এক মাস আগে সংবাদ সম্মেলন করে টাঙ্গাইল পৌরসভায় শতভাগ টিকা দেয়া হয়েছে দাবি করলেও গণটিকা কার্যক্রমে সহস্রাধিক মানুষের টিকা গ্রহণের চিত্র সামনে আসায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর।
এলাকাবাসীর দাবি, আলোচনায় আসতে করোনার শতভাগ টিকা গ্রহণ নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, পৌর এলাকায় শতভাগ টিকা নিশ্চিত করেছেন। তবে গণ টিকা শুরু হওয়ার পর টাঙ্গাইল পৌর এলাকার ১৮টি ওয়ার্ডের ১০ সহশ্রাধিক সাধারণ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছেন ।
মেয়রের দাবি, পৌরসভাটির ১৮টি ওয়ার্ডে ১ লাখ ২৪ হাজার ১৭০ জন ভোটার রয়েছে। বিপরীতে এখনো পর্যন্ত ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩০০ মানুষকে করোনার টিকা প্রদান হয়েছে। পৌরসভার আওতায় মধ্যে ১৬ হাজার ৫০০ জনকে সিনোফার্মের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ, ২৭ হাজার ৮০০ জনকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালের মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার টিকাদানকারী সুপারভাইজার নাজমুল হাসান তন্ময় জানান, গণটিকার মাধ্যমে পৌর এলাকায় ১০ হাজার ১৭১ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার পৌরসভার ১৮ টি ওয়ার্ডে ৯ হাজার ২৩১ জন, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২৩২ জন, ২৮ ফেব্রুয়ারি ৪৩৫ জন ও ১ মার্চ ২৭৩ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, এখনও অনেকেই টিকার আওতা থেকে বাদ রয়ে গেছেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি গণটিকার কেন্দ্র ঘুরে বেশ কয়েকটি টিকা কেন্দ্রে গ্রহীতাদের উপচেপড়া ভীড় দেখা যায়।
শহরের হাউজিং সেটেমেন্ট কেন্দ্রে পশ্চিম আকুরটাকুর পাড়ার শাহজাহান মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা যাবত লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার পর্যন্ত আসতে আরও এক ঘণ্টা সময় লাগবে। আমি আজ প্রথম ডোজ নিবো। আমার পরিবারের আরও তিন সদস্য টিকা নেওয়ার বাদ রয়েছে।
আদর্শ সরকারি প্রাশমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে রাজিব বসাকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন করে সদর হাসপাতাল থেকে টিকা নিতে হয়। প্রয়োজন মনে না করায় সেই জন্য এতো দিন টিকা নেইনি।
আদি টাঙ্গাইল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আব্দুল বারেকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার মতো আশেপাশের অনেকেই এখনও টিকা নেয়নি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস.এম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী আমাদের জনসংখ্যা ছিলো ১ লাখ ২৪ হাজার। সেখানে এক লাখ ৬৪ হাজার ৭০০ লোককে ভ্যাকসিনের আওতায় এনেছি। এখানে কিন্তু ওভার ফ্লো হয়েছে।
‘’শহরে লোকজন আসে আবার চলে যায়। সর্বশেষ টিকা মনে করে তারা আবার চলে আসে। এখনও টিকা দেওয়া শুরু করলে আরও পাঁচ হাজারের মতো দেওয়া যাবে। লোকজন আসা যাওয়ার কারণে হিসাব মিলানো সম্ভব নয়। আমি সঠিকভাবেই দায়িত্ব পালন করেছি।’’
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, যারা টিকা নেয়নি তারা সকলেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা চাচ্ছি সকলেই টিকা নিয়ে নিরাপদ হোক। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতিত প্রত্যেক দিন টিকা দেয়া হয়।