বর্জ্য দূষণে নানান প্রাণঘাতী ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে জড়িয়ে পড়ছে ঢাকাবাসী। এ সতর্কতার পরও বেশিরভাগই আইন ও নিয়ম না মানায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। আর এর মধ্যে নতুন আতংকের নাম গাড়িতে তিনলাখ বা বাসাবাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনার আশংকা। এভাবে বসবাসের অযোগ্য তালিকায় নাম লেখাচ্ছে প্রিয় রাজধানী।
১৬ লাখ ড্রাইভারের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স না থাকলেও তাদের চালানো গাড়িতে ঘুরছে মানুষ। সড়কে মৃত্যুর হার বাড়লেও ১ শতাংশ মামলায়ও চালকের শাস্তি হয় না। এরপরেও প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষায় থেমে সড়ক নিরাপত্তা আইন। ৯৬ শতাংশ দূষণ জেনেও জারের খাবার পানি এবং এন্টিবায়োটিক ও ক্ষতিকর ধাতবের মুরগির মাংস বিক্রি থেমে নেই।
নানামুখী ঝুঁকির পরেও নানান প্রয়োজনেই রাজধানীতে মানুষের ভিড় বাড়ে। এই সাত ধরনের ঝুঁকি কমাতে ১৮ দফা জরুরী ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মানতে বাধ্য করতে হবে। বেশকিছু বিষয় আইন ও নিয়মনীতি পরিবর্তন, সংশোধন প্রয়োজন হবে। সরকারি মহলের পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল হওয়ার সুপারিশ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীবাসীর ঝুঁকি কমাতে সুপারিশমালা
১. সব ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও বিকল্প পথ করতে বাধ্য করা
২. ফায়ার সার্ভিসের আরো আধুনিকায়ন ও অলি-গলি প্রশস্ত করা
৩. বিল্ডিং কোড হালনাগাদ ও আইন সংশোধন
৪. নতুন-পুরাতন সব ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিশ্চিত করা
৫. সব ভবন ভূমিকম্প সহনীয় করার ব্যবস্থা করা
৬. প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক বাড়ানোর কাজ চালু করা
৭. সিএনজি সিলিন্ডার নিয়মিত পুনঃপরীক্ষা বাধ্যতামূলক
৮. সিএনজি-এলপিজি সিলিন্ডার নিরাপত্তায় পৃথক কর্তৃপক্ষ চালু
৯. শব্দ, বায়ু, বর্জ্য ও পানি দূষণে শাস্তি নিশ্চিত করতে কার্যকর সমন্বয়
১০. সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষিত ড্রাইভার বাড়ানোর ব্যবস্থা
১১. অবৈধ চালকদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষিত চালকে রুপান্তর
১২. অবিলম্বে সড়ক নিরাপত্তা আইন চালু করতে প্রজ্ঞাপন জারি
১৩. পথচারীদের জন্য স্বল্প শাস্তি ও সড়ক দুর্ঘটনায় শাস্তি নিশ্চিত করা
১৪. পোলট্রি মুরগির নিরাপদ খাদ্য তৈরির উদ্যোগ নেয়া
১৫. মুরগির বাজারজাতকরণ নীতি মানতে শাস্তি চালু
১৭. দূষণযুক্ত পানি নিশ্চিতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ
১৮. ওয়াসার পানির পাইপ নিরাপদ নিশ্চিত করা
বিশেষজ্ঞরা আশা করেন, ১৮ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে রাজধানীতে বসবাস করা মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি ধীরে ধীরে কমে আসবে। বসবাসের অযোগ্য শহরের অপবাদ থেকেও রক্ষা পাবে প্রিয় ঢাকা।
বিস্তারিত দেখুন ভিডিও প্রতিবেদনে: