মুখে সবুজ পিচে পেসার লেলিয়ে দেয়ার ফেনা তুলে পাকিস্তান রাওয়ালপিন্ডিতে দিয়েছে আধমরা পিচ। শুরুতে পেসাররা একটু-আধটু যাও ছোবল দিতে পারলেন, সেটি যতটা না গতির জোরে, তারচেয়ে বেশি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভুল শট নির্বাচনে। সময়ের সঙ্গে পিচ হতে থাকল আরও বেশি ব্যাটিংবান্ধব। যেন পরীক্ষায় আসা সহজ প্রশ্নটার অতি সরল উত্তরই মিলতে যাচ্ছে, এই ম্যাচে কে আগে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন- ব্যাটসম্যান নাকি বোলাররা!
দুটোর একটা সম্পর্কেও পুরোপুরি সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না প্রথমদিন শেষে! পরিষ্কার সিদ্ধান্ত মিলবেই বা কীভাবে! টাইগার ব্যাটসম্যানরা যে পরীক্ষাই দিলেন না! ব্যাট করে করে নিজেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন, নাকি বল করিয়ে করিয়ে প্রতিপক্ষ বোলারদের ক্লান্ত করে ফেলেন সেই উত্তর মেলানোর আগেই মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহরা ফিরতে থাকলেন সাজঘরে। তাতে ক্লান্ত হওয়ার আগেই যেমন সাজঘরে সফরকারী ব্যাটসম্যানরা, পাকিস্তানি বোলাররাও উইকেট লুটেপুটে চনমনে। এই টেস্টে প্রথমদিনে ক্লান্ত যদি কেউ হয়েই থাকে, সেটি তাই কেবল এবং কেবলই বড় আশায় বুকে ক্রিকেটক্ষুধা জমিয়ে টিভিতে চোখ রাখা ক্রীড়াপ্রেমীরা!
বাংলাদেশ-২৩৩/১০ (৮২.৫) (প্রথমদিনের খেলা শেষ)
তামিম-শান্তরা অবশ্য পেসেই ভেঙে পড়েছেন। তবে এমন নয় পিচ থেকে খুব সুবিধা আদায় করতে পেরেছেন স্বাগতিক বোলাররা। এমন নয় আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত কাঁপা-কাঁপিতে কেটেছে সফরকারী ব্যাটসম্যানদের। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যতক্ষণ ক্রিজে থাকলেন, নির্বিষতরই মনে হয়েছে শাহিন-আব্বাসদের বোলিং! হলে কী হবে? মাহমুদউল্লাহ-লিটনদের ক্রিজে থাকতে তো হবে। তারা পারলেন না সম্ভাবনার অঙ্কুরগুলোকে ফলে রূপ দিতে। তাদের ছোট ছোট ইনিংসগুলো অকালে ঝড়ে যায় বড় বড় আক্ষেপ জমিয়ে।
সকালে আট বলের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারানোর পর মুমিনুল-শান্তর ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে কিছু করে দেখানোর আভাস দিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দিয়ে সম্ভাবনার সেই ইনিংস অকালে ছুঁড়ে আসেন মুমিনুল হক। অধিনায়কের দেখানো পথ অনুসরণ করে গেলের পরের সবাই। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে তিন উইকেট হারানো সফরকারীরা চা পানের আগে আরও তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ধুঁকেছে। দিনশেষের আগে তো অলআউটই হয়ে গেছে, ৮২.৫ ওভারে ২৩৩ করে।
ধুঁকে ধুঁকে স্কোরবোর্ডটা এদিন একেবারে জরাজীর্ণ হয়নি মোহাম্মদ মিঠুন আর ব্যাট হাতে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মাঝে মধ্যেই লজ্জায় ফেলে দেয়া বোলার তাইজুল ইসলামের কল্যাণে। দুজনে সপ্তম উইকেটে ৫৩ যোগ করেছেন। তাইজুলের নামের পাশে ২৪, বড় কথা ৭২ বল খেলে এসেছেন তিনি। মিঠুন ইনিংসের একমাত্র ফিফটি এনেছেন। ৭ চারে ৬৩ রান তার, খেলেছেন ১৪০ বল।
লিটন ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ২০-এর ঘর পার করা সবারই স্ট্রাইকরেট ৫০-এর আশে পাশে বা টেস্ট মেজাজের। বলা যাচ্ছে না তেড়েফুঁড়ে খেলে উইকেট বিলিয়ে এসেছে তারা। অবশ্য উইকেট বিলিয়েছেনই, টেস্টের মতো খেলতে খেলতেই শট নির্বাচনে ভুল করে। বিশেষ করে স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে যেয়ে করে ফেলেছেন গড়বড়। আক্ষেপটা তাই বাড়ছেই, টেস্টের মেজাজে খেলেও সেই পুরনো রোগেই কাতর, উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার রোগে!
পাকিস্তানে দ্বিতীয়দফার সফরে শুক্রবার সিরিজের প্রথম টেস্টে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে এসে দ্রুত দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান সাইফ হাসান রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ওপেনিংয়ে তার সঙ্গী তামিম ইকবাল ফেরেন ৩ রানে।
সাইফ দুই বলের ইনিংসে শাহিন আফ্রিদির অফস্টাম্পের বাইরের বলে পা না নড়িয়ে খেলতে যেয়ে দ্বিতীয় স্লিপে শফিকের ক্যাচে ফিরেছেন। পরের ওভারে তামিম পড়েন স্বাগতিক ফিল্ডারদের কড়া এলবিডব্লিউ আবেদনের মধ্যে। আব্বাসের বল তার প্যাডে আঘাত হানলে আম্পায়ার সাড়া দেননি। রিভিউ নিয়ে উইকেট তুলেছে পাকিস্তান। থামে বাঁহাতি ওপেনারের ৫ বলের যাত্রা।
সেখান থেকে শান্ত ও মুমিনুলের প্রতিরোধে অনেকটা পথ আগায় বাংলাদেশ। জুটিতে পঞ্চাশ পেরিয়ে ৫৯ পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন দুজনে। স্বস্তির সেই সময়েই শাহিন আফ্রিদির অফস্টাম্পের অনেকটা বাইরের বল তাড়া করতে যেয়ে উইকেটরক্ষক রিজওয়ানের গ্লাভসে জমেন টাইগার দলপতি। মুমিনুলের নামের পাশে তখন ৫ চারে ৫৯ বলে ৩০ রান। নিরেট সম্ভাবনার ইনিংসের অকাল যবনিকা!
মুমিনুল নিজের ইনিংসটি ফেলে এলেও নাজমুল হোসেন শান্ত তখনও পথ হারাননি। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে এগোচ্ছিলেন। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার সময় তার নামের পাশে ৪৪, ফিরে আর কোনো রানই যোগ করতে পারলেন না। আব্বাসের স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে জমেন কিপার রিজওয়ানের গ্লাভসে।
মাহমুদউল্লাহ থাকলেন আরও কিছুক্ষণ। উইকেটে খুঁটি গেড়ে তার ইনিংসটাও ২৫ রানে আটকে যায়। সেই স্টাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়া করতে যেয়েই। শাহিনের করা বাইরের বলটা পয়েন্ট-গালির ফাঁক গলে বের করতে যেয়ে মাহমুদউল্লাহ জমা পড়েন শফিকের তালুতে।
পরের প্রতিরোধটা লিটন দাস ও মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটে। দুজনে জুটিতে এনে দেন ৫৪ রান। লিটন যতক্ষণ ব্যাট করেন, দেখে মনে হবে না তাকে সহজে আউট করা সম্ভব! কিন্তু ওই যে এক সমস্যা, যতক্ষণ ব্যাট করেন। ৩৩ পর্যন্ত গেলেন সম্ভবত দিনের সবচেয়ে সাবলীল ব্যাটসম্যান হয়ে খেলে। তিনিও বেশি এগোতে পারেননি অযথা সুইপ খেলতে যেয়ে। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় পাকিস্তান।
শাহিন আফ্রিদি নিয়েছেন ৪ উইকেট, সবচেয়ে সফল। ২টি করে উইকেট মোহাম্মদ আব্বাস ও হারিস সোহেলের। একটি নাসিম শাহর ঝুলিতে গেছে।
বাংলাদেশের ইনিংস শেষের পর নেমেছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা, ফিল্ডিংয়ে নেমে পড়েছিলেন মুমিনুলরাও। কিন্তু আলোক স্বল্পতায় আগেভাগেই শেষ হয়ে যায় দিনের খেলা।