বিশ্বের সম্ভ্রান্ত পুরস্কারগুলোর একটি হলো অস্কার। অস্কারের সেই সোনালী ট্রফিটি ছুঁয়ে দেয়ার স্বপ্ন চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবাই লালন করেন। এখানে মূল্যায়িত হয় বছরের সেরা চলচ্চিত্র, পরিচালক এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকলের সারা বছরের কাজ। তাই সারা বিশ্বের শত কোটি মানুষের আগ্রহ থাকে প্রিয় তারকায় ঝলমলে এ অনুষ্ঠানের দিকে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবাই অপেক্ষায় থাকেন এই মুহূর্তের। এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, চলচ্চিত্র সবসময় ধর্ম-বর্ণ কিংবা দেশের উর্ধ্বে উঠে মানুষকে মানবিক হতে শেখায়। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চলচ্চিত্র হয়তোবা সেই শিক্ষা দিতে পারেনি। তাই ট্রাম্পের অসভ্যতার বিস্তার এবার অস্কার পর্যন্ত গড়িয়েছে। ট্রাম্পের মুসলিম বিরোধী নির্বাহী আদেশের ফলে অস্কারে মনোনয়ন পাওয়া সিরীয় তথ্যচিত্র পরিচালক খালেদ খতিবকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। অথচ যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় উদ্ধারকর্মীদের নিয়ে এই পরিচালকের ‘দ্য হোয়াইট হেলমেটস’ জিতে নিয়েছে এবারের সেরা তথ্যচিত্র বিভাগের অস্কার। মুসলিম দেশগুলো থেকে নাগরিকদের মার্কিন মুলুকে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে অস্কারের এই অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন ইরানি পরিচালক আসগর ফারহাদি এবং অভিনেত্রী তারানেহ আলীদুস্তি। তাদের ছবি ‘দ্য সেলসম্যান’ও পেয়েছে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের পুরস্কার। পরিচালক ফারহাদি ইরান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, সুদান, সোমালিয়া ও লিবিয়ার অভিবাসীদেরর আমেরিকায় প্রবেশের বাধা দেয়াকে একেবারেই অমানবিক এবং অগণতান্ত্রিক বলে উল্লেখ করেছেন। আমরা তার এই কথার সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। আমরা মনে করি, জঙ্গি গোষ্ঠির সাতটি দেশের সব মানুষকে মুসলিম পরিচয়ের কারণে জঙ্গি বলে আখ্যায়িত করা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। অস্কারের এবারের উপস্থাপক জিমি কিমেলও বিষয়টি এড়িয়ে যাননি। পুরো অনুষ্ঠানে এই মার্কিন কমেডিয়ান তার সূক্ষ্ম রসবোধ দিয়ে ট্রাম্পকে তিরস্কার করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কারিগররা ধর্ম-বর্ণ এবং দেশের সব বাধা পেরিয়ে মানবিক পৃথিবী গড়তে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। তাই এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেয়া মার্কিন আদালতের রায়ই বাস্তবায়ন করতে হবে বলে আমরা মনে করি। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এ প্রত্যাশা করা অরণ্যে রোদন ব্যতীত আর কিছুই নয়। তবুও আমরা বিশ্বাস করি, মানুষের মধ্যকার ভেদাভেদ দূর করতে সুমতি আসবে ট্রাম্পের। অস্কারে পুরস্কৃত ও মনোনয়ন পাওয়া সব চলচ্চিত্রের অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক শিক্ষায় গড়ে উঠুক সভ্য ও মানবিক আমেরিকা।