ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ৬ মাসের মধ্যে অনুষ্ঠানে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। ডাকসু নির্বাচন বিষয়ে গত ১৭ জানুয়ারি আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তাতে ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু সাত মাস পার হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কী না, তা জানতে গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানি ও কোষাধ্যক্ষ ড. কামাল উদ্দিন বরাবর একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এরপর উপাচার্যের পক্ষ থেকে সে লিগ্যাল নোটিশের একটা জবাব আসে। কিন্তু সেখানে নির্বাচনের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেননি মর্মে নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
অবশেষে ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় সংলগ্ন আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, ছাত্রদলের পক্ষে কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান, ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সিদ্দিকি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে আগামী বছরের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্য ঠিক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান এ ঘোষণা দেন।
বৈঠকে বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণ ও ডাকসু নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণায় সামাজিক মাধ্যমে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াসহ গণমাধ্যমে নানা ধরণের সংবাদ প্রকাশিত হয়, এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পায় অনেকে। কিন্তু একদিন পরেই হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করায় আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে ডাকসু নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে অনেকে শঙ্কা জানিয়েছেন।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরের বছর যাত্রা শুরু করে ডাকসু। ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে ডাকসু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা ছিলেন অগ্রভাগে। স্বাধীন বাংলাদেশেও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচনের পর বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেই নির্বাচন আর হয়নি।
আমাদের আশাবাদ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত সদিচ্ছার সঙ্গে সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র নেতৃত্ব আসবে।