সাইদুল আনাম টুটুলকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে সকাল থেকেই ভিড় জমিয়েছেন শিল্প, সাহিত্য সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তার মৃত্যু সংবাদ শুনে শহীদ মিনারে ছুটে এসেছেন শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
প্রথমেই তিনি শহীদ মিনারে এসে শ্রদ্ধা জানান সাইদুল আনাম টুটুলের প্রতি। এরপর তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের সাথে কথা বলেন জাফর ইকবাল।
টুটুলকে শ্রদ্ধা জানানো শেষে জাফর ইকবাল বলেন, টুটুল ভাই এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবেন এটা কল্পনাও করিনি। তার মৃত্যু সংবাদ শোনে এতো খারাপ লেগেছে বলে বোঝানো যাবে না। তাকে আমি বহুদিন ধরে চিনতাম, তার কাজ সম্পর্কেও জানতাম। তাকে হারানোর শোক ভোলার নয়।
তিনি নিজেই ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাই কাজের মধ্যেও মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। তার জীবনের শেষ সিনেমা ‘কালবেলা’-ও মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী অবলম্বনে তৈরি হচ্ছিলো। এমনটা একটা মানুষের হঠাৎ চলে যাওয়া নিঃসন্দেহে বেদনার। টুটুল ভাই, আমরা সত্যিই আপনাকে মিস করবো খুব। সাইদুল আনাম টুটুলকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন জাফর ইকবাল।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল। পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া এগারোটায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয় সাইদুল আনাম টুটুলের মরদেহ। এসময় শহীদ মিনারে তার মরদেহের পাশে দেখা যায় সাইদুল আনাম টুটুলের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে। এছাড়া শহীদ মিনারে উপস্থিত ছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার, ফরিদুর রেজা সাগর, নির্মাতা ও সংগঠক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, কনা রেজা, নির্মাতা অঞ্জন জাহিদুর রহিম, নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, অভিনেতা আসাদ, সাহিত্যিক জাফর ইকবাল, গাজী রাকায়েত, কামার আহমাদ সাইমন, সালাহউদ্দিন লাভলু, চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেতা তারিক আনামসহ শিল্প, সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রের মানুষ।
বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
১৫ ডিসেম্বর শনিবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সাইদুল আনাম টুটুল। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান তিনি।
দীর্ঘদিন সিনেমা নির্মাণ না করলেও সম্প্রতি একটি নতুন ছবির শুটিং শুরু করেছিলেন টুটুল। সরকারি অনুদানে ‘কালবেলা’ নামে একটি সিনেমাটি করছেন তিনি। ২০০১ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত ‘নারীর ৭১ ও যুদ্ধপরবর্তী কথ্যকাহিনি’ বই থেকে ‘কালবেলা’ ছবির গল্প নেয়া হয়েছে।
সাইদুল আনাম টুটুল ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ও আজীবন সদস্য। ২০০৩ সালে ‘আধিয়ার’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রশংসিত। এর আগে ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ সিনেমা সম্পাদনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
এছাড়াও বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘুড্ডি, দহন, দীপু নাম্বার টু ও দুখাইয়ের মতো সিনেমার সঙ্গে রয়েছেন তার সংশ্লিষ্টতা। যেগুলোর সম্পাদনায় ছিলেন তিনি।