বিপন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ডলফিন বা শুশুক রক্ষা করার লক্ষ্যে ৪ নভেম্বর খুলনায় ১০ দিন ব্যাপী শুশুক মেলা শুরু হয়েছে। মেলাটি ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত, সুন্দরবনের আশেপাশের এলাকায়, ডলফিন সংরক্ষণ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে চলমান থাকবে।
রোববার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক একটি বর্ণাঢ্য ৱ্যালির মধ্য দিয়ে মেলাটির উদ্বোধন করেন।
প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য প্রদান কালে মেয়র বলেন, ‘সুন্দরবন শুধু খুলনার জন্য নয় বরং দেশের সম্পদ। প্রকৃতির সুরক্ষার জন্য আমাদের সকলকে বিশ্বের এই সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন রক্ষা করতে হবে। সুন্দরবনের সুরক্ষার জন্য আমাদের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি, তার জলাশয় এবং জলাশয়ের প্রাণীদের সংরক্ষণ করতে হবে।’
ইউএনডিপি প্রোগ্রাম বিশেষজ্ঞ আরিফ মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘‘ইউএনডিপি, সরকার, প্রাইভেট সেক্টর, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সংস্থা, গবেষক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং জেলে সম্প্রদায় সবাইকে একসাথে নিয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করছে। যদি আমরা ডলফিন সংরক্ষণ করতে চাই তবে আমাদের সুন্দরবনের চারপাশে দূষণ বন্ধ করতে হবে।
ইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রতিনিধি রাকিবুল আমিন বলেন, “ডলফিন সহ সুন্দরবনের সকল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্লাস্টিকের একক ব্যবহার বন্ধ করে শিক্ষার্থীরাও জলজ পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।” ডলফিনকে জাতীয় জলজ প্রাণী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার উপর তিনিও জোর প্রদান করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, এবিএম সরওয়ার আলম, প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী, আইইউসিএন প্রকল্পের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন । মোঃ মদিনুল আহসান, জাতীয় প্রকল্প পরিচালক ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, খুলনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে মোঃ জাহিদুল কবীর, বন সংরক্ষক, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল, বন অধিদপ্তর, সবাইকে নিয়ে সুন্দরবনের প্রকৃতির জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য শপথ বাক্য পাঠ করেন।
এর আগে মেলা উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য ৱ্যালির আয়োজন করা হয় যেখানে সরকারের প্রতিনিধি সহ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।`
বিপন্ন প্রজাতির স্বাদু পানির ইরাবতী ও গঙ্গা নদী ডলফিনের বাসস্থল হল সুন্দরবন। বিভিন্ন কারণে এরা আজ বিলুপ্তির মুখে। আর এদের রক্ষার জন্য ২০১৬ সালে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও পরিবেশ অধিদপ্তর, গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির অর্থায়নে ‘এক্সপান্ডিং দ্যা প্রটেক্টেড এরিয়া সিস্টেম টু ইনকর্পোরেট ইম্পরট্যান্ট একুয়াটিক ইকো সিস্টেম” প্রকল্প শুরু করে। স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে ডলফিন সংরক্ষণ করা এই প্রকল্পের মূল কার্যক্রম, পাশাপাশি নদী সম্পদের উপর চাপ কমানোর জন্য স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের কার্যক্ষমতা এবং তাদের বিকল্প জীবিকার উপায় বাড়ানোর জন্যও এই প্রকল্প কাজ করবে।
গত ২৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক স্বাদু পানি ডলফিন দিবস উপলক্ষে ডলফিন সংরক্ষণ এর উপর জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ইউএনডিপি বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে, যেখানে সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এবং সিএনআরএস। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় তিন দিনের আয়োজনের পর, খুলনার সুন্দরবনে দশ দিন ব্যাপী ‘শুশুক মেলা’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মেলা চলাকালীন সময়ে নৌকার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যপ্রাণী ও ডলফিন সংরক্ষণ, ইত্যাদি বিষয়ের উপর সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোতে ১০ দিন ব্যাপী প্রচারণা কার্যক্রম চলবে। এছাড়াও শিশু কিশোরদের জন্য রয়েছে পুতুল নাচ, চিত্রাঙ্কন, মাওয়ালির গান ইত্যাদি ।